আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রিজার্ভ সেনাদের মধ্যে অধিকাংশই সেপ্টেম্বর থেকে দায়িত্ব পালন শুরু করবে। তবে মূল অভিযানে সক্রিয় সেনাদেরই বেশি ব্যবহার করা হবে। ইতিমধ্যে জায়তুন ও জাবালিয়া এলাকায় সেনারা অভিযান চালাচ্ছে।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এই পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছেন এবং বিষয়টি নিরাপত্তা ক্যাবিনেটে উপস্থাপন করা হবে। তিনি বলেছেন— অভিযানের পর গাজা আর আগের মতো থাকবে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের দক্ষিণ গাজায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনাও অনুমোদন দিয়েছেন তিনি। সেখানে অস্থায়ী হাসপাতাল স্থাপনের কথাও বলা হয়েছে।
ইসরায়েলের মিত্র অনেক দেশও এই পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সতর্ক করে বলেছেন, এই পদক্ষেপ দুই জাতির জন্যই বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং অঞ্চলটিকে স্থায়ী যুদ্ধে ঠেলে দিতে পারে। আন্তর্জাতিক রেডক্রসও সতর্ক করে বলেছে, নতুন করে বাস্তুচ্যুতি ও সংঘাত বাড়লে গাজার ২১ লাখ মানুষের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে।
এদিকে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির আলোচনা চলছিল। হামাস একটি ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি ও প্রায় অর্ধেক জিম্মি মুক্তির প্রস্তাবে রাজি হলেও ইসরায়েল এখন পূর্ণাঙ্গ চুক্তি ছাড়া রাজি নয় বলে জানিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমানে জিম্মিদের মধ্যে মাত্র ২০ জন জীবিত আছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, অভিযানের পরবর্তী ধাপ হিসেবে ৬০ হাজার নতুন রিজার্ভ সেনাকে ডাকা হয়েছে। এর বাইরে ২০ হাজার সেনার দায়িত্বকালও বাড়ানো হচ্ছে। পাঁচটি ডিভিশন এই অভিযানে অংশ নেবে। গিভাতি ব্রিগেড ইতিমধ্যে জাবালিয়া ও গাজা নগরীর আশপাশে অভিযান শুরু করেছে। সেনাদের দাবি, তারা ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠের হামাস অবকাঠামো ধ্বংস করছে এবং স্থানীয়দের নিরাপত্তার জন্য দক্ষিণে যেতে বলছে।
কিন্তু গাজার পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, জায়তুন ও সাবরা এলাকায় গোলাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বুধবার সেখানে অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একটি পরিবারের তিন শিশু ও তাদের বাবা-মা ছিলেন। খান ইউনিসে ইসরায়েলি অবস্থানে হামলা চালাতে গিয়ে ১০ ফিলিস্তিনি যোদ্ধাও নিহত হয়েছেন এবং একজন ইসরায়েলি সেনা গুরুতর আহত হন।
জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চল অতিরিক্ত ভিড়ে বিপর্যস্ত এবং সেখানে পর্যাপ্ত খাদ্য-ওষুধ নেই। জোর করে এত মানুষের স্থানান্তর আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন বলে তারা সতর্ক করেছে। ইতিমধ্যে অপুষ্টিতে গাজায় আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এর ফলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ২৬৯-এ দাঁড়িয়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় মানবিক সাহায্য এখনো অত্যন্ত সীমিত। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৬২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
Your Comment