৭ আগস্ট ২০২৫ - ১০:৫৯
ইসরায়েলের প্রতি মার্কিনীদের সমর্থনে নজিরবিহীন হ্রাস; কারণ ও সম্ভাব্য পরিণতি

রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক এবং কৌশলগত কারণে কয়েক দশক ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির একটি প্রধান স্তম্ভ হয়ে আছে প্রধানতম মিত্র হিসেবে ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ।

আহলে বাইত (আ.) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা (আবনা): রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক এবং কৌশলগত কারণে কয়েক দশক ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির একটি প্রধান স্তম্ভ হয়ে আছে প্রধানতম মিত্র হিসেবে ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ।



তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, আমেরিকান জনমতের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এই পরিবর্তনটি বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ও কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে স্পষ্ট, এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও পরিবর্তিত সামাজিক মূল্যবোধের কারণে এই পরিবর্তন হয়েছে।

সাম্প্রতিক গ্যালাপের একটি জরিপ (৭ থেকে ২১ জুলাই, ২০২৫ সালের মধ্যে পরিচালিত) দেখায় যে গাজায় ইসরায়েলের পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। মাত্র ৩২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলকে সমর্থন করেছেন। এছাড়াও মাত্র ৩৮ শতাংশ ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সামরিক পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন। অথচ অতীতে কয়েক দশকে ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থন ছিল ৬০ শতাংশেরও বেশি। 

বয়সের দিক থেকে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন অত্যন্ত কম। মাত্র ৯% গাজায় গণহত্যার প্রতি সমর্থন করছে। এমনকি ৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যেও, সমর্থন ৫০% এর নিচে নেমে এসেছে যা নজিরবিহীন হ্রাস।

২০২৫ সালে পিউ-এর আরেকটি জরিপে দেখা গেছে যে ৫৫ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েল সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে যা ২০২০ সালে ছিল ৪১ শতাংশ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন হ্রাসের কারণগুলো নিম্নরূপ: 

মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এক্ষেত্রে একটি প্রধান বিষয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য প্রচার বৃদ্ধির সাথে সাথে গাজা ও পশ্চিম তীরে বেসামরিক হতাহতের ছবি এবং প্রতিবেদন, বিশেষ করে শিশু ও নারীদের ছবি, ভিডিও ও প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ায় আমেরিকানদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাবকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। 

অবৈধ বসতি স্থাপন এবং আবাসিক এলাকায় বোমা হামলা সহ ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো প্রকাশের ফলে জনমতের দৃষ্টিতে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডের বৈধতা হ্রাস পেয়েছে।

অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জনসংখ্যাগত এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলো অনেক আমেরিকানকে ইসরায়েলের প্রতি বৈরি করেছে। তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে জেনারেশন জেড এবং মিলেনিয়ালরা, পূর্ববর্তী প্রজন্মের তুলনায় ভিন্ন মূল্যবোধের অধিকারী হওয়ায় তারা সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের প্রতি বেশি উদ্বিগ্ন।

ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের নীতির সমালোচনা ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে, বিশেষ করে প্রগতিশীল অংশের মধ্যে বেড়েছে। এই গোষ্ঠীগুলি বিশ্বাস করে যে ইসরায়েলের প্রতি আমেরিকার নিঃশর্ত সমর্থন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।


এছাড়াও, আঞ্চলিক ঘটনাবলী এবং ইরানের উপর ইসরায়েলি আক্রমণ বহু আমেরিকানের মনোভাব পরিবর্তনে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। ২০২৫ সালের জুনে ইরানের উপর ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য ও প্রত্যক্ষ মদদে ইরানের আবাসিক এলাকা, পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলা এই দেশে অনেক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনেক আমেরিকান, বিশেষ করে ইরানে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা প্রকাশের পর, ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনকে অপ্রয়োজনীয় এবং বিপজ্জনক বলে মনে করেছেন। এ ছাড়াও  নির্বাচনী প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ চাপ এবং মিশিগানের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলিতে আরব ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রভাব ইসরায়েলের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থনকে একটি সংবেদনশীল বিষয় করে তুলেছে।

এই পরিস্থিতির কিছু সুফল আসতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, জনসমর্থন হ্রাস পেলে আমেরিকান রাজনীতিবিদদের উপর ইসরায়েলকে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দেয়া পুনর্বিবেচনা করার চাপ বাড়তে পারে। এর ফলে ইসরায়েলকে বার্ষিক ৩.৮ বিলিয়ন ডলারের সাহায্য হ্রাস পেতে পারে অথবা এই সাহায্যের উপর আরও কঠোর শর্ত আরোপ করা হতে পারে।



আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নতা ইসরায়েলের প্রতি আমেরিকান জনসমর্থন হ্রাসের আরেকটি প্রভাবক। মার্কিন সরকারি সমর্থন কমে গেলে ইসরাইল আরও এক ঘরে হবে বিশ্ব অঙ্গনে। ইউরোপেও ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন কমে গেছে। 

এছাড়াও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন হ্রাস পেলে বিডিএস (ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বয়কট, বিচ্ছিন্নতা এবং নিষেধাজ্ঞা) এর মতো আন্দোলন শক্তিশালী হতে পারে এবং ইসরায়েলের উপর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ বৃদ্ধি পেতে পারে। 

তবে, এটা ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলপন্থী লবি এবং দেশটির কিছু সর্বোচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ফিলিস্তিনি অঞ্চল ও পশ্চিম এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে ইসরায়েলের অপরাধকে উৎসাহিত এবং সমর্থন করে চলেছেন। তাই  তারা অদূর ভবিষ্যতেও ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হতে দেবেন না।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha