২৮ জুলাই ২০২৫ - ২১:৩৯
জার্মানি কি ইউরোপের সবচেয়ে ঘৃণ্য দেশ হয়ে উঠছে-গতকাল সাদ্দামকে সমর্থন, আজ নেতানিয়াহু

ইরানের প্রতি জার্মান সরকারের রাজনৈতিক আচরণ আবারও প্রমাণ করেছে যে এই দেশটি কেবল ইরানি জাতির শত্রুদের পাশেই দাঁড়ায় নি বরং ইউরোপে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর অন্যতম মুখপাত্র হয়ে উঠেছে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): যেদিন পশ্চিম এশিয়া আবারও ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি আগ্রাসনের উত্তাপে জ্বলছে সেই দিনগুলোতে জার্মানি কেবল সীমাহীন নির্লজ্জতার সাথে এই পদক্ষেপগুলো পক্ষে সাফাই গাইছে না বরং এই অঞ্চলে উত্তেজনা,সন্ত্রাস এবং সহিংসতার ধারাবাহিকতায় সরাসরি অংশীদার হয়ে উঠেছে।


পার্সটুডে অনুসারে, জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডিব্রিন্টের বক্তব্য তার একটি বাস্তব উদাহরণ। অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে একটি সরকারী সফরের সময় তেল আবিবের বেইত ইয়াম এলাকার ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন করার সময় তিনি ইসরায়েলি সামরিক কেন্দ্রগুলোতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে "সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড" হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন যে ইরান "ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।" তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন,  "ইসরায়েলের আত্মরক্ষায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানির পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।"

এই অবস্থানগুলো কেবল জার্মান সরকারের নৈতিক অবক্ষয়কেই নির্দেশ করে না, বরং তেল আবিবের ইচ্ছার ওপর বার্লিনের সম্পূর্ণ নির্ভরতাকেও প্রকাশ করে। ইউরোপের অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ এই অবস্থানগুলোকে "ইসলামী বিশ্বের সাথে জার্মানির সম্পর্কের জন্য বিপজ্জনক, উস্কানিমূলক এবং ধ্বংসাত্মক" হিসাবে মূল্যায়ন করেছেন। আগের চেয়েও বেশি খোলাখুলিভাবে জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইরান, রাশিয়া এবং চীনের বিরুদ্ধে "পশ্চিমা গণতন্ত্রের মিলন" সম্পর্কে কথা বলেছেন; এমন একটি বাক্যাংশ যা বিংশ শতাব্দীর যুদ্ধপ্রবণ জোটের কথা ঠিক মনে করিয়ে দেয় একই ঔপনিবেশিক প্রকৃতির কিন্তু এবার ইসরায়েলি নিরাপত্তার আড়ালে।

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্টজও আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানের উপর ইহুদিবাদী সরকারের আক্রমণকে সমর্থন করেছেন এবং তাদের "সমালোচনার জন্য অপ্রয়োজনীয়" বলে মনে করেছেন। তিনি মিথ্যাচার করে ইরানকে "সন্ত্রাসী শাসন" বলেছেন এবং "আমাদের সকলের জন্য ইসরায়েলের নোংরা কাজ" এর হুমকিমূলক সুরে কথা বলেছেন। এটি ইরানের জনগণের রক্তের বিনিময়ে পশ্চিমাদের রাজনৈতিক স্বার্থের প্রতি অগ্রাধিকার এবং অপরাধে জড়িত থাকার স্পষ্ট স্বীকারোক্তি।

অন্যদিকে, বিশেষ করে ১৯৮০-এর দশকে আগ্রাসী শাসনব্যবস্থাকে অস্ত্র প্রদানে জার্মানির ঐতিহাসিক ভূমিকা অবিস্মরণীয়। বার্লিন সাদ্দাম হোসেনের পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং জার্মান কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে ইরাকে মারাত্মক রাসায়নিক অস্ত্র সরবরাহ করেছিল;এসব অস্ত্র  সারদাশত, হালাবজা এবং ফাও-তে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিকদেরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল। এমন ইতিহাসের সাথে জার্মানি এখন ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে একই ভূমিকা পালন করছে। ইসরায়েলকে রাডার সিস্টেম এবং সামরিক সাবমেরিন সরবরাহ করা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রাজনৈতিক ও বিচারিক সহায়তা পর্যন্ত দিচ্ছে।

এই দেশটি যে নিজেই মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্রের আওতাভুক্ত এবং তার নিরাপত্তার জন্য ওয়াশিংটনের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির বিচার করার কোন কর্তৃত্ব রাখে? যে দেশটি তার ঔপনিবেশিক অতীতের ভারী ছায়া এবং গণহত্যায় জড়িত থাকার হাত থেকে বাঁচতে পারেনি আজও ইসরায়েলি বিমান হামলাকে সমর্থন করে একই অন্ধকার পথে হাঁটছে।

২০১৫ সালে জেসিপিওএ'র চুক্তির ভয়াবহ লঙ্ঘনের পর যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বছরের পর বছর আলোচনার পর কেবল চুক্তি থেকে সরে আসে নি এবং নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনরায় আরোপ করেছে এবং ইউরোপ বিশেষ করে জার্মান সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হয়েও ইরানকে একতরফা চুক্তি মেনে চলতে বলে! ইতিমধ্যে, জার্মানি 'ইন্সটেক্স' নামক একটি কৌশল ব্যবহার করে জেসিপিওএ থেকে মার্কিন প্রত্যাহারের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ভান করার চেষ্টা করেছিল; কিন্তু এই প্রক্রিয়াটির কার্যত কোনও প্রভাব পড়েনি এবং এটি কেবল ইরানকে প্রতারণা করা এবং পশ্চিমাদের সুবিধার জন্য সময় কেনার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।

বর্তমানে, একই জার্মান সরকার নির্লজ্জভাবে দাবি করছে যে ইরান আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার সাথে সহযোগিতা করবে এবং উত্তেজনা বৃদ্ধি এড়াবে! এই নির্লজ্জ অনুরোধটি করা হচ্ছে যখন ইতিহাস ইরানের জনগণের সাথে বার্লিনের অসংখ্য বিশ্বাসঘাতকতার প্রমাণ। সবচেয়ে দুঃখজনক হল ইরানের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তির ৪৮ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে ইসরায়েলে জার্মান সামরিক সরঞ্জামের জরুরি প্রেরণ।

এই পদক্ষেপটি ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জার্মানির ব্যবহারিক অংশগ্রহণের একটি স্পষ্ট লক্ষণ। সাদ্দামের রাসায়নিক অস্ত্র সরবরাহ থেকে শুরু করে গাজার জনগণের গণহত্যায় সহায়তা এবং ইরানের উপর আক্রমণে লজিস্টিক সহায়তা প্রদান জার্মানি সর্বদা এই অঞ্চলের জনগণের শত্রুদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এই কালো ইতিহাস এবং নির্লজ্জ অবস্থানের কারণে ইরানের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোনো বৈধতা বা অধিকার জার্মানির নেই।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha