আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): গাজা যুদ্ধ শেষ করার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনাকে সমর্থন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের করা একটি খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।
গতকাল সোমবার গ্রহণ করা এ প্রস্তাবে গাজা উপত্যকার জন্য একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স বা আইএসএফ) গঠনের অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে।
গাজায় একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনকে বৈধতা দেওয়া এবং যেসব দেশ সেখানে সেনা পাঠানোর কথা ভাবছে, তাদের আশ্বস্ত করার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের এ প্রস্তাব গ্রহণকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রস্তাবের ভাষ্য অনুযায়ী, সদস্যদেশগুলো ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন ‘বোর্ড অব পিস’-এ অংশ নিতে পারবে। এটি গাজায় একটি অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করবে। এটির দায়িত্ব হবে উপত্যকাটির পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম তদারক করা।
পাশাপাশি একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী গঠনের বিষয় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যা গাজায় নিরস্ত্রীকরণের প্রক্রিয়া নিশ্চিত করবে। অস্ত্র জমা নেওয়া থেকে শুরু করে সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করা রয়েছে এ প্রক্রিয়ায়।
তবে এক বিবৃতিতে হামাস আবারও বলেছে, তারা অস্ত্র সমর্পণ করবে না। তাদের দাবি, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই একটি বৈধ প্রতিরোধ। ফলে প্রস্তাবের মাধ্যমে অনুমোদিত আন্তর্জাতিক বাহিনীর সঙ্গে হামাসের বিরোধ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে হামাস আরও বলেছে, ‘এ প্রস্তাব গাজা উপত্যকার ওপর আন্তর্জাতিক অভিভাবকত্ব চাপিয়ে দিচ্ছে, যা আমাদের জনগণ ও সব গোষ্ঠী প্রত্যাখ্যান করছে।’
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়ালটজ বলেছেন, ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা যুক্ত করে তৈরি করা এ প্রস্তাব ‘ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের একটি সম্ভাব্য পথ তৈরি করছে…যেখানে রকেটের বদলে জলপাই শাখা (শান্তির প্রতীক হিসেবে) থাকবে এবং রাজনৈতিক সমাধানের এক নতুন দিগন্তে পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি হবে’।
প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হওয়ার আগে নিরাপত্তা পরিষদে ওয়ালটজ বলেন, এটি হামাসের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল করবে এবং গাজাকে সন্ত্রাসের ছায়ামুক্ত, সমৃদ্ধ ও নিরাপদ হওয়ার পথ দেখাবে।
নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন রাশিয়া এর আগে এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করার ইঙ্গিত দিলেও শেষ পর্যন্ত ভোটদানে বিরত থাকে। ফলে প্রস্তাবটি পাস হয়।
রাশিয়ার পাশাপাশি চীনের জাতিসংঘ রাষ্ট্রদূতও ভোটদানে বিরত ছিলেন। দুজনেই অভিযোগ করেন, এ প্রস্তাব গাজার ভবিষ্যৎ ব্যবস্থাপনায় জাতিসংঘকে কোনো পরিষ্কার ভূমিকা দেয়নি।
ভোটের পর রুশ রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া পরিষদকে বলেন, মূলত নিরাপত্তা পরিষদ ওয়াশিংটনের আশ্বাসের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি উদ্যোগকে সমর্থন দিচ্ছে। এতে গাজা উপত্যকার পুরো নিয়ন্ত্রণ ‘বোর্ড অব পিস’ ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে; যার কার্যপ্রণালি সম্পর্কে এখনো কিছুই জানা যায়নি।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে প্রস্তাবটিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং জানিয়েছে, তারা এর বাস্তবায়নে অংশ নিতে প্রস্তুত। কূটনীতিকেরা বলেন, গত সপ্তাহে এ কর্তৃপক্ষের সমর্থনই রাশিয়ার ভেটো ঠেকানোর মূল কারণ।
ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প এ ভোটকে ‘সত্যিকারের ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি লিখেছেন, ‘বোর্ডের (বোর্ড অব পিস) সদস্যদের নামসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আগামী কয়েক সপ্তাহে জানানো হবে।’
ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রগঠনের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ থাকায় এ প্রস্তাব ইসরায়েলের ভেতরে বিতর্ক তৈরি করেছে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সংস্কার কর্মসূচি শেষ করলে এবং গাজা পুনর্গঠনকাজ এগিয়ে গেলে ‘ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্রগঠনে একটি বিশ্বাসযোগ্য পথ তৈরির পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে’।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সহাবস্থানের একটি রাজনৈতিক দিগন্ত নির্ধারণে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ শুরু করবে।
ভোটের আগের দিন রোববার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর সরকারের কট্টর দক্ষিণপন্থী মন্ত্রীদের চাপের মুখে বলেন, ‘ইসরায়েল এখনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিরোধী’। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে গাজাকে ‘সহজ বা কঠিন উপায়ে’—যেভাবেই হোক নিরস্ত্রীকরণ করা হবে।
Your Comment