আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): ১৯৬৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর অবৈধভাবে অধিগ্রহণ করে রেখেছে ইসরায়েল।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, এই অধিগ্রহণ পুরোপুরি অবৈধ। তা সত্ত্বেও, সেখানে ধারাবাহিকভাবে বসতি স্থাপন ও সম্প্রসারণ করে যাচ্ছে ইসরায়েল। যার ফলে, ক্রমশ কমে আসছে ফিলিস্তিনিদের বসবাসের জায়গা।
তবে ওই তথাকথিত ই১ প্রকল্প অধিগ্রহণকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে—অধিগ্রহণ রূপান্তরিত হবে 'দখল' বা 'অ্যানেক্সেশনে', যেমনটি ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ অধিগ্রহণের পর দখল করেছে রাশিয়া।
২২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে (ইউএনজিএ) ফ্রান্স ও ব্রিটেনের পাশাপাশি আরও কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে।
যুক্তরাজ্য বলেছে, সম্মেলনের আগে গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে সম্মতি দিতে না পারলে যুদ্ধ বন্ধের বিকল্প পন্থা হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে তারা।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে 'কবর' দিতে চায় ইসরায়েল
অপরদিকে, ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থি মন্ত্রী ও নেতারা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কোনো ধরনের রাখঢাক না করেই পশ্চিম তীরের ওই ভূখণ্ড 'দখল' করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
অর্থমন্ত্রী স্মৎরিচ বলেন, 'এই উদ্যোগ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের চিন্তাধারাকে কবর দেবে।'
এরপর গত বুধবার তিনি আরও বলেন, 'আমাদের (ইসরায়েলের) ক্ষুদ্র ভূখণ্ডকে দ্বিভাজিত করে এর ঠিক কেন্দ্রে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র গঠনের চিন্তাকে চিরতরে বানচাল' করার জন্য পশ্চিম তীরের অংশবিশেষ ইসরায়েলি ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।

তার এই ঘোষণায় আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়।
জাতিসংঘ প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, 'এভাবে বসতি স্থাপন করা হলে কার্যত পশ্চিম তীর দুই ভাগে বিভক্ত হবে এবং এটা ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য "অস্তিত্ব সংকট" সৃষ্টি করবে।'
ইসরায়েলি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পিস নাউ পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপন কার্যক্রমের ওপর নজর রাখে। সংস্থাটি জানিয়েছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ই১ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হতে পারে এবং এক বছরের মাথায় সেখানে অবকাঠামো তৈর হয়ে যাওয়ার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, ই১ পরিকল্পনা 'দুই-রাষ্ট্র সমাধানে পৌঁছানোর সম্ভাবনাকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করবে এবং এটি ইসরায়েলের শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের প্রতি হুমকি।'
ইতোমধ্যে পূর্ব জেরুসালেম 'দখল' করে নিজ ভূখণ্ডের অংশ করে নিয়েছে ইসরায়েল।
গাজার বেশিরভাগ অংশ ইসরায়েলের দখলে
২৩ মাস গাজায় নিরবচ্ছিন্নভাবে গণহত্যামূলক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস হামলা চালায়। এতে এক হাজার ২০০ ব্যক্তি নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হন। সেদিনই প্রতিশোধ নিতে আগ্রাসন শুরু করে নেতানিয়াহুর সেনারা।
এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি সেনার হাতে ৬৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার বেশিরভাগ অংশ এখন কার্যত ইসরায়েলের দখলে। গাজা সিটি থেকেও ফিলিস্তিনিদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি সেনা।

গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণ সুদানসহ বিভিন্ন দেশে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা চলছে।
এদিকে পশ্চিম তীরেও ফিলিস্তিনিরা কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন।
সব মিলিয়ে, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন পৃথক রাষ্ট্র গঠন, অর্থাৎ, দুই রাষ্ট্র সমাধানের মাধ্যমে ঐ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা এখন আর নেই বললেই চলছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোনো নাটকীয় পদক্ষেপ না নিলে বা ইসরায়েলি আগ্রাসনে রাশ টেনে ধরতে না পারলে আসলেও হয়তো নেতানিয়াহুর অঙ্গীকার অনুযায়ী ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মুছেই যাবে
Your Comment