১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ - ১৭:৪৬
 কুর্দিস্তানের ভূমিকে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হবে না: কুর্দি নেতা

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আব্দুল্লাহিয়ান তেহরানে ইরাকের পেট্রিয়টিক ইউনিয়ন অব কুর্দিস্তানের প্রধান বাফেল তালেবানির সাথে সাক্ষাত করেছেন। অন্যদিকে ইরাকে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ কাজেম আল সাদেক ইরাকের আরবিলে কুর্দিস্তান অঞ্চলের প্রধানমন্ত্রী মাসরুর বাজারগনির সাথে সাক্ষাত করেছেন। এসব সাক্ষাতে তারা তেহরান-বাগদাদ নিরাপত্তা চুক্তি বাস্তবায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন।

ইরানের সাথে ইরাকি কুর্দিস্তান এলাকার সম্পর্ক নানা কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ দু'পক্ষের মধ্যে রয়েছে অভিন্ন সাংস্কৃতিক সম্পর্ক। ইরান ও ইরাকের কুর্দিদের মধ্যে ঐতিহাসিক ঘনিষ্ঠতা ছাড়াও, ইরাকি কুর্দিস্তানের জনগণ এবং কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশ ইরানে বসবাস করত এবং ইরানের কুর্দিদের একটি বড় অংশও ইরাকি কুর্দিস্তানে উপস্থিত রয়েছে। যদিও ইরাকের বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ সুন্নি মাজহাবের অনুসারী কিন্তু তারপরও ইরানের সাথে তাদের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও যোগাযোগ। ইমাম হোসেন  (আ.)এর শাহাদাতের চেহলাম বার্ষিকী বা আরবাইন উপলক্ষে কারবালা অভিমুখে পদযাত্রায় কুর্দিস্তান এলাকার জনগণও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়ে থাকেন। এ কারণে বাগদাদে ইরানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ কাজেম আল সাদেক ইরাকি কুর্দিস্তান অঞ্চলের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতে আরবাইনের পদযাত্রায় অংশ নেয়ার জন্য কুর্দি জনগণকে সহযোগিতা করায় আরবিলের স্থানীয় সরকারের প্রশংসা ও ধন্যবাদ জানান।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, যদিও ইরান ও কুর্দিস্তান অঞ্চলের সীমানায় অতীতে কখনও উত্তেজনা ও সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরাকি কুর্দিস্তান এলাকা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে এবং শত্রুরা ইরানের বিরুদ্ধে তাদেরকে ব্যবহার করেছে। এ কারণে  ইরান বহুবার  এ বিষয়টি ইরাকের সরকার ও আরবিলে কুর্দিদের স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করেছে এবং প্রতিবাদ জানিয়েছে। এমনকি ইরান কুর্দিস্তানে অবস্থিত সন্ত্রাসী ঘাঁটিতেও বেশ ক'বার হামলা চালিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহিয়ান তেহরানে ইরাকের পেট্রিয়টিক ইউনিয়ন অব কুর্দিস্তানের প্রধান বাফেল তালেবানির সাথে সাক্ষাতে বলেছেন, তেহরান একটি স্বাধীন, সমৃদ্ধ ও উন্নত ইরাক কামনা করে। তিনি আরো বলেন, কুর্দিস্তান অঞ্চলে সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি এবং ইরানের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে তাদের ধ্বংসাত্মক তৎপরতা ইরাকের সংবিধান এবং দুদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পরিপন্থী। কারোরই এমন কিছু করা উচিত হবে না যাতে ইরাকের প্রতিবেশীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অন্যদিকে, ইরানে গত বছরের গোলযোগের সুযোগে যখন সন্ত্রাসীরা এবং বিদ্রোহীরা ইরাকি কুর্দিস্তান অঞ্চলের সীমানা ব্যবহার করে ইরানে বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল, তখন ইরান কুর্দিস্তানে সন্ত্রাসীদের উপস্থিতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল। এরপর ইরান ও ইরাকের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকে নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল যাতে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তর ইরাক থেকে সন্ত্রাসীদের উৎখাতের কথা বলা হয়। এ কারণে কুর্দি নেতার সাথে সাক্ষাতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওই চুক্তি বাস্তবায়নের ওপর ফের গুরুত্বারোপ করেছেন। সাক্ষাতে কুর্দি নেতাও ইরানকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে উল্লেখ করে ইরানের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নে আমরা বদ্ধ পরিকর এবং ইরানের বিরুদ্ধে কুর্দিস্তানে ভূমি ব্যবহারের অনুমতি আমরা দেব না। #