‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
বৃহস্পতিবার

১০ অক্টোবর ২০২৪

৭:০৯:৪১ PM
1493495

আল-আকসা অভিযান যেভাবে ইসরাইলি উপনিবেশবাদকে বিপর্যস্ত করেছে

'আল-আকসা তুফান' নামক ফিলিস্তিনি সামরিক অভিযান ইহুদিবাদী ইসরাইলের অপরাজেয় থাকার কল্প-কাহিনী বা রূপকথাকে ধূলিসাৎ করেছে।

ইহুদিবাদী ইসরাইল নামক প্রথাগত উপনিবেশবাদের শেষ দেহের এই ভাবমূর্তির ধূলিসাৎ হওয়া ছিল এই অভিযানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। তাই ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের এই অভিযানটি উপনিবেশবাদ-বিরোধী সংগ্রামের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। উপনিবেশবাদ বিরোধী সংগ্রামী দল হামাসের এই অভিযান কেবল সামরিক অভিযানই ছিল না, একইসঙ্গে তা ছিল একটি চরম জুলুমবাজ ও বর্ণবাদী দখলদার ও স্বৈরতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে একটি জাতির সম্মিলিত প্রতিরোধের নিদর্শন। এই অভিযান ছিল আধিপত্যবাদের কাঠামো ও সরীসৃপ গতিতে চলা উপনিবেশবাদী কাঠামোর ভিত্তি নড়বড়ে করে দেয়ার ঘটনা।

মূল্য দেয়া ছাড়া উপনিবেশবাদের জোয়াল হতে মুক্ত হওয়া যায় না

উপনিবেশবাদ-বিরোধী আন্দোলন কখনও কুসুমাস্তীর্ণ নয়। গত এক বছরে ফিলিস্তিনিদেরকেও ব্যাপক গণহত্যা ও অনাহারের শিকার হতে হয়েছে। শহীদ হয়েছে প্রায় ৪৩ হাজার নিরপরাধ বেসামরিক জনগণ। ৯৬ হাজারেরও বেশি হয়েছে আহত যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এ ছাড়াও রয়েছে দারিদ্র, অনাহার ও অবকাঠামোগুলোর ওপর ধ্বংসযজ্ঞ। কিন্তু উপনিবেশবাদ-বিরোধী সংগ্রামে সব জাতিকেই এ ধরনের উচ্চ মূল্য দিতে হয়েছে। এ যুদ্ধ হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই ও জাতীয় পরিচিতিকে রক্ষার লড়াই যে জাতি ৭৫ বছর ধরে ইউরোপীয় দখলদারদের হাতে অবরুদ্ধ ও নির্যাতনের শিকার।

যে পরাজয়ের ক্ষতি কখনও কাটিয়ে উঠতে পারবে না ইসরাইলি শাসক-শোষক-চক্র

'আল-আকসা তুফান' ইসরাইলের সামরিক ও গোয়েন্দা মহা-বিপর্যয়ের স্বাক্ষর। কথিত ভয়ানক ইসরাইল যে সহজেই ধসে পড়তে পারে এ অভিযান তার প্রমাণ। এই অভিযান ইসরাইলি ক্ষমতা-কাঠামোর গভীরের নানা দুর্বলতা ও খাদগুলো তুলে ধরেছে। ইসরাইলের যুদ্ধ-দানব ও গোয়েন্দা সাজ-সরঞ্জাম মার্কিন সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। অথচ ইসরাইল সব সময়ই গোটা পশ্চিম এশিয়ায় একচেটিয়া আধিপত্যের অধিকারী হিসেবে টিকে থাকতে চেয়েছে। আল-আকসা তুফান ইসরাইলের জন্য বিপর্যয়ের পর বিপর্যয় বয়ে আনছে। আর এইসব আঘাত হানছে ইয়েমেন, লেবানন, ইরাক ও ইরান।

ইসলামী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর ভাষায় ৭ অক্টোবরের পরের ইসরাইল আর কখনও সেই আগের ইসরাইল নয় এবং যেসব আঘাত এটি পেয়েছে তার ক্ষতি কখনও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।

ফিলিস্তিনের পক্ষে বৈশ্বিক জাগরণ

আল-আকসা তুফান শীর্ষক অভিযানের সুবাদে ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ আবারও বিশ্ব-জনমতের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। অথচ কোনো কোনো বিশ্ব-শক্তি ও তাদের আঞ্চলিক তাবেদাররা শিশু-ঘাতক এই সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জাতির অধিকারকে ইতিহাসের বিস্মৃত অধ্যায়ে পরিণত করতে চেয়েছিল। আলআকসা তুফানের সুবাদে আলজেরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মত দেশের সরকারগুলো ইহুদিবাদী ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞের বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তুলে ধরেছে এবং ইউরোপ-আমেরিকার জনমতসহ বিশ্ব-জনমত ফিলিস্তিনিদের উপনিবেশবাদ-বিরোধী সংগ্রামের পক্ষে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

বড় ধরনের ও মৌলিক কিছু সাফল্য

'আল-আকসা তুফান' নামক ফিলিস্তিনি সামরিক অভিযান ইহুদিবাদী ইসরাইলের অপরাজেয় থাকার কল্প-কাহিনী বা রূপকথাকে ধূলিসাৎ করেছে। ইহুদিবাদী ইসরাইল নামক প্রথাগত উপনিবেশবাদের শেষ দেহের এই ভাবমূর্তির ধূলিসাৎ হওয়া ছিল এই অভিযানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। ইসরাইলের ভয়ানক মহাপরাক্রমশালী হওয়ার অহংকার ও দর্পগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়েছে। ৭৫ বছর ধরে ইসরাইল নিজের সামরিক ও গোয়েন্দা কাঠামোর অপরাজেয় হওয়ার যে ভাবমূর্তি প্রচার করে এসেছে তা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রসহ প্রতিরোধকামীদের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর আঘাতে বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে। এই অভিযান আরও প্রমাণ করেছে যে উপনিবেশবাদ-বিরোধী সংগ্রাম সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির ভেতর দিয়েও নিজের জন্য মৌলিক ও গভীর অগ্রগতির নানা জোয়ার সৃষ্টি করতে সক্ষম। #