'পুরিম' উদযাপন অতি-গোঁড়া ইহুদিদের পুরনো ঐতিহ্যগুলোর একটি, যা সাম্প্রতিক দশকগুলোতে অধিকৃত অঞ্চলে অবৈধ ইহুদিবাদী ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভিন্ন রঙ এবং রূপ ধারন করেছে।
পুরিম হল একটি অতি-গোঁড়া ইহুদি উৎসব যা হিব্রু মাস আদর (হিজরি ক্যালেন্ডার অনুসারে মার্চ) মাসে পালিত হয়। পুরিম হিব্রু শব্দ 'পুর' থেকে এসেছে যার অর্থ'লট'। এটি অধিকৃত অঞ্চলগুলোর পাশাপাশি আমেরিকা ও ইউরোপের অতি-অর্থোডক্স ইহুদি সম্প্রদায়ের মাঝেও উদযাপিত হয়।
ইতিহাস
পবিত্র বাইবেল অনুসারে, ইরানে জারেক্সেসের রাজত্বকালে (অক্টোবর ৪৮৬ - আগস্ট ৪৬৫ খ্রিস্টাব্দ), ইহুদিরা দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং তারা ক্রমাগত ইরানি রাজার দরবারকে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছিল।
তৎকালীন ইরানের ইহুদি নেতা মোর্দেখাই অবশেষে ষড়যন্ত্রের পর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এক ইহুদি মেয়েকে রাজদরবারে পাঠিয়ে ইরানের রানির উত্তরসূরী বানায়।
রাজদরবারে ওই সুন্দরী ইহুদি তরুণী ইস্টারের আগমনের সাথে সাথে মোর্দেখাই সহজেই পারস্যের রাজাকে প্রলুব্ধ করার জন্য ইস্টারকে ব্যবহার করে তার অশুভ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।
মন্ত্রী হামান রাজাকে মোর্দেখাইয়ের ষড়যন্ত্রের কথা জানান এবং রাজা মোর্দেখাইকে ফাঁসি দেওয়ার নির্দেশ জারি করেন। কিন্তু রাজার ওপর দৃঢ় প্রভাব বিস্তারকারী ইস্টার হামানকে বিশ্বাসঘাতক বলে সাব্যস্ত করেন এবং রাজাকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। অবশেষে হামানকে ফাঁসি দেওয়া হয় এবং তার ১০ পুত্রকেও হত্যা করা হয়।
হামান এবং তার পুত্রদের হত্যা করার পর ইরানে বসবাসকারী ইহুদি অভিবাসীরা, ইরানের কিছু অংশের ওপর আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে, ইরানের ১২৭টি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ইরানিদের ওপর ব্যাপক গণহত্যা চালায়। ইস্টারের বইসহ ইহুদি বইগুলোতে বলা হয়েছে ইহুদিরা ৮০ হাজার ইরানিকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছে। যদিও স্বাধীন গবেষকরা এই সংখ্যাটি অন্তত ৫ লাখ বলে মনে করেন।
ইরানিদের ওপর গণহত্যা উৎসবের আচার-অনুষ্ঠান
যদিও গণহত্যার পর ১৫ শতাব্দীরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে, ইহুদিরা সেই ইতিহাসের চরিত্রের পোশাক পরে এবং গণহত্যার অপরাধীদের ভূমিকায় অভিনয় করে ইরানি গণহত্যা উৎসব উদযাপন করে যাচ্ছে।
পুরিম ঈদের ছুটির সময় যেসব অনুষ্ঠান করা হয় তার মধ্যে একটি হল দখলকৃত অঞ্চলে ইহুদিবাদীদের 'নরখাদকদের কুচকাওয়াজ'। এই কুচকাওয়াজে, তারা নরখাদকের মুখোশ পরে এবং মুখে কৃত্রিম মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ ধারণ করে, ইরানিদের হত্যার প্রতীক হিসেবে এমন রূপ ধারন করে যা দেখলে মনে হবে ইরানিদের রক্তের পিপাসায় তারা তৃষ্ণার্ত।
ইরানিদের প্রতি ইহুদিদের রক্তপিপাসার প্রতীক হিসেবে রক্ত বা রক্ত রঙের পানীয় পান করা এই উৎসবে ইহুদিদের একটি রীতি। এই দিনে পাগলামি এবং মাতলামি পর্যায়ের মদ পান করা তাদের একটি সাধারণ ঐতিহ্য।
এই দিনে ইহুদিদের পালনীয় আরেকটি অনুষ্ঠান হল 'হামানের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো'। তারা জারেক্সেসের প্রধানমন্ত্রী হামানের একটি প্রতীকি মূর্তিতে অগ্নিসংযোগ করে।
ইহুদিরা 'হামানের কান' নামে একটি মিষ্টি তৈরি করে ইরানি মন্ত্রীর ফাঁসি উদযাপন করে।
ইহুদিরা অবশ্য তাদের বিশ্ব প্রচার মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে পশ্চিমা দেশগুলোতে এই পাশবিক এবং ঘৃণ্য অনুষ্ঠানকে স্বাভাবিক করে তুলতে সক্ষম হয়েছে, বিশেষ করে এটিকে হ্যালোইনের মতো স্বাভাবিক করে তুলে ধরে তারা।
কোনো কোনো সমালোচক পুরিমের আধুনিক রূপটিকে ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো গণহত্যা বলেও মনে করেন-যারা তাদের শহর, বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত হয়েছে এবং ইহুদিবাদী সেনাদের হামলার শিকারে পরিণত হয় কিংবা যারা অবরোধের মধ্যে ভীষণ কষ্টে বসবাস করে।#
342/
Your Comment