আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা
(আবনা): হুসীদের হামলা ঠেকানো ও লোহিত সাগর সংকটের
অবসান ঘটানোর ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোর অক্ষমতা এবং হুসী ক্ষেপণাস্ত্র যে অত্যাধুনিক
ও উচ্চ প্রযুক্তির মার্কিন ও ইসরাইলী রাডার ফাঁকি দিয়েছে সে সংক্রান্ত খবর এবং লোহিত
সাগর যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে হারছে সে সংক্রান্ত কিছু দিন আগেকার ব্লুমবার্গের
খবর প্রমাণ করে যে, ইসরাইল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা গাযা-ইসরাইল যুদ্ধে
মোটেও ভালো ও সুবিধা জনক অবস্থায় নেই ।
এ ঘটনা ও বাস্তবতা থেকে আবার প্রমাণিত হয় পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত বিজয়ের ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতির সত্যতা:
وَ الَّذِیْنَ جَاهَدُوْا فِیْنَا لَنَهْدِیَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَ إِنَّ اللّٰهَ مَعَ الْمُحْسِنِیْن
যারা (নিষ্ঠা ও খুলূসিয়তের সাথে) আমাদের পথে জিহাদ করেছে আমরা তাদেরকে অবশ্যই আমাদের পথ সমূহ প্রদর্শন করব (অর্থাৎ তাদেরকে অবশ্যই আমরা বিজয় ও সাফল্যের পথ সমূহে পরিচালিত করব)। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন। (আনকাবূত : ৬৯)
کَمْ مِّنْ فِئَةٍ قَلِیْلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً کَثِیْرَةً بِإِذْنِ اللّٰهِ ، وَاللّٰهّ مَعَ الصَّابِرِیْنَ .
‘মহান আল্লাহর অনুমতি ক্রমে কত ক্ষুদ্র গোষ্ঠী বৃহৎ গোষ্ঠীর ওপর বিজয়ী হয়েছে! আর মহান আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের (সাবিরীন) সাথে আছেন। (বাকারাহ : ২৪৯)
আর নিঃসন্দেহে ইয়ামানের বীর হুসীরা ও আনসারুল্লাহ’র মুজাহিদরা ধৈর্য্যের সাথে মহান আল্লাহর রাহে জিহাদ করছেন এবং তারা ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর বাস্তব নমুনা যাদেরকে মহান আল্লাহ বিজয় ও সাফল্যের পথসমূহ দেখাচ্ছেন এবং বৃহৎ গোষ্ঠীর (পশ্চিমা দেশগুলো) ওপর বিজয়ী করেছেন। পশ্চিমা দেশগুলো নিঃসন্দেহে বৃহৎ গোষ্ঠী। আর মহান আল্লাহ নিঃসন্দেহে এই ধৈর্যশীল ইয়ামানী মুজাহিদদের সাথেই আছেন। যারা ধৈর্যশীল মুজাহিদ ও সংগ্রামী যোদ্ধা হবে তাদের সাথেই মহান আল্লাহ্ আছেন এবং এমনকি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী হলেও তাদেরকে অবশ্যই বিজয়ী করবেন শত্রুদের ওপর এমনকি শত্রু পক্ষ বৃহৎ গোষ্ঠী হলেও। আর এ কথা গাজাবাসী, হামাস ও ইসলামী জিহাদের মুজাহিদ ও যোদ্ধাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য (অর্থাৎ ফিলিস্তিনী মুজাহিদরাও ক্ষুদ্র গোষ্ঠী)। কারণ তারাও ধৈর্য্যের সাথে জিহাদ করছে আগ্রাসনকারী অপরাধী সন্ত্রাসী সন্ত্রাসবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে এবং ইসরাইল ও ইসরাইলের পৃষ্ঠপোষকদের তুলনায় ক্ষুদ্র গোষ্ঠী। এই ইসরাইল নিঃসন্দেহে বৃহৎ গোষ্ঠী এবং গোটা পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক, সর্বাত্মক সাহায্য কারী ও সমর্থক । অথচ মহান আল্লাহ ধৈর্যশীল ক্ষুদ্র গোষ্ঠী ফিলিস্তিনী মুজাহিদদেরকে আল্লাহর দুশমন এই বৃহৎ গোষ্ঠী ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিজয় দান করছেন এবং ইসরাইল ১১ মাসের অধিক কাল ধরে সর্বাত্মক যুদ্ধ, গণহত্যা, আগ্রাসন, ধ্বংস যজ্ঞ ও সব ধরণের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেও যুদ্ধে তার ঘোষিত লক্ষ্য সমূহের কোনো একটিও বাস্তবায়ন করতে পারে নি এবং ইসরাইল এ যুদ্ধে এতটাই সর্বশ্রান্ত ও বিধ্বস্ত যে সাবেক এক ইসরাইলী মেজর জেনারেল ইসহাক ব্রিক্ (২২ অগাষ্ট ২০২৪ ) বলেছে: হামাস ও হিযবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলতে থাকলে এক বছরের মধ্যে ইসরাইলের পতন ঘটবে।
অবসরপ্রাপ্ত ইসরাইলী মেজর জেনারেল ইসহাক ব্রিক্ সাবধান করে বলেছেন: যদি হামাস ও ইসরাইলের সাথে ক্ষয়কারী যুদ্ধ অব্যাহত ও চলতে থাকে তাহলে ইসরাইল এক বছরের মধ্যেই ধ্বসে পড়তে পারে।
ব্রিক বলেন: দেশ (ইসরাইল) আসলেই জাহান্নামের ধার ও কিনারার দিকে ধাবিত হচ্ছে। ব্রিকের এ কথা ও উক্তি ইসরাইলী দৈনিক হা-আরেৎসের মতামত কলামে প্রকাশিত হয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত ইসরাইলী মেজর জেনারেল বলেন যে গ্যালান্ত্ এখন উপলব্ধি করতে শুরু করেছে যে গাযায় পূর্ণ বিজয় অর্থহীন।
ব্রিক বলেন : মনে হচ্ছে যে তিনি (গ্যালান্ত) বুঝতে শুরু করেছেন যে হামাসের সাথে একটি যুদ্ধবন্দী বিনিময় চুক্তিতে উপনীত হওয়ার ব্যর্থতা একটা আঞ্চলিক যুদ্ধের দিকে সঞ্চালিত করবে যা ইসরাইলকে মারাত্মক বিপদে ফেলে দিবে ।
মহান আল্লাহর ওয়াদা কখনোই মিথ্যা হয় না। খাঁটি ঈমান আনয়ন ও যথাযথ হিম্মত ও সাহস প্রদর্শন করতে হবে এবং উপযুক্ত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে খুলূসিয়াত ও নিষ্ঠার সাথে। কিন্তু অধিকাংশ মুসলিম দেশের সরকার গুলো কি তা করছে নাকি পশ্চিমাদের পাচাটা ভৃত্যই বনে আছে?!! ইয়ামানী হুসী আনসারুল্লাহর পদাঙ্ক অনুসরণ করলে তো মুসলমানদের এহেন দুর্দশা হত না। গাযায় ইসরাইলের আগ্রাসন, গণহত্যা ও সবধরণের অপরাধ সত্বেও অধিকাংশ মুসলিম দেশের সরকার গুলো (যেমন: মিশর, তুরস্ক, সৌদি আরব, জর্দান, কাতার, কুয়েত, আরব আমীরাত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি ) নীরব , নিথর ও নিশ্চুপ হয়ে দর্শকের ভূমিকায় বসে রয়েছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে যথার্থ শাস্তিমূলক সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া এবং কড়া কথা ও প্রতিবাদ করা তো দূরের কথা বেশ কিছু মুসলিম দেশ যেমন: তুরস্ক ও আরব আমিরাত ইত্যাদি ইসরাইলের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য বহাল ও অব্যাহত রেখেছে যদিও তুরস্কের দাবি ইসরাইলের সাথে নাকি ব্যবসায় বাণিজ্য কমিয়ে দিয়েছে!! অথচ কমানো নয় বরং বন্ধ করে দেওয়াটাই ছিল উচিত ও অত্যাবশ্যক তুরস্কের জন্য । কিন্তু সেটা তুরস্কের এরদোগান সরকার করে নি। আর এটাই হচ্ছে কতিপয় মুসলিম দেশের সরকার সমূহের কপটতা। এই নিফাক (কপটতা) থেকে বেরিয়ে আসতে হবে ইসলামী দেশগুলোর সরকার গুলোকে । তাহলে বিজয় ও সাফল্য সুদূর পরাহত বিষয় বলে গণ্য হবে না। মহান আল্লাহর কৃপা, ফযল ও রহমতে মুসলিম উম্মাহর বিজয় ও সাফল্য তখন হবে অতি নিকটবর্তী ।
-মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
#M