‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
শুক্রবার

৩ মে ২০২৪

২:০১:২৪ PM
1455911

লাতিন আমেরিকার নারীদের সমাবেশে আয়াতুল্লাহ রামাজানী;

ইসলাম ধর্ম, নারী অধিকারের প্রধান রক্ষক

আহলে বাইত (আ.) ওয়ার্ল্ড অ্যাসেম্বলির সেক্রেটারি জেনারেল বলেছেন: মহান আল্লাহ্ নারীদের পরিচয় ও মর্যাদাকে এতটাই উঁচু করেছেন যে, তিনি পবিত্র কুরআনে কিছু কিছু নারীকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): ব্রাজিলের মুসলমানদের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ইসলাম; জীবনমুখী ও সংলাপের ধর্ম’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে ব্রাজিল সফররত আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার (মাজমা) সেক্রেটারি জেনারেল আয়াতুল্লাহ রেজা রামাজানি, লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের মুসলিম নারীদের এক সমাবেশ বক্তৃতাকালে, নারীর বিশেষ বৈশিষ্ট্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন: একজন নারী ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ভূমিকা রাখতে সক্ষম এবং সন্তান লালন-পালন তার দায়িত্বগুলোর অন্যতম।

একজন নারীর মাঝে বিদ্যমান আবেগ ও ভালবাসা ঐশ্বরিক ভালবাসার দৃষ্টান্ত স্বরুপ। অবশ্য ঐশ্বরিক ভালবাসা মায়ের ভালবাসার চেয়ে হাজার হাজার গুণ বেশি। পরিবারে তরবিয়্যতের দায়িত্ব নারীকে প্রদান করা হয়েছে এবং তরবিয়্যতের ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; আর এ সকল বিষয় একজন নারীর ব্যক্তিগত সক্ষমতার অংশ। সামাজিক কর্মকাণ্ডে নারীদের সামর্থ্য একত্রিত হলে অজেয় এক শক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে।

ইসলাম ধর্ম; নারী অধিকারের প্রধান রক্ষক

আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল বলেন: গত শতাব্দীতে, পশ্চিমা বিশ্বে নারীদের অধিকার রক্ষায় যে সকল পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে সেগুলো ছিল ফেমিনিজম কেন্দ্রীক; তারা আজও নারীকে হাতিয়ার ও পন্য হিসেবে ব্যবহার করছে। পশ্চিমারা বলে আমরা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি, এই দাবির ইতিহাস একশত বছরের; অথচ ইমাম সাজ্জাদ (আ.) এক হাজার দুইশত পঞ্চাশ বছর আগে অধিকার বিষয়ক একটি গ্রন্থ লিখেছেন। নারীদের সম্পর্কে রাসূল (সা.) এবং আমীরুল মুমিনীন (আ.) এর বাণীর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয় এবং এই ধরনের বিষয়বস্তু ইসলাম ধর্মে নারীর অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। ইসলাম ধর্ম নারীকে যে অধিকার দিয়েছে তা পশ্চিমা ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরতে হবে।

তিনি বলেন: সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে নারীর অবদান। ইতিহাস জুড়ে, নারীরা বিভিন্ন প্রতিকূল সময় পার করেছে; এমন এক যুগ ছিল যখন নারীকে পরিচয়হীন প্রাণী হিসাবে উপস্থাপন করা হত; সংস্কৃতিগত দিক থেকে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, কন্যা সন্তানকে কলঙ্ক ভাবা হত! পরিচয়হীনতা ও তাদেরকে পন্য হিসেবে ব্যবহার ছিল নারীদের জন্য সবচেয়ে মন্দ ও কঠিন চ্যালেঞ্জ; এ ধরনের বিষয় প্রাচীন জাহিলিয়্যাতের যুগে বেশী ছিল; এমন এক সময়ে মহানবী (সা.) নিজেকে নারীর পরিচয় ও মর্যাদার রক্ষক মনে করতেন। এ পথে তাকে বিভিন্ন প্রতিকূলতা পাড়ি দিতে হয়েছে। মুশরিকরা তাঁকে আবতার ও নির্বংশ বলে আখ্যায়িত করত। নারীর মর্যাদা ও অবস্থানকে সমাজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে তিনি (স.) স্বীয় কন্যার হাতে চুমু খেতেন এবং এ ধরনের বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে সমাজে নারীর নতুন ও বাস্তব এক চিত্র উপস্থাপন করেছিলেন।

 

আধ্যাত্মিক মাকাম অর্জনে নারী ও পুরুষ সমান

আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল বলেন:  একজন নারী সমাজ ও পরিবারের স্বস্তি আনতে পারে এবং মানব প্রজন্ম গড়ার পরিপূরক হতে পারে। সে এ গুরুদায়িত্ব গৃহ অভ্যন্তরে নিপুণভাবে আঞ্জাম দিতে সক্ষম। তবে নারীর দায়িত্ব শুধু গৃহাভ্যন্তরে আবদ্ধ নয়; বরং সামাজিক ক্ষেত্রে সে ভূমিকা রাখতে পারে, শুধু শিক্ষা ও তরবিয়্যতের ক্ষেত্রে কেন নারী সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। নারী যদি এমন স্বকীয়তার অধিকারী হয় তবে সে পুরুষের পাশে উচ্চতর মাকামে পৌঁছুতে পারে। এমনকি এই ক্ষেত্রে কিছু কিছু নারীর উন্নতি পুরুষদের চেয়ে বেশি হতে পারে। মহানবি (সা.) বলেছেন: নারীদেরকে প্রহার করা নীচ লোক ও (নীচ ব্যক্তিত্বের অধিকারী) স্বামীদের কাজ। হায়াতে তাইয়্যেবার মতো মাকাম যেমন পুরুষদের জন্য রয়েছে তেমনি নারীদের জন্যেও বিদ্যমান। মানবতা নারী-পুরুষ চেনে না; বরং মানবতা হলো মর্যাদা ও কারামাতের সাথে সম্পৃক্ত। হাদিসে এসেছে, ‘ইমামে যামানার (আ.) কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় সাথী হবে নারী’।

মহান আল্লাহ্ নারীদের পরিচয় ও মর্যাদাকে এতটাই উঁচু করেছেন যে, তিনি পবিত্র কুরআনে কিছু কিছু নারীকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

তিনি বলেন: আপনাদের উদ্দেশ্যে আমার পরামর্শ হলো, নারীদের সম্পর্কে ইমাম খোমেনি ও আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী’র দৃষ্টিভঙ্গি অধ্যয়ন করুন। ইমাম খোমেনি (রহ.) বলেছেন: দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন হচ্ছে আমাদের কাজ। সঠিকভাবে দায়িত্বগুলো পালন করতে হবে। কেননা ঐতিহাস আমাদের আচরণ নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করবে।#176