আহলে
বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): লেবাননের হিজবুল্লাহ বাহিনীর মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান
নাসরুল্লাহ’র শাহাদাতের ঘটনায় বিবৃতি প্রদান করে শোক প্রকাশ করেছে আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থা
(মাজমা)।
মূল বিবৃতি:
بسم الله قاصم الجبارين أَذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُم ظُلِمُوا وَإِنَّ اللَّهَ عَلَى نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ (حج (۳۹)
(অনুবাদ:‘যুদ্ধে অনুমতি প্রদান করা হলো তাদেরকে যাদের বিরুদ্ধে কাফেররা যুদ্ধ করে; তাদেরকে যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হল, কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ্ তাদেরকে সাহায্য করতে অবশ্যই সক্ষম।’[হাজ্ব : ৩৯])
অবশেষে, শিশু-হত্যাকারী ইসরাইলের মতো বর্বর ও হিংস্র স্বভাবের উন্মাদ পশু তার বিষাক্ত ছোবল বসিয়েছে এবং সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মাহকে শোকার্ত এবং তাদের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করেছে।
আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার (মাজমা)-এর সুপ্রীম কাউন্সিলের বিশিষ্ট সদস্য, প্রতিরোধ আন্দোলনের সর্দার প্রিয় "সৈয়দ হাসান নাসরাল্লাহ"-এর শাহাদাতের ঘটনায় এ সংস্থা (মাজমা) গভীর শোক প্রকাশ পূর্বক লেবানন ও ফিলিস্তিনের অসহায় ও নির্যাতিত জনগণের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে, নিম্নের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি জোর তাগিদ দিচ্ছে:
প্রতিরোধ আন্দোলনের এ সর্দারের শাহাদাত আশ্চর্য হওয়ার মতো কোন ঘটনা নয়, যেভাবে তার পূর্বসূরী সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভির (আল্লাহর রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক) শাহাদাতও আশ্চর্যজনক কোন ঘটনা ছিল না। نسال الله منازل الشهداء (আমরা মহান আল্লাহর দরবারে তাঁর জন্য শাহাদাতের সুউচ্চ মাকাম কামনা করি।)
মুজাহিদ ও মহান আল্লাহর রাস্তার যোদ্ধা এবং যারা বিশ্ব গ্রাসকারী আমেরিকা ও রক্ত পিপাসু ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে তাদের সবচেয়ে মধুর পরিণতি এ সংগ্রামের শুরু থেকে প্রতীয়মান; মূলতঃ তারা শাহাদাত ও জিহাদের বাসনা অর্জনের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে। من المؤمنين رجال صدقوا ما عهدوا الله عليه فمنهم من قضى نحبه (মু’মিনদের মধ্যে কতক লোক আল্লাহর সঙ্গে কৃত তাদের অঙ্গীকার সত্যে পরিণত করেছে। তাদের কতক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে (শাহাদাত বরণ) করেছে আর তাদের কতক অপেক্ষায় আছে। তারা (তাদের সংকল্প) কখনো তিল পরিমাণ পরিবর্তন করেনি।’ আহযাব : ২৩)
যদিও ‘সৈয়দ হাসান নাসরাল্লাহ’-এর কাপুরুষোচিত হত্যাকাণ্ড লেবাননের হিজবুল্লাহর দেহ ও আত্মা এবং বিশ্বের প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ে বড় ক্ষতের সৃষ্টি করেছে এবং একটি অপূরণীয় ক্ষতি ও একটি বড় বেদনার জন্ম দিয়েছে; কিন্তু কোনরূপ অতিরঞ্জন ছাড়াই একটি বিষয়ে জোর দিয়ে বলতে চাই যে, প্রতিরোধ ফ্রন্টের প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ একেকটি গর্জনকারী স্রোতের ন্যায়; যা এখনও জীবিত, ক্রমবর্ধমান, স্ফীত এবং বিজয়ের শিখরে পৌঁছানোর দিনগুলির জন্য আশাবাদি; نصر من الله و فتح قريب ‘((আর তাহলো) আল্লাহর সাহায্য ও আসন্ন বিজয়...।’সাফফ : ১৩)
আরেকটি অস্বাভাবিক (ও অনাকাঙ্খিত) বিষয় প্রতিটি বুদ্ধিমান এবং স্বাধীন ব্যক্তিকে বিস্মিত করে, তা হলো জাতিসংঘের কার্যক্রম; এ সংস্থা শান্তি প্রতিষ্ঠায় তৎপরতা, আগ্রাসীকে শাস্তি প্রদান এবং বৈধ অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের প্রতি সম্মান দেখানোর পরিবর্তে স্বয়ং শান্তি প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার মানুষদেরকে হত্যার অনুমোদন দেয় এবং নিরীহ ও অসহায় মানুষগুলোর হত্যাকাণ্ডকে সঠিক বলে আখ্যা দেয়।
লেবাননের হিজবুল্লাহ বাহিনী এবং ‘ইমাম মুসা সদর’ থেকে ‘সৈয়দ হাসান নাসরাল্লাহ’ পর্যন্ত এ সংগঠনের মহান নেতাদের লেবাননের সাধারণ জনগণের সাথে ঘনিষ্টতা, আন্তরিকতা ও স্নেহপূর্ণ সম্পর্কের কারণে আজ (হাসান নাসরুল্লাহর শাহাদাতে) তারা সকলে গভীর শোকাহত এবং আমরা আজ তাদের মাঝে অবর্ণনীয় শোক দেখতে পাচ্ছি; চাই তারা শিয়া হোক বা সুন্নি, খ্রিস্টান হোক অথবা ইহুদি, উদারপন্থী বা ধর্মনিরপেক্ষ অথবা বিপ্লবী। ان الذین آمنوا و عملوا الصالحات سيجعل لهم الرحمن وداً (‘যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে, দয়াময় তাদের প্রতি ভালবাসা দান করবেন।’ মারিয়াম : ৯৬)
‘সৈয়দ হাসান নাসরাল্লাহ’ এর মতো একজন মহান ব্যক্তির নাম ইতিহাসের পাতায় একজন মহান মুজাহিদ, মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিরোধ আন্দোলনের পতাকাবাহী, ধার্মিক আলেম, দক্ষ রাজনৈতিক, ক্লান্তিহীন মুজাহিদ, সাহসী সিংহপুরুষ, ফিল্ড কমান্ডার, একজন বাস্তববাদী আলেম, সৎ ও সত্যবাদী নেতা এবং একজন ক্ষমতাধর কিন্তু নির্যাতিত শহীদ নেতা হিসেবে চিরস্থায়ী ভাবে লিপিবদ্ধ থাকবে। অতএব, তাঁর শাহাদাত তাঁর পথের সমাপ্তি নয়; বরং এটা হলো মহান আল্লাহর সাহায্য আগমন ঘটার শুরু এবং ইন শা আল্লাহ সুনিশ্চিতভাবে সাহায্য প্রাপ্তির সময়।
পরিশেষে, স্বাধীনতাকামীদের বিজ্ঞ রাহবার ও বিশ্বের শিয়াদের নেতার বেলায়ী ফরমান ও ফতোয়ার সাথে আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থা (মাজমা)-এর সাথে সম্পৃক্ত সকল সংস্থা এবং আহলে বাইত (আ.) কেন্দ্রীক সকল সোসাইটির সাথে একবাক্যে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করে লাব্বাইক বলছি; পাশাপাশি ইহুদিবাদী শত্রু এবং অত্যাচারী ও নিকৃষ্ট দখলদারদের বিরুদ্ধে এ জিহাদে আমরা আমাদের জীবন, সম্পদ, ও জ্ঞানসহ সর্বস্ব নিয়ে লেবানন, ফিলিস্তিন এবং অন্যান্য ইসলামি ভূখণ্ডের নির্যাতিত জনগণের পাশে রয়েছি এবং তাদেরকে সাহায্য করাকে ফরজ ও ওয়াজিব মনে করি। سیعلم الذین ظلموا اي منقلب ينقلبون. (অত্যাচারীরা অচিরেই জানতে পারবে তাদের গন্তব্যস্থল কিরূপ।’ শুআরা : ২২৭)
আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থা
৮ই মেহের, ১৪০৩ ফার্সি সন
(২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ইং)