আহলে বাইত (আ.) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা (আবনা): বৈরুত, দক্ষিণ লেবানন এবং পূর্ব বেকা অঞ্চলে হিজবুল্লাহ ও আমাল মুভমেন্টের সমর্থকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। তারা সরকারের ওই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান। তাদের মতে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেবে।
বিক্ষোভকারীরা সতর্ক করে বলেন, হিজবুল্লাহ নিরস্ত্র হলে দক্ষিণ লেবানন ইসরায়েলের লাগাতার হামলার বিরুদ্ধে পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়বে।
যদিও এখনো হিজবুল্লাহ আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি, তবে পূর্বে দেওয়া এক বিবৃতিতে তারা এই সিদ্ধান্তকে একটি ‘মারাত্মক ভুল’ হিসেবে অভিহিত করেছে। হিজবুল্লাহর মতে, প্রতিরোধ আন্দোলনকে নিরস্ত্র করা মানে লেবাননকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধহীন করে তোলা।
সরকার এই পরিকল্পনা নিয়ে আবারও বৈঠকে বসেছে, যদিও হিজবুল্লাহ পূর্বেই এর বিরোধিতা করে এসেছে। এই পরিকল্পনার পেছনে মূলত মার্কিন চাপ কাজ করছে।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভা যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রস্তাবের “লক্ষ্যসমূহ” অনুমোদন করেছে, যার অধীনে কেবল রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কাছেই অস্ত্র থাকবে।
এই আলোচনার সময় হিজবুল্লাহর রাজনৈতিক পরিষদের উপপ্রধান মাহমুদ কোমাতি সরকারের সিদ্ধান্তকে ‘ইসরায়েলি ও মার্কিন স্বার্থের কাছে আত্মসমর্পণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, “একটি রাষ্ট্র তার নিজস্ব ভূখণ্ডে প্রতিরোধের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে না, যখন সে নিজেই দখলদারিত্বের শিকার।”
সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে একটি ধাপে ধাপে নিরস্ত্রীকরণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায়, যার ফলে শুধু ছয়টি সরকার অনুমোদিত বাহিনীই অস্ত্র রাখতে পারবে।
হিজবুল্লাহ'র নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সংগঠনের মহাসচিব শেখ নাঈম কাসেম মঙ্গলবার বলেন, লেবাননের প্রতিরোধশক্তি নিরস্ত্র হবে না। তিনি সরকারকে দীর্ঘদিনের ইসরাইলি আগ্রাসন মোকাবেলাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান, যা লেবাননের সমস্যার মূল কারণ।
তিনি বলেন, “প্রতিরোধ হলো ১৯৮৯ সালের তাইফ চুক্তির ভিত্তি, যা লেবাননের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছিল।”
শেখ কাসেম সরকারের প্রতি আহ্বান জানান যেন তারা যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু আরব দেশের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে বরং ইসরায়েলি আগ্রাসনের মূল সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দেয়।
১৯৮২ সালে হিজবুল্লাহ গঠিত হয় লেবাননকে ইসরায়েলের দখল ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রক্ষা করার জন্য। ইসরায়েল এখনো লেবাননের শেবা কৃষিখামার অঞ্চল দখল করে রেখেছে, যা সিরিয়া সীমান্তের কাছে অবস্থিত। এর পাশাপাশি ইসরায়েলি সম্প্রসারণবাদও দিনদিন বেড়েছে।
২০১৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল হিজবুল্লাহর ওপর চাপ বাড়িয়ে এসেছে। ২০২৩ সালে গাজা উপত্যকার প্রতি সংহতি জানিয়ে হিজবুল্লাহর সামরিক কার্যক্রম শুরু হলে সেই চাপ আরও বেড়ে যায়। এটি পরিণত হয় ওয়াশিংটনের সমর্থনে পরিচালিত ইসরায়েলের ব্যাপক সামরিক আগ্রাসনে, যার ফলে ৪,০০০-এর বেশি লেবাননি নিহত হন।
তবু হিজবুল্লাহ প্রতিজ্ঞা করেছে যে, তারা জাতির প্রতিরক্ষা চালিয়ে যাবে—যেভাবে তারা ২০০০-এর দশকে দুইটি পূর্ণাঙ্গ ইসরায়েলি যুদ্ধ প্রতিহত করেছিল। সংগঠনটি লেবাননের জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, তারা যেন এমন চাপের কাছে মাথা নত না করে, যা ইসরায়েলি সম্প্রসারণবাদকে আরও উৎসাহিত করতে চায়।
Your Comment