পার্সটুডের আজকের এই প্রতিবেদনে ইহুদিবাদী ইসরাইলের স্বরূপ, আচরণ ও ইতিহাস সম্পর্কে বিশ্বখ্যাত ৫টি বই নিয়ে আলোচনা করব।
ফিলিস্তিনের ভাগ্যলিপি
এই বইয়ে একথা তুলে ধরা হয়েছে যে, ইউরোপীয় দেশগুলো পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ কুক্ষিগত করার লক্ষ্যে দীর্ঘকাল ধরে চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু নানাভাবে ব্যর্থ হওয়ার পর তারা ফিলিস্তিনের বুকে ইসরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্রকে চাপিয়ে দিয়েছে। বইটিতে দেখানো হয়েছে, জায়নিজম বা ইহুদিবাদ নামক আন্দোলনের অজুহাত তুলে ইহুদিদেরকে কীভাবে ইউরোপ থেকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে স্থানান্তর করে ইসরাইল নামক রাষ্ট্র সৃষ্টি করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনি লেখকদের একটি দল যখন দেখলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোতে বিশেষ করে আমেরিকায় খুব কম মানুষই একথা জানতে পারে যে, ইহুদিবাদীরা ফিলিস্তিনিদের ওপর কী অমানুষিক নির্যাতন চালাচ্ছে, তখন তারা একটি বই লিখে বিষয়টি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে বসবাসরত ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের দলটি ১৮৮১ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত সময়ে ফিলিস্তিনি যা কিছু ঘটেছে তার সারসংক্ষেপ তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। এই দলের সদস্যরা উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পেছনে ইহুদিবাদীদের দাবির অসারতা প্রমাণ করেছেন। কারণ, ইহুদিবাদীরা এমন কিছু কল্পকাহিনী তুলে ধরেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা নিঃসংকোচে ইসরাইলি দমনপীড়নকে সমর্থন করে যাচ্ছে।
তুমি তাড়াতাড়ি হত্যা করো
রুনিন বার্গম্যানের লেখা ‘তুমি তাড়াতাড়ি হত্যা করো’ শীর্ষক বইটিতে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হাতে ৬০ বছরে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডগুলোর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এতে ইসরাইলি নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে, শুধু ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের নয় সেইসঙ্গে লেবাননের হিজবুল্লাহ কমান্ডার ইমাম মুগনিয়া এবং ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু বিশেষজ্ঞদের পর্যন্ত হত্যা করেছে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
ফিলিস্তিনে জাতি নিধন
ইসরাইলি নাগরিকত্বের অধিকারী লেখক ইলান পায়া ‘ফিলিস্তিনে জাতি নিধন’ শিরোনামের বইটি লিখেছেন যা ২০০৬ সালে ওয়ান ওয়ার্ল্ড অক্সেফোর্ড প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনের অন্তত ৪০০ গ্রাম ধ্বংস করে ফেলা হয়। এসব গ্রামের বহু মানুষকে হত্যা করা হয় এবং অবশিষ্ট প্রায় ১০ লাখ মানুষকে তাদের ঘরবাড়ি ও সহায়সম্বল ফেলে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়।
বইটিতে নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরে বলা হয়েছে, ইহুদিবাদী সন্ত্রাসী বাহিনী ‘ইরগুন’ ও ‘হাগানা’ মূলত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে এই গণহত্যা চালিয়ে ইসরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করে। ফিলিস্তিনি জনগণ স্বেচ্ছায় তাদের ঘরবাড়ি ইহুদিবাদীদের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে যে দাবি করা হয়, বইটির লেখক তা কঠোর ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেন।
যেন বিস্মৃত হয়ে না যান: ফিলিস্তিন থেকে বিতাড়িতদের আত্মকাহিনী
কুদস বার্তা সংস্থার দুই সাংবাদিক নাহিদ মানসুর ও রশিদ শাহিনের লেখা বইটিতে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড জবরদখল ও শরণার্থীতে পরিণত হওয়া লাখ লাখ ফিলিস্তিনির জবানবন্দি তুলে ধরা হয়েছে। এই বইয়ে গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর, জর্দান ও সিরিয়ায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সাক্ষাৎকার কথোপকথন আকারে তুলে ধরা হয়েছে।
ইসরাইলি পবিত্র সন্ত্রাসবাদ
‘লিউয়া রুকাখ’ নামক নারী ইহুদি লেখকের লেখা ‘ইসরাইলি পবিত্র সন্ত্রাসবাদ’ নামক বইটি ১৯৮০ সালে প্রকাশিত হয়। বইটির ভূমিকা লিখেছেন ইহুদিবাদবিরোধী মার্কিন ইহুদি চিন্তাবিদ নোয়াম চমস্কি। সাবেক ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী মোশে শারতের শাসনামলে তার মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইল রুকাখের মেয়ে লিউয়া রুকাখ। বইটিতে মোশে শারতের দৈনন্দিন ডায়েরি ইংরেজি ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে। শারতের দিনপঞ্জি প্রাথমিকভাবে হিব্রু ভাষায় লিখিত ছিল এবং তা তেমন কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি। কিন্তু রুকাখ যখন তা ইংরেজি ভাষায় প্রকাশ করেন তখন তা সকলের দৃষ্টিগোচর হয়। রুকাখ ১৯৭০ এর দশকের শুরুতে স্থায়ীভাবে ইতালিতে চলে যান এবং সেখানে নিজের পরিচয় গোপন রেখে একজন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ইতালীয় নাগরিক হিসেবে জীবনের বাকি দিনগুরো কাটিয়ে দেন। ১৯৮৫ সালে রোমের একটি হোটেল থেকে মিসেস রুকাখের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার লেখা বইটি ‘ইসরাইলি সন্ত্রাসবাদের শিকার ফিলিস্তিনি জনগণকে’ উৎসর্গ করা হয়েছে।#