‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
সোমবার

১২ আগস্ট ২০২৪

২:২১:২৩ PM
1478163

ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে বেছে নেয়ার পেছনে হামাসের ৩ বার্তা

পার্সটুর্ডে: হামাসের রাজনৈতিক কার্যালয়ের নতুন প্রধান হিসেবে ইয়াহিয়া আল-সিনওয়ারকে নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে প্রতিরোধকামী আন্দোলনের কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

পার্সটুডে অনুসারে,গত ৩১ জুলাই তেহরানে হামাসের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যার ফলে গাজা যুদ্ধে এই ঘটনার সম্ভাব্য পরিণতি এর সঙ্গে সম্পর্কিত আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব, এই যুদ্ধ নিয়ে আলোচনার প্রক্রিয়া এবং অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে  হামাস এবং বহির্বিশ্বের মধ্যে নানা প্রশ্ন এবং উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।  

তবে হানিয়াহর উত্তরসূরি হিসেবে গাজায় হামাসের প্রধান হিসেবে ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে বেছে নেয়ার মাধ্যমে চলমান যুদ্ধে এই সংগঠিনটির ভবিষ্যত কৌশলের স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে বেছে নেয়ার বিষয়টি অনেকের কাছে বিস্ময়কর মনে হতে পারে। কারণ স্বাভাবিকভাবেই আন্দোলনের রাজনৈতিক শাখার কেউ এই দায়িত্ব নেবেন বলে আশা করা হয়েছিল। তবে এটা জানা উচিত যে এই পছন্দ হানিয়াহের হত্যাকাণ্ডের ফলাফল এবং সাম্প্রতিক ইসরাইলি উত্তেজনার পরে একটি নতুন দিকনির্দেশনা।

এই পছন্দের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে গত  ৭ অক্টোবরের আল আকসা অভিযানের প্রধান কৌশলী হিসাবে সিনওয়ারকে মনে করা হয় যিনি যুদ্ধের মাঠে প্রতিরোধ বাহিনীকে নেতৃত্বে দেয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে চলেছেন। হামাসের প্রধান হিসেবে সিনওয়ারকে নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে যেসব বার্তা বহন করছে:

১. ইসরাইলের বিরুদ্ধে ঐক্য ও প্রতিরোধের প্রতিক সিনওয়ার

সিনওয়ারকে বেছে নেয়ার বিষয়টি কেবলমাত্র গাজা এবং এর বাইরে প্রতিরোধকামী  বিভিন্ন দলের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কেবল অভ্যন্তরীণ ঐক্যই দেখায় না বরং ইসরাইলি দখলদারদের বিরুদ্ধে আরো শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার একটি স্পষ্ট বার্তাও দিচ্ছে। এই বার্তাটি হল যে হামাস আন্দোলন এখনও শক্তিশালী এবং হানিয়াহকে হত্যার পর যুদ্ধের নতুন পর্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন নেতৃত্ব তৈরি করার ক্ষমতা হামাসের রয়েছে। ইসরাইল যখন গাজায় প্রতিরোধের বুহ্যকে দুর্বল করতে অক্ষম হচ্ছে এবং তার সামরিক ও গোয়েন্দা সক্ষমতা প্রদর্শন করতে ফিলিস্তিনের বাইরে হানিয়াহকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছে এখন তাকে সিনওয়ারের মুখোমুখি হতে হবে যিনি আল-আকসা তুফান অভিযানের প্রধান কারিগর হিসেবেই পরিচিত নন তিনি এখন হামাসের রাজনৈতিক নেতার ভূমিকাও পালন করছেন।

২. সিনওয়ারকে নির্বাচন শত্রুর জন্য অপমান

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হানিয়াহর হত্যাকাণ্ডকে হামাসের রাজনৈতিক শাখার সিনিয়র নেতাদের হত্যা করার ইসরাইলি শাসকদের ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে প্রচার করেছেন। যাইহোক হানিয়াহর উত্তরসূরি হিসাবে সিনওয়ারকে নির্বাচন করার অর্থ হল একভাবে নেতানিয়াহুকে অপমানিত করা এবং তার অভ্যন্তরীণ বিব্রতকর অবস্থা আরো নড়বড়ে করে দেয়া কারণ ইসরাইলি সরকার এখন পর্যন্ত সিনওয়ারকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়েছে যাকে তারা প্রধান অপরাধী বলে মনে করে আসছে।

এইভাবে এই নির্বাচনের পরে নেতানিয়াহু কাসাম ব্রিগেডের কমান্ডার-ইন-চিফ মোহাম্মদ দেইফ এবং তার ডেপুটি মারওয়ান ইসাকে হত্যার প্রচার চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন।

৩. ফিল্ড কমান্ডারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে ইসরাইলকে

হানিয়াহকে হত্যা যাকে হামাসের মূল চালিকা শক্তি হিসাবে দেখা হয়েছিল যুদ্ধ অবসানের জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য এটি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে নেতানিয়াহু চুক্তি থেকে পালাতে এবং যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছিলেন। হানিয়াহর উত্তরসূরি হিসেবে সিনওয়ারকে বেছে নেওয়ার আলোচনার বিষয়ে হামাসের পক্ষ থেকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি রয়েছে।

প্রথমত, যতদিন নেতানিয়াহু তাদের সঙ্গে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ততদিন পর্যন্ত হামাস ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আলোচনা চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক নয়।

দ্বিতীয়ত, আলোচনার শেষ কথাটি মাঠের প্রতিরোধের দ্বারা নির্ধারিত হবে।

তৃতীয়ত, ভবিষ্যতে যে কোনো সম্ভাব্য চুক্তির কাঠামো নির্ধারণ করতে এখন থেকে মধ্যস্থতাকারীদেরকে সিনওয়ারের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

উপসংহার

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর নতুন নেতা হিসেবে ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে নির্বাচন বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সংগঠনটির কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এই নির্বাচন অভ্যন্তরীণ ঐক্য, শত্রুর জন্য অপমান এবং আলোচনায় প্রতিরোধকামী শক্তিগুলোর অবস্থান শক্তিশালী হওয়ার সুস্পষ্ট বার্তা বহন করে। হামাস আন্দোলন গাজায় ইসরাইলি শাসক গোষ্ঠীর হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে এবং ৭ অক্টোবরের পর প্রতিরোধের কৌশলগত অর্জনকে মাথায় রেখে  ইসরাইলের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে কাজ চালিয়ে যাবে।#