‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
বৃহস্পতিবার

১৮ জুলাই ২০২৪

৩:৫০:৩৪ PM
1472866

ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ সংকট চলমান: ট্যাঙ্কের অভাব ও বিশ্ব জনমতের চাপ

ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ সংকট চলছেই। একদিকে ট্যাঙ্কের অভাব অপরদিকে বিশ্ব জনমতের চাপ। হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধেও ইহুদিবাদীদের কিচ্ছু করার সুযোগ নেই।

পার্সটুডে জানায় গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে এতো লম্বা সময় ধরে যুদ্ধ করে ইহুদিবাদীদের কোনো সামরিক লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সমালোচনা ও ক্ষোভ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।

ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ সংকট

বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরাও সম্প্রতি তেল আবিবের "আয়ালন" সড়কটি বন্ধ করে দেয়। ইহুদিবাদী বিক্ষোভকারীরা নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার উৎখাত এবং গাজা উপত্যকা থেকে ইহুদিবাদী বন্দীদের অবিলম্বে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে।

নেতানিয়াহুর বিরোধীরা অভিযোগ করেছে যে তার বিরুদ্ধে আইনি মামলায় বিচার এড়াতে সে ক্ষমতায় থাকার জন্য সময়ক্ষেপণ করছে। উপরন্তু ইহুদিবাদী বন্দীদের পরিবারগুলো চায় সময় নষ্ট না করে সরকার যেন ফিলিস্তিন প্রতিরোধের সাথে চুক্তি করে। তারা চায় যে কোনও মূল্যে প্রতিরোধ শক্তির  হাতে আটক ইহুদিবাদী বন্দীদের মুক্তি এবং গাজা উপত্যকায় ব্যর্থ হামলা বন্ধ করাসহ ফিলিস্তিনিদের ওপরও হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা।

বিভিন্ন মিডিয়া জানিয়েছে ইসরাইলের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি চরমপন্থী ইহুদি এবং ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠির সেনাদের মধ্যেও সংঘর্ষ হয়েছে। ইহুদিবাদী সংবাদপত্র "ইয়েদিওত আহারোনুত" জানিয়েছে: "হারেদিস" নামে পরিচিত একদল চরম ইহুদিবাদী অধিকৃত "বেনি বারাক" এলাকায় হামলা চালালে দুই উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা আহত হয়।

উল্লেখ্য যে, কয়েক সপ্তাহ আগে ইহুদিবাদী ইসরাইলের সর্বোচ্চ আদালত একটি আদেশ জারি করে। ওই আদেশে বলা হয়েছে, অন্যান্য ইহুদিবাদীদের মতো হারেদি জায়োনিস্টদেরও এই সরকারের সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক সামরিক সেবায় নিয়োগ করতে হবে। যদিও হারেদিরা বহুবার বলেছে যে তারা ইহুদিবাদী সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক সামরিক পরিষেবা দিতে ইচ্ছুক নয়, কারণ তারা তাওরাতের শিক্ষা অধ্যয়ন এবং প্রচারে ব্যস্ত।

এদিকে, ইহুদিবাদীদের ভেতর পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। গত মঙ্গলবার ইহুদিবাদী সেনারা পশ্চিম তীরে অবস্থিত রামাল্লার কাছে একটি গাড়িতে ভুল করে গুলি চালায়। কান হিব্রু নেটওয়ার্ক জানিয়েছে ওই গুলি চালানোর ঘটনায় ৩ ইহুদি বাসিন্দা আহত হয়েছে। আহতরা "বাইতআয়া" ইহুদিবাদী বসতির বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ

বিশ্বব্যাপী ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ এখন তুঙ্গে। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা শাহাব জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণ ফিলিস্তিনের সমর্থনে এবং গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরাইলি দখলদারিত্ব ও ৯ মাস ধরে চলমান গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে।

শিশু-হত্যাকারী ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভ স্বয়ং আমেরিকায় দিনের পর দিন অব্যাহত রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনের ব্যাপারে হোয়াইট হাউসের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। এছাড়াও গাজার জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশ করে আয়ারল্যান্ডের একদল মেডিকেল স্টাফও প্রচারাভিযান শুরু করেছে।

বিশ্বের বহু দেশের মানুষ গাজায় ইহুদিবাদী ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদ জানানো সত্ত্বেও তেলআবিব অপরাধযজ্ঞ অব্যাহত রেখেছে।

ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড

ইসরাইলি বর্বর সেনারা সম্প্রতি গাজা উপত্যকার দক্ষিণে খান ইউনূসের আল-মাওয়াসিতে ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু শিবিরে জঘন্য হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। গাজার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে ওই হত্যাকাণ্ডে অন্তত ৯০ ফিলিস্তিনি শহীদ এবং ৩ শতাধিক আহত হয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক  প্রধান জোসেপ বোরেল গাজা ট্র্যাজেডিকে সকল সীমা  অতিক্রমি বলে মন্তব্য করে বলেছেন: এই হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

জাতিসংঘ ভবন ধ্বংস

জাতিসংঘও বলেছে: তাদের ১৯০টিরও বেশি ভবন ও স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে। গাজা উপত্যকায় ইউএনআরডব্লিউএ-এর পরিচালক ইনাস হামদান সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন: দুর্ভাগ্যবশত গাজা উপত্যকায় কোন নিরাপদ স্থান নেই এবং শরণার্থীরা নিরাপদ স্থান খুঁজে পেতে এবং সেখানে আশ্রয় নিতে অক্ষম।

অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শক্তির জবাব এবং ইসরাইলি ট্যাঙ্কের ঘাটতি

গাজা এবং পশ্চিম তীরে ইহুদিবাদী সেনাদের বর্বরতার বিরুদ্ধে লেবাননের হিজবুল্লাহ নতুন করে ইসরাইলি স্থাপনায় ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইহুদিবাদী সেনাবাহিনীর মিডিয়া জানিয়েছে কিরিয়াত শমোনা এবং জালিলি অঞ্চলসহ ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলীয় ইহুদিবাদী বসতিগুলোতে অন্তত ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।

মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি নেই ইসরাইলের। হামাসের চেয়ে অন্তত দ্বিগুণ সেনা বেশি রয়েছে হিজবুল্লাহর এবং হামাসের তুলনায় কমপক্ষে ৪ গুণ বেশি অস্ত্র রয়েছে তাদের। ইহুদিবাদী সামরিক নেতারাও বলেছেন তারা লেবাননে যুদ্ধ করতে চাচ্ছেন না। কেননা গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাদের সমস্ত সামরিক শক্তি খর্ব হয়েছে। তাদের সামরিক বাহিনীও ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। নতুন যুদ্ধের জন্য তারা মোটেও প্রস্তুত নয়।

এদিকে ইহুদিবাদী সংবাদপত্র ইয়েদিওত আহারোনত এক প্রতিবেদনে স্বীকার করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজা যুদ্ধে তাদের প্রচুর ট্যাঙ্ক হারিয়ে এখন ট্যাঙ্ক সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। যদিও দখলদার বাহিনীর যুদ্ধমন্ত্রী ইয়োফ গ্যালান্ট সম্প্রতি লেবাননের হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য হুমকি দিয়ে বলেছেন:তেল আবিব লেবাননকে "প্রস্তর যুগে" ফিরিয়ে দিতে পারে।#