ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বর্বরতার প্রতিবাদে এখন উত্তাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। দ্রুত বেগে ছড়িয়ে পড়েছে অল আইজ অন রাফা ক্যাম্পেইন। এই স্লোগান লেখা একটি ছবিও এখন ট্রেন্ডিংয়ে। ছবিতে দেখা যায়, অসংখ্য তাঁবু দিয়ে গড়ে তোলা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়শিবিরের দৃশ্য। স্লোগান—‘অল আইস অন রাফা’। অর্থাৎ সবার চোখ রাফার দিকে। ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই-জেনারেটেড) দিয়ে তৈরি। মূলত রাফার শরণার্থীশিবিরে ইসরাইলি হামলায় ৪৫ জন নিরীহ মানুষের মৃত্যুর প্রতিবাদে ছড়িয়ে পড়েছে এ ক্যাম্পেইন।
এই প্রতিবাদী প্রচারে যুক্ত হয়েছেন বহু তারকা মুখও। আছেন বলিউড তারকারাও। আলিয়া ভাট, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, কারিনা কাপুর, সোনম কাপুর এবং বরুণ ধাওয়ানের মতো বেশ কয়েকজন বলিউড তারকা রাফাতে ইহুদিবাদী ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলার কয়েকদিন পর ফিলিস্তিনের প্রতি তাদের সংহতি প্রকাশ করেছেন।
আলিয়া ভাট তার ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে লিখেছেন, সব শিশুই ভালোবাসার যোগ্য। সব শিশু নিরাপত্তা পাওয়ার যোগ্য। সব শিশু শান্তিতে বসবাসের অধিকার রাখেন। সব শিশুর বেঁচে থাকার অধিকার রাখেন এবং সমস্ত মায়েরা তাদের সন্তানদের এসব অধিকার দিতে সক্ষম হওয়ার যোগ্য। তিনি তার মন্তব্যের সঙ্গে হ্যাশট্যাগ —‘অল আইস অন রাফা' জুড়ে দেন।
ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত প্রিয়াঙ্কা চোপড়াও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘অল আইস অন রাফা’ স্লোগান লেখা ছবিটি শেয়ার করে রাফায় হামলার নিন্দা জানিয়েছেন হলিউড-বলিউড এই অভিনেত্রী। অভিনেত্রী রিচা চাড্ডা লিখেছেন, ‘এই অবস্থা দেখে যারা এখনো ইসরাইলকে সমর্থন করছে, তারাও ওই শিশুদের মৃত্যুর জন্য দায়ী’।
পরে মাধুরী দীক্ষিত, তৃপ্তি দিমরি, ফাতিমা সানা শেখ, সামান্থা রুথ প্রভু, দিয়া মির্জা এবং স্বরা ভাস্করের মতো তারকারা এই দলে যোগ দেন।
তবে এটি বেশি সময় নেয়নি আগের ঘটনাগুলির মতো ভারতীয় ট্রলরা ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রচার নীতির সঙ্গে সমন্বয় করে এই বিখ্যাত ব্যক্তিদের পোস্টে সংগঠিতভাবে আক্রমণ শুরু করে। এই ট্রলগুলো স্পষ্টতই হোয়াটঅবাউটিজমের মতো লোকেদের বিরুদ্ধে প্রচারের কৌশল ব্যবহার করে যাতে এসব জনপ্রিয় ব্যক্তিদেরকে নীরবতার মধ্যে রাখা যায় এবং তারা যাতে স্বাধীনভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে সক্ষম না হয়। প্রকৃতপক্ষে এই প্রশিক্ষিত ট্রলগুলো ভারতে ফিলিস্তিনি সমর্থকদের জন্য একটি বাতিল সংস্কৃতি তৈরি করতে চাইছে।
উদাহরণ স্বরূপ এসব ট্রলদের মধ্যে কেউ কেউ একই মন্তব্যে এবং তাদের ট্রলিংয়ের সময় তাদের আপত্তিকর মন্তব্যে হোয়াটঅ্যাবাউটিজম কৌশল ব্যবহার করে লিখেছেন, মানবতার সাথে দাঁড়ানো ঠিক আছে, আপনি হিন্দুদের হত্যার কথা বলেন না কেন? আপনি কেন নিহত ইসরাইলিদের কথা বলতে আসেন না? খ্রিস্টানদের মৃত্যুর কথা বলেন না কেন? বা অন্য ট্রল লিখেছেন: “আপনি কেন বলছেন না এটা হামাস এবং ফিলিস্তিনিদের দোষ আপনি কেন বলেন না যে হামাস যুদ্ধের কারণ?
ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিমূলক এসব পোস্টের নিচে ট্রল করা কয়েকটি অ্যাকাউন্ট লিখেছেন, আসুন, আপনি যদি সত্য বলেন তবে পরিবর্তে হিন্দুদের নিপীড়নের কথা বলুন। ভারতের কথা বলেন না কেন? বিদেশী লোকদের কথা বলছেন কেন?
ইহুদিবাদী ইসরাইলি শাসক গোষ্ঠী ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ শুরু করার পর থেকে সাইবারস্পেসে বা ভার্চুয়াল জগতে একটি অদ্ভুত বৈশ্বিক ঘটনা হচ্ছে এই গণহত্যার সমর্থনে আপাতদৃষ্টিতে ভারতীয় সংগঠিত গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা। বেশ কয়েকটি বিশ্লেষণমূলক ওয়েবসাইটের মতে ইসরাইল এবং নেতানিয়াহু বিগত বছরগুলোতে তাদের বিরোধীদের বিশেষ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ভারতীয় জনশক্তি এবং সাইবারস্পেস ব্যবহার করার জন্য প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করেছে।
ট্রোল: একজন ব্যক্তি যিনি ইচ্ছাকৃতভাবে বিরক্তিকর, অপ্রাসঙ্গিক বা আপত্তিকর মন্তব্য বা অন্যান্য বিঘ্নিত বিষয়বস্তু পোস্ট করে অন্যদের বিরোধিতা করেন।