মন্ত্রী অখিল গিরির বিরুদ্ধে অভিযোগ- গত (শুক্রবার) নন্দীগ্রামে এক সভায় বক্তব্য রাখার সময়ে তিনি দেশের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। ওই সভায় অখিল গিরিকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা রূপের বিচার করি না। তোমার রাষ্ট্রপতির চেয়ারকে আমরা সম্মান করি। তোমার রাষ্ট্রপতিকে কেমন দেখতে বাবা?’ এরপরেই রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ওই ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপির পক্ষ থেকে বিক্ষোভ প্রদর্শন, কুশপুত্তলিকা পোড়ানো, থানায় এফআইআর ইত্যাদি করা হচ্ছে।
আজও (রবিবার) ওই ইস্যুতে পরিবেশ উত্তপ্ত রয়েছে। অখিল গিরির মন্তব্যের প্রতিবাদে আজ খাতড়া-বাঁকুড়া রাজ্য সড়কে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন আদিবাসীরা। এ সময়ে বাঁকুড়ায় যাচ্ছিলেন রাজ্যের খাদ্য প্রতিমন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি। তখনই তার গাড়ি আটকে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন আদিবাসীরা। তারা অখিল গিরির কড়া শাস্তির দাবি জানান। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে উঠে যায় অবরোধ। এরপর খাতড়া থানাও রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান ক্ষুব্ধ আদিবাসীরা।
এদিকে, অভিযুক্ত মন্ত্রী অখিল গিরির বিরুদ্ধে আজ (রোববার) সকালে রাজধানী দিল্লির নর্থ অ্যাভিনিউ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় এমপি। তিনি পুলিশকে অনুরোধ জানিয়েছেন, অবিলম্বে তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এফআইআর দায়ের করে যেন অখিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় এমপি আজ বলেন, ‘এফআইআর করা হয়েছে।দেশের রাষ্ট্রপতিকে যে ভাবে অখিল গিরি অপমান করেছেন, তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। সবচেয়ে বড় কথা, নন্দীগ্রামের ওই সভায় অখিলের পাশেই ছিলেন রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা! এটা শুধু রাষ্ট্রপতিকে অপমান নয়, পুরো আদিবাসী সমাজকে অপমান করা এবং মহিলাদের অপমান করা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন মহিলা হয়ে একজন মহিলার অপমানের পরেও তার কোনও বিবৃতি নেই!’
এদিকে, ওই ইস্যুতে তীর সমালোচনা ও বিতর্কের জেরে গতকাল (শনিবার) দুঃখপ্রকাশ করে মন্ত্রী অখিল গিরি বলেন, ‘এক মাস আগে থেকে শুভেন্দু অধিকারী (বিজেপি বিধায়ক ও বিরোধী দলনেতা) বিভিন্ন জায়গায় আমার সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন। আমি বয়স্ক মানুষ। আমার মনে ক্রোধ জন্মেছিল। রাষ্ট্রপতি মহোদায়াকে আমি কোনও অসম্মান করিনি। তার প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে। যে কথা আমার মুখ থেকে বেরিয়েছে, তা ক্রোধের বশে বেরিয়ে এসেছে। আমি অনুতপ্ত।’
যদিও ওই ইস্যুতে আজও প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের পদক্ষেপ সম্পর্কে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল নেতা শান্তনু সেন এমপি আজ বলেন, ‘বিজেপি নেত্রী লকেট দিদিমণিকে আমি বলব, অখিল গিরির মন্তব্যকে আমরা সমর্থন করি না। এটা আমাদের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে শুরু করে আমাদের সমস্ত নেতা-নেত্রী প্রকাশ্যে বলেছেন। অখিল গিরি নিজে ভুল স্বীকার করেছেন। তিনি নিজে চিঠি দিচ্ছেন। কিন্তু লকেট দিদিমণিকে আমি প্রশ্ন করব- ভারতবর্ষের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী দিদি-ও দিদি বলে সম্বোধন করে উপহাস করেছিলেন এবং অমিত শাহ (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী) যখন বলেছিলেন মায়াবতী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জৌলুস চলে গেছে, একেক রাতে দশ বছর করে বয়স বেড়ে যাচ্ছে, দিলীপ ঘোষ (বিজেপি নেতা) যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পা ভেঙে যাওয়ার পর বলেছিলেন, তাকে বারমুডা পরা উচিত, তথাগত রায় যখন বলেছিলেন, বাংলার মহিলারা বম্বের বার ড্যান্সারের মতো তখন উনি বিজেপিকে দেখেছেন তার টুইটার হ্যান্ডেলে বা তার প্রধানমন্ত্রীকে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বা তাকে মন্ত্রীসভা থেকে সরিয়ে দিতে?’ সব মিলিয়ে অখিল গিরির বিরূপ মন্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল আপাতত কিছুটা ব্যাকফুটে।#