১৭ জুলাই ২০২৫ - ১৯:৪৩
গাজায় কবরের জায়গাও মিলছে না

গাজার রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, স্কুল, বাড়ির উঠোন— সর্বত্র পড়ে থাকছে মৃতদেহ। কিন্তু এত মৃত্যু সামলানোর মতো কবরের জায়গাও নেই। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে গাজায় এখন কবর দেওয়াই হয়ে উঠেছে বড় সংকট।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): গত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজা উপত্যকায় প্রতিদিনই বাড়ছে নিহতের সংখ্যা। একদিকে বোমা হামলা, অন্যদিকে খাদ্য ও ওষুধের অভাবে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে অনবরত। ২২ মাস পেরিয়ে গেলেও এই মৃত্যুর মিছিল থামেনি। গাজার রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, স্কুল, বাড়ির উঠোন— সর্বত্র পড়ে থাকছে মৃতদেহ। কিন্তু এত মৃত্যু সামলানোর মতো কবরের জায়গাও নেই। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে গাজায় এখন কবর দেওয়াই হয়ে উঠেছে বড় সংকট।

সোমবার (১৪ জুলাই) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫৮,০০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১,৩৯,০০০ জনেরও বেশি। ধসে পড়া ভবনের নিচে ১০,০০০ মানুষ এখনো চাপা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর বাইরেও রয়েছে আরও গভীর এক চিত্র। ৬ জুলাই প্রকাশিত ‘প্যালেস্টাইন সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চ’ এর এক জরিপ অনুযায়ী, গত ১৫ মাসে গাজায় ৮৪,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭৫,২০০ জন সরাসরি সহিংসতার শিকার, এবং ৮,৫৪০ জন প্রাণ হারিয়েছেন অনাহারে। নিহতদের বড় একটি অংশই নারী, শিশু ও বৃদ্ধ।

এই জরিপ সরকারিভাবে প্রকাশিত পরিসংখ্যানের চেয়েও অনেক বড় এবং এটি সরকারি হাসপাতালের বাইরে নিহত ও ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া মানুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে। অনেক জায়গায় ইসরায়েলি বাহিনীর দখল ও বাধার কারণে গাজা শহর, উত্তর ও রাফাহ অঞ্চল জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি।

গত কয়েক মাসে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। মার্চের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৭,৫০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি। ত্রাণ নিতে গিয়েও প্রাণ হারাচ্ছেন অসহায় মানুষ। জাতিসংঘের মুখপাত্র থামিন আল-খেতান জানিয়েছেন, ত্রাণ সংক্রান্ত সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৮৭৫ জন। এছাড়া গাজার সরকারি তথ্য অফিস জানায়, পানি বিতরণ কেন্দ্রে হামলায় নিহত হয়েছেন আরও ৭০০ জনের বেশি। এই বাস্তবতায় শিশুরা সবচেয়ে দুর্ভোগে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, প্রতি ১০ জন শিশুর একজন অপুষ্টিতে ভুগছে।

অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার উত্তরের অন্তত ১৬টি এলাকার বাসিন্দাদের জোরপূর্বক উৎখাতের হুমকি দিয়েছে। বলা হয়েছে, গাজা শহর ও জাবালিয়ার কিছু পাড়া থেকে অবিলম্বে আল-মাওয়াসির অঞ্চলে চলে যেতে হবে। অর্থাৎ নিরাপদ আশ্রয়ের নামে মানুষকে আবার বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে।

এই ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মহলও সক্রিয় হচ্ছে। কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটায় ৩০টিরও বেশি দেশের কূটনীতিকরা গাজা যুদ্ধ ও পশ্চিমতীরের দখলদারিত্ব নিয়ে আইনি ও কূটনৈতিক সমাধান খুঁজতে দুই দিনের বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। 

Tags