১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ২৩:২৯
ব্যাপক চাপে কাতার: ইসরায়েলকে জবাব না দিলে যে পাঁচটি পরিণতি অপেক্ষা করছে

ইসরায়েলের হামলার পর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এখন ব্যাপক চাপের মধ্যে রয়েছে কাতার। বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশটিকে বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতে হবে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): দোহায় সংঘটিত জায়নবাদী শাসনের বেপরোয়া সামরিক হামলার উপযুক্ত জবাব দিয়ে একটি দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করবে হবে। কাতারকে এমন চাপের মুখে রেখেছে আরব বিশ্বের নাগরিকরা।



গত মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) ইসরায়েলি সরকার কাতারের রাজধানী দোহায় হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বকে টার্গেট করে হামলা চালায়, যা ব্যাপক আন্তর্জাতিক নিন্দা কুড়িয়েছে।হামাস নিশ্চিত করেছে, এই হামলায় হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা খলিল আল-হাইয়ার ছেলেসহ পাঁচজন সদস্য শহিদ হয়েছেন। এছাড়াও কাতারের নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্যও নিহত হয়েছেন।

বিশ্লেষকরা এই হামলা সম্পর্কে প্রধান পাঁচটি বিষয় তুলে ধরেছেন:


এক. ইসরায়েলের কাতার আক্রমণের পর সোশ্যাল মিডিয়া এই বার্তায় ভরে গেছে যে, আমেরিকান এবং ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ‘আপস’ কোনো ‘নিরাপদ ঢাল’ প্রদান করে না। বরং, তারা ‘প্রতিরক্ষামূলক ঢাল’ ভেঙে ফেলার মাধ্যমে আরও বেশি অরক্ষিত করে তুলতে পারে।

যেমন, কাতার আমেরিকানদের সাথে প্রায় আপসের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল এবং কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তেমন কোনো বৈরিতা ছিল না। এমনকি, মার্কিনীরা কাতারে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটি (আল-উদাইদ) তৈরি করেছে, যা তারা অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসন চালানোর জন্য ব্যবহার করে থাকে।

তবুও, যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে, তারা দোহায় ইসরায়েলের হামলার বিষয়ে পুরোপুরি অবগত ছিল। অন্য কথায়, ইসরায়েলের অতীতের হামলার মতোই এই আক্রমণটিও কার্যকরভাবে মার্কিনীদের সবুজ সংকেত, পূর্ণ সমর্থন এবং মার্কিন সরঞ্জাম ব্যবহার করেই চালানো হয়েছে।

দুই. সম্প্রতি, ইসরায়েল শুধু কাতারেই নয়, সিরিয়ায় তুরস্কের কয়েকটি স্থান ও স্থাপনাতেও হামলা চালিয়েছে। এর অর্থ হলো- ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে তুরস্ক ও কাতারকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, ইসরায়েলের প্রতি তাদের সব ধরনের নিষ্ক্রিয়তা এবং দেশটির বিরুদ্ধে গুরুতর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতা, তাদেরকে হুমকি ও আক্রমণের শিকার করেছে।


অন্যদিকে, ইসরায়েল নিজেকে একটি ক্ষ্যাপা কুকুর হিসেবে প্রমাণ করেছে, যার জন্য আপস এবং নিষ্ক্রিয়তা দেশটির আগ্রাসন প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়। বরং, আপস এবং নিষ্ক্রিয়তা ইসরায়েলি আগ্রাসনকে আরও উৎসাহিত করে, আরও অবাধ ও মুক্ত করে দেয়।

তিন. ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটের স্পিকার কাতারে হামলার একটি ভিডিও প্রকাশ করে বলেছেন, এটি সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি বার্তা। এটি সম্ভবত জায়নবাদীদের অন্যতম নিখুঁত এবং বিরল সত্যবাদী বিবৃতি।

পশ্চিম এশিয়ার সবারই বোঝা উচিত যে, ইসরায়েল তাদের শত্রু। প্রতিরোধের মাধ্যমে একটি ‘প্রতিরক্ষামূলক ঢাল’  তৈরি করতে এবং পাল্টা জবাব দিতে সক্ষম না হলে, জন্মগত বর্বর প্রকৃতির কারণে দেশটি শেষ পর্যন্ত তাদের প্রত্যেকের পেছনে লাগবে।


যদি পুরো পশ্চিম এশিয়া ইসরায়েলের বিরুদ্ধে না দাঁড়ায়, তবে ইসরায়েল অবশ্যই প্রতিটি নিষ্ক্রিয় সরকারের বিরুদ্ধে একে একে পদক্ষেপ নেবে।


চার. এখন সবাই কাতারের পক্ষ থেকে ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে কী ধরনের পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে। আশা করা হচ্ছে, কাতার বাস্তব পদক্ষেপ নেবে, যদিও এটি খুবই অসম্ভাব্য বলে মনে হয়। সামরিকভাবে, কাতার সম্পূর্ণরূপে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল।

তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মূলত আমেরিকানদের। আর এটি স্পষ্ট যে, আমেরিকান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কাজ করবে না, যার ফলে দোহা একটি অরক্ষিত শহরে পরিণত হবে।

পাচ. যেকোনো কাতারি প্রতিক্রিয়াকে স্বাভাবিকভাবেই আরব বিশ্বে ইরানের দৃঢ় প্রতিক্রিয়ার সাথে তুলনা করা হবে। আবারও, আরব এবং ইসলামিক বিশ্ব ‘প্রতিরোধ’ বনাম ‘আপস’-এর বিশ্বাসযোগ্যতা বিচার করেছে এবং ভবিষ্যতেও তা করতে থাকবে।

ইরান একটি শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে ইসরায়েলকে শাস্তি দিয়েছে, কিন্তু কাতার কি নিন্দা জানানোর বাইরে কিছু করবে? অন্তত এই আশা আছে, কাতার বিশ্বকে আরও বাস্তবসম্মত চোখে দেখতে শুরু করবে।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha