আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): সাপ্তাহিক ভাষণে আল হুথি বলেন, “এই মুহূর্তে ফিলিস্তিনিরা, বিশেষত নারী ও শিশুরা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে। মার্কিন সমর্থন এবং আরব-মুসলিম দেশগুলোর নীরবতার সুযোগে ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। এই সপ্তাহটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ—তারা ইচ্ছাকৃতভাবে গর্ভবতী নারীদের লক্ষ্যবস্তু করছে যাতে এক গুলিতে দুটি প্রাণ হারায়।”
তিনি বলেন, “গাজাবাসীদের অনাহারে রাখার মতো বর্বরতা শুধু মানবতাবিরোধী অপরাধ নয়, বরং এটি পুরো মুসলিম ও আরব জাতির জন্য চিরস্থায়ী কলঙ্ক। গাজার শিশুরা এখন অপুষ্টি ও অনাহারে ধুঁকছে, যা গোটা মানবজাতির জন্যই অপমানজনক। ইসরায়েলি বাহিনী শিশুদের দুধ পর্যন্ত আটকে রেখেছে। এমনকি তারা গর্ব করে শিশু হত্যার ভিডিও প্রকাশ করছে যেন সেটা কোনো খেলা! তবে কোথায় সেই মানবাধিকার, কোথায় শিশু অধিকারের তথাকথিত সংগঠনগুলো?”
আল হুথি বলেন, “গত ৫ দিনে বহু মানুষ কিছু খেতে পারেনি। অপুষ্টিতে আক্রান্ত প্রায় ৭১ হাজার শিশু এখন মৃত্যুঝুঁকিতে এবং ৯ লাখ শিশু অনাহারে ভুগছে। তাদের মধ্যে ৭০ হাজার প্রবেশ করেছে মারাত্মক অপুষ্টির স্তরে।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “শান্তি ও স্বাভাবিকীকরণের যে প্রচার চালানো হচ্ছে, তা ফিলিস্তিনিদের মনোবল ভাঙার এক গভীর চক্রান্ত। এই প্রোপাগান্ডা আরব মিডিয়া ও শিক্ষাব্যবস্থায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
আল হুথি স্পষ্ট করে বলেন, “ইসরায়েল কখনোই প্রকৃত শান্তি চায় না। তারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি তো দূরে থাক, এমনকি সীমিত পরিসরের কোনো স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রও মানতে রাজি নয়। তারা কেবল একটি পরাধীন ব্যবস্থার কথা বলে, যার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে তাদের হাতে।”
তিনি বলেন, “যারা ভাবেন ইসরায়েল কিছু ন্যায্যতা মানবে, তারা ভুল করছেন। কুরআনের ভাষায়—ওরা কাউকেই কিছু দেয় না।”
আল হুথি বলেন, “গাজার মানুষ আজ মনে করে তারা মুসলিম ও আরব সরকারের বিশ্বাসঘাতকতার শিকার। কারণ এত ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও কেউ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি।”
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “বিভিন্ন আরব সরকার এখন ইসরায়েলি ও মার্কিন প্রোপাগান্ডা আরবিতে অনুবাদ করে নিজ জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে।”
আনসারুল্লাহ নেতা বলেন, “যদি এখনই ইসরায়েলের আগ্রাসন থামানো না হয়, তবে তা গোটা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে। তখন কেউ নিরাপদ থাকবে না।”
তিনি জানান, “আমেরিকা ও ইসরায়েল মুসলিম বিশ্বকে নিরস্ত্র করতে চায় যাতে তাদের দমন করা সহজ হয়। কিন্তু ইয়েমেন সেই ফাঁদে পড়বে না। প্রতিরোধ সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত।”
আল হুথি বলেন, “ইসরায়েলের এইলাত বন্দর ও বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের ওপর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে। সেই অবরোধ আরও কার্যকর করার জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
তিনি বলেন, “গাজার প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বীরত্বের কারণে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কৌশলগত সংকটে পড়েছে। অন্যদিকে, বিশ্বজনমত এখন ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ও মুসলিম জাতির প্রতি সহানুভূতির দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
Your Comment