আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব স্থগিত রাখার পরিকল্পনার খবরের মধ্যে ব্রাসেলসে ইইউ নেতাদের বৈঠকের সময় এ চিঠি প্রকাশ করা হলো। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে চিঠির বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে।
এক খোলা চিঠিতে সাবেক ইসরায়েলি কর্মকর্তা, অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক, লেখক ও বুদ্ধিজীবীসহ ৪৬০ বিশিষ্টজন এতে সই করেছেন। চিঠিতে তারা গাজা, অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলের আচরণের জন্য জবাবদিহির দাবি জানিয়েছেন
গাজায় গণহত্যার প্রসঙ্গ তুলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আমরা ভুলে যাই না– সব মানবজীবন রক্ষা ও সুরক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত অনেক আইন, সনদ ও কনভেনশন হলোকস্টের প্রতিক্রিয়ায় তৈরি করা হয়েছিল। এসব সুরক্ষা ব্যবস্থা ইসরায়েল নিরলসভাবে লঙ্ঘন করেছে।’
চিঠিতে সইকারীদের মধ্যে আছেন– ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটের সাবেক স্পিকার আব্রাহাম বার্গ, সাবেক ইসরায়েলি শান্তি আলোচক ড্যানিয়েল লেভি, ব্রিটিশ লেখক মাইকেল রোজেন, কানাডিয়ান লেখক নাওমি ক্লেইন, অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা জোনাথন গ্লেজার, মার্কিন অভিনেতা ওয়ালেস শন, এমি বিজয়ী ইলানা গ্লেজার, হান্না আইনবাইন্ডার ও পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী বেনিয়ামিন মোজার।
সইকারীরা বিশ্বনেতাদের আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) এবং আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের রায় বজায় রাখার আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে তারা ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা ও সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ঠেকাতে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
তারা গাজায় পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা এবং শান্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে কথা বলা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ইহুদি বিদ্বেষের মিথ্যা দাবি প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানান। চিঠিতে তারা বলেন, ‘আমরা অপরিমেয় দুঃখে মাথা নত করছি। কারণ, প্রমাণ জমা হচ্ছে যে, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড গণহত্যার আইনি সংজ্ঞা পূরণ করেছে।’
চিঠিতে সইকারীদের মধ্যে আরও আছেন– ইসরায়েলের কন্ডাক্টর ইলান ভলকভ, নাট্যকার ভি (ইভ এনসলার নামে পরিচিত), আমেরিকান কৌতুকাভিনেতা এরিক আন্দ্রে, দক্ষিণ আফ্রিকার ঔপন্যাসিক ড্যামন গালগুট, অস্কার বিজয়ী সাংবাদিক এবং তথ্যচিত্রকার ইউভাল আব্রাহাম, টনি পুরস্কার বিজয়ী টবি মার্লো ও ইসরায়েলি দার্শনিক ওমরি বোহম।
তারা বলছেন, ‘ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আমাদের সংহতি ইহুদি ধর্মের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা নয়, বরং এর পরিপূর্ণতা। আমাদের ঋষিরা শিখিয়েছেন, একটি জীবন ধ্বংস করা পুরো বিশ্বকে ধ্বংস করা। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হয়নি। এ যুদ্ধবিরতি দখলদারিত্ব ও বর্ণবাদের অবসান না হওয়া পর্যন্ত আমরা বিশ্রাম নেব না।’
গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত ও এক লাখ ৬৭ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। জাতিসংঘ বলছে, উপত্যকার মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত। দুই মার্কিন ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন ও জেফ মার্কলে গত সেপ্টেম্বরে এ অঞ্চলে এক তথ্য অনুসন্ধান মিশনের পর সিদ্ধান্ত জানান, ইসরায়েল ‘গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস ও জাতিগতভাবে নির্মূল করতে পদ্ধতিগত পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন করছে; এতে যুক্তরাষ্ট্রও জড়িত।
Your Comment