গত ১৯ জুন ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে মাজার রক্ষা ও প্রতিরোধ সংগ্রামে শহীদদের আন্তর্জাতিক কংগ্রেসের আয়োজক কমিটির সদস্যরা বৈঠক করেন। ঐ বৈঠকে দেওয়া সর্বোচ্চ নেতার বক্তব্য আজ (শনিবার) ইমাম রেজা (আ.)’র মাজার কমপ্লেক্স অনুষ্ঠানরত কংগ্রেসে প্রকাশ করা হয়েছে।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা মাজার রক্ষা ও প্রতিরোধ সংগ্রামের সব শহীদ বিশেষকরে জেনারেল সোলাইমানির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, মাজার রক্ষার সংগ্রামের একটা প্রতীকী দিক রয়েছে, আর তাহলো মাজারে শায়িত ব্যক্তিত্ব ও আহলে বাইত (আ.)’র চিন্তা ও আদর্শকে রক্ষা করা। তিনি বলেন, আহলে বাইত (আ.)-এর উচ্চ আদর্শ যেমন ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা, অত্যাচারী শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং সত্যের পথে ত্যাগ স্বীকারের মতো বিষয়গুলো সব সময় শুদ্ধ বিবেকদের কাছে সমাদৃত।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী গাজার জনগণের সমর্থনে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলনকে বিশ্বে শুদ্ধ বিবেকদের অস্তিত্বের উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মাজার রক্ষার সংগ্রামের বার্তা আসলে মানবিক আদর্শেরই বার্তা। এই বার্তা বিশ্বের শুদ্ধ বিবেকগুলোর কাছে পৌঁছাতে হবে। তিনি মাজার রক্ষার বিষয়টিকে ইসলামি বিপ্লবের বিশ্বদর্শনের অংশ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, যেকোনো আন্দোলন এবং বিপ্লব যদি তার আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পরিবেশ-পরিস্থিতিকে অবহেলা করে তাহলে তা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঠিক যেমন ইরানি জাতির সাংবিধানিক আন্দোলন এবং তেল শিল্পের জাতীয়করণ ইস্যু অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে ব্যস্ততা ও বিদেশি হস্তক্ষেপকে অবহেলা করার কারণে সফল হতে পারেনি।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা বলেন, ইসলামি আন্দোলনের প্রথম দিন ও ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের শুরু থেকেই মহান ইমাম খোমেনী (রহ.) সর্বদা বিদেশিদের হস্তক্ষেপ এবং বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ইস্যুতে সচেতন ছিলেন। তিনি শুধু অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন না। এসব বিষয়েও তিনি তার বক্তব্যে প্রয়োজনীয় সতর্কবার্তা দিতেন।
যেসব দেশের বিরুদ্ধে শত্রুরা অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিকল্পনা করেছিল সেসব দেশে মাজার রক্ষাকারী যোদ্ধাদের উপস্থিতিকে ইসলামি বিপ্লবের বিশ্বদর্শনের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শত্রুরা এই অঞ্চল দখল করতে চেয়েছিল। একই সাথে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ আরোপ করে এবং ইরানের ওপর ধর্মীয় ও বিশ্বাসগত চাপ বাড়িয়ে ইরানের ইসলামি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। কিন্তু ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে কেন্দ্র করে একদল ঈমানদার তরুণ শত্রুদের এই বড় পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। এভাবে বিবেচনা করলে বলা যায় মাজার রক্ষাকারীদের আন্দোলন ইরান ও গোটা অঞ্চলকে রক্ষা করেছে।
ইসলামি বিপ্লবের নেতা আমেরিকা ও পশ্চিমাদের অস্ত্র ও প্রচারযন্ত্রের সহায়তায় গঠিত আইএস বা দায়েশের নৃশংস, নিষ্ঠুর ও অমানবিক প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করে আরো বলেন, এই গোষ্ঠীটি এই অঞ্চল বিশেষকরে ইরানকে নিরাপত্তাহীন করে তোলার ষড়যন্ত্র করেছিল, কিন্তু মাজার রক্ষার সংগ্রামীরা তা ভেস্তে দিয়েছে।
ইসলামি বিপ্লবের প্রথম দিকটার আবেগ ও প্রেরণা পুনর্নির্মাণের শক্তির প্রদর্শনকে মাজার রক্ষাকারীদের আন্দোলনের আরেকটি দিক হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেসব তরুণ ইসলামি বিপ্লব ও ইমাম খোমেনী (রহ.) কে দেখেনি মাজার রক্ষায় তাদের অংশগ্রহণ, চার দশক আগের সেই ধর্মীয় ও বিপ্লবী প্রেরণা-উদ্দীপনা তৈরিতে ইসলামি বিপ্লবের চমৎকার সক্ষমতারই প্রমাণ।
ইসলামি বিপ্লব এবং এর নীতি-আদর্শ দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে পশ্চিমা মতাদর্শের অনুসারী কিছু ব্যক্তি যেসব বিশ্লেষণ প্রচার করেন সেসবের প্রতি ইঙ্গিত করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, মাজার রক্ষকদের সাহস, নিঃস্বার্থতা, আন্তরিকতা এবং ধর্মীয় নীতির প্রতি গভীর বিশ্বাস অবিশ্বাস্য বিষয় এবং তুলনাহীন এই বিষয়টি পাশ্চাত্যপন্থিদের বিশ্লেষণকে ভুল প্রমাণ করেছে।#
342/