আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত বুধবার বিকেলে তাঁর দেশের দ্রুজ সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে এক ভিডিও বার্তা দেন। সেখানে অনুরোধ করেন, তাঁরা যেন সুয়েইদায় স্থানীয় বেদুইন ও সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে দ্রুজ মিলিশিয়াদের লড়াইয়ে অংশ নিতে সিরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ না করেন।
কিন্তু নেতানিয়াহু যখন এ বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন তাঁর নিজের বাহিনী সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে বোমাবর্ষণ করছিল, হামলা চালাচ্ছিল দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে। আর এ হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন।
কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এবং দ্রুজ স্টাডিজ জার্নালের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক রামি জিদান বলেন, ইসরায়েলি দ্রুজরা নিজেদের একই সঙ্গে দ্রুজ, ইসরায়েলি ও আরব বলে মনে করেন। তাঁরা মনে করেন, ইহুদি ও দ্রুজ—উভয়ই সংখ্যালঘু হিসেবে নিপীড়নের শিকার। এ ঐতিহাসিক উপলব্ধি তাঁদের ইসরায়েলের প্রতি আনুগত্যের ভিত্তি তৈরি করেছে।
রামি জিদানের মতে, এখন এ সম্পর্কের ভিত্তিতেই ইসরায়েলি দ্রুজরা চাইছেন, ইসরায়েল যেন সিরিয়ায় তাঁদের সম্প্রদায়ের লোকজনকে রক্ষা করে। যদিও সিরীয় দ্রুজরা ঐতিহ্যগতভাবে ইসরায়েলবিরোধী। কিন্তু তাঁদের কিছু নেতা সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলেছেন।
বাস্তবতা হলো, সুয়েইদায় দ্রুজদের কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সহিংসতা শুরুর বহু আগে থেকেই ইসরায়েল সিরিয়ায় হামলা করে আসছে।
১৪ বছরের গৃহযুদ্ধ শেষে স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকে ইসরায়েল সিরিয়ায় শত শত বার হামলা চালিয়েছে ও প্রায় ৪০০ বর্গকিলোমিটার (১৫৫ বর্গমাইল) এলাকা দখলে নিয়েছে। এ ছাড়া ১৯৬৭ সাল থেকে সিরিয়ার পশ্চিম গোলান মালভূমি নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের শীর্ষ বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক এ হামলাগুলো সম্ভবত পুরোপুরি দ্রুজদের রক্ষার উদ্দেশ্যে নয়; বরং এর পেছনে ইসরায়েলি সরকার ও সংকটে থাকা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই বেশি রয়েছে।
নিউইয়র্কে ইসরায়েলের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কনসাল জেনারেল আলোন পিনকাস আল–জাজিরাকে বলেন, ‘এটি পুরোপুরি সুযোগসন্ধানী বিষয়।’ আরেকটি আঞ্চলিক জাতিগোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসরায়েল কখনো কুর্দদের সাহায্য করেনি। তাই দ্রুজদের ক্ষেত্রে সহানুভূতির ভাব দেখানোটা মূলত ছলচাতুরী।
পিনকাস সিরিয়ায় ইসরায়েলি সাম্প্রতিক হামলার পেছনে কয়েকটি উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন, যেমন নেতানিয়াহু যুদ্ধকালীন নেতা হিসেবে নতুন করে নিজের ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে চাচ্ছেন। এর মাধ্যমে নিজের দুর্নীতির মামলার বিচার বিলম্বিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি গত ২১ মাসে শুধু সামরিক শক্তির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যকে পুনর্গঠনের ‘ভ্রান্ত ধারণাকে’ জোরদার করার চেষ্টা করছেন।
পিনকাস আরও বলেন, ‘নেতানিয়াহু চান না, সিরিয়ায় একটা শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার গড়ে উঠুক; বরং তিনি চান, একটি দুর্বল রাষ্ট্র; যার এক অংশ কুর্দদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, অন্য অংশ দ্রুজ ও বেদুইনদের দখলে থাকবে। ফলে ইসরায়েল দক্ষিণ সিরিয়ায় নিজের ইচ্ছামতো কাজ করতে পারবে।’
Your Comment