আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): গত ১৩ জুন ইরানে হামলা শুরু করেছিল ইহুদিবাদী ইসরায়েল। ইরানের কয়েকটি পরমাণু স্থাপনা ও সামরিক কেন্দ্র ছাড়াও বেশ কিছু বেসামরিক স্থাপনা ও ঘরবাড়ি ইসরাইলি হামলার শিকার হয়েছিল। তেহরানের এভিন কারাগার ও সারাদেশে বেশ কয়েকটি চিকিৎসা কেন্দ্রও ইসরায়েলের নির্বিচার আগ্রাসনের শিকার হয়েছিল। ইসলামী ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় সেনা কামান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানী, ও বেসামরিক জনগণ শাহাদাত বরণ করেছিলেন এইসব হামলায়। এসব হামলার পর ইসলামী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এক বাণীতে বলেছিলেন, 'ইরানের জাতীয় নিরাপত্তার ওপর যে কোন হামলার কঠোর ও অনুশোচনা-জাগানো জবাব দেয়া হবে'! এ প্রবন্ধে আমরা যুদ্ধ চলাকালীন মহসংকট মোকাবেলায় ও দেশ পরিচালনায় ইমাম খামেনেয়ির প্রধান ভূমিকা এবং বিশ্ববাসীর ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করব।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খুব দ্রুত নতুন সেনা কমান্ডারদের নাম ঘোষণা করেন এবং তাদের কি করতে হবে তা জানিয়ে দেন। ফলে খুব শীঘ্রই ইরানের সশস্ত্র বাহিনী নিজেকে গুছিয়ে নেয় ও সরবরাহ লাইনগুলো কার্যকর করে তোলে। কয়েক ঘণ্টারও কম সময়ে ইরানের ভয়াবহ পাল্টা হামলাগুলো শুরু হয়। প্রথম কয়েক দফার ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জোয়ার ইসরাইলের তেল আবিবের অস্ত্র গুদামগুলোসহ প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে নানা সামরিক কেন্দ্র ও বিমান বিধ্বংসী স্থাপনা গুলোর উপর আঘাত হানে। এমনটি সম্ভব হয়েছে সম্ভবত দুটি প্রধান কারণে: মিশ্র পদ্ধতির অতীতের নানা সামরিক মহড়ায় বিকল্প কমান্ড সেন্টার গড়ে তোলার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল ইরানের সশস্ত্র বাহিনী। দ্বিতীয়তঃ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে নিজেই কমান্ড দেয়ার কাজ শুরু করেন যাতে সময় নষ্ট না হয়। আধুনিক যুগের দ্রুতগতির যুদ্ধক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়ার বেলায় কেন্দ্রীয়করণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা নেতৃত্বে সাম্প্রতিক যুদ্ধে এমন সফল ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল।
♦তিনি প্রথমবার ঠিক এমন সময় বক্তব্য রাখছিলেন যখন ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তেল আবিবে আঘাত হানছিল। এই যে একই সময়ে দুটি ঘটনা - এ বিষয়টি বৈধ প্রতিরক্ষার যুক্তি ও বর্ণনার সম্পৃক্ততাকে জনগণ ও বিদেশী পর্যবেক্ষক মহলসহ সবার কাছে স্পষ্ট করেছিল। অর্থাৎ একই সময়ে অভিযান চালানো ও অভিযানের বিষয়ে তথ্য সম্প্রচার অবিচ্ছিন্ন বিষয় নয়।
♦দ্বিতীয় বার্তাটি তিনি দিয়েছিলেন যুদ্ধের ষষ্ঠ দিনে। এটা ছিল এমন একটা সময় যখন ইসরাইল ইরানের প্রথম দফার পাল্টা হামলার মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন হামলা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছিল। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা শান্ত অথচ কড়া ভাষায় প্রতিরোধ, প্রশান্তি ও পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছেন ওই ভাষণে। আর এভাবে তিনি উৎকণ্ঠিত প্রতিক্রিয়ার পর্যায় থেকে সমাজকে সক্রিয় বা কার্যকর নিয়ন্ত্রণের আদর্শ পর্যায়ে উপনীত হওয়া দেখাতে সক্ষম হন।
♦আর তৃতীয় ভাষণে তিনি আত্মসমর্পণের আবদারের প্রতি কড়া ভাষায় না উচ্চারণ করেছেন। এটা ছিল সেই সব বিদেশি মহলের প্রতি স্পষ্ট বার্তা যারা যুদ্ধ থামানোর বিষয়টিকে ইরানের পরাজয় বলে দেখাতে চেয়েছিল। সংকটকালীন যোগাযোগ বা জনসংযোগের দৃষ্টিকোণ থেকে এই তিনটি বার্তা ছিল জাতীয় বিবৃতি বা বর্ণনার তিন মহাসড়ক বা মহাসংযোগ সেতু। এভাবে তিনি সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হতে দেননি এবং শত্রুদের বক্তব্যকে জোরালো হতে দেননি।
Your Comment