আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নিউইয়র্ক আসা উপলক্ষে বিএনপি-জামায়াত এবং আওয়ামীলীগের পাল্টাপাল্টি সভা, সমাবেশ এবং বিক্ষোভে দেশের ইমেজ মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মনে করছেন আমেরিকার প্রবাসীরা।
এসব কর্মসূচির ফলে বাংলাদেশী কমিউনিটির উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন তারা। আর এজন্য আমেরিকান প্রবাসীরা রাজনীতিবিদদের উপর ক্ষুব্ধ। তারা মনে করেন, যে কোন দেশের সরকার প্রধান বা অন্য কোন দায়িত্বশীলের উপর দেশের কিছু নাগরিক নানান কারণে অসন্তুষ্ট থাকতেই পারে। কিন্তু কনস্যুলেটে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা আমেরিকায় বিরল।
নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় বসবাসরত নাঈম ভূইয়া জনকন্ঠকে বলেন, আমেরিকায় যদি আমাদের রাজনীবিদরা নানা রকম বিতর্কিত কাজ করে দেশের ইমেজ ক্ষুন্ন করে তাহলে এটি আমাদের কমিউনিটির উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। অন্য কমিউনিটির লোকেরা এ নিয়ে বিদ্রুপ প্রকাশ করে থাকে। এমনকি ভবিষ্যতে আমেরিকায় ভিসাপ্রাপ্তি ক্ষেত্রেও জটিলতা বাড়তে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাসরত হুমায়ুন কবির আকাশ বলেন, প্রতিবাদের নিজস্ব সভ্য ভাষা আছে। কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদরা বিশেষ করে ক্ষমতাচ্যুত অনুসারীদের একটি গোষ্ঠী কনস্যুলেট অফিস পর্যন্ত ভাংচুর করেছে। আবার ড. মোহাম্মদ ইউনূসের আসাকে কেন্দ্র করে হুমকি দিচ্ছে। এগুলো করে দেশের ভামূর্তি ক্ষুন্ন করা ছাড়া অন্য কিছুই হয় না। আমরা চাই প্রতিবাদটি যাতে সুন্দর হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবাসী বলেন, আজ শনিবার বিকেলে বিএনপি বড় সমাবেশ করেছে। আবার আওয়ামীলীগ ড. ইউনূসকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছে। আবার যদি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তাহলে বাংলাদেশীদের উপর আমেরিকার প্রশাসনের পক্ষ থেকে খারাপ কিছুও হতে পারে।
আমরা আসলে খুবই আতঙ্কিত। উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। ২৬ আগস্ট কনস্যুলেটের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোববার জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান দিবসের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে কনস্যুলেটে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও কমিউনিটির দেড় শতাধিক অতিথি এতে অংশ নেন। নিরাপত্তার জন্য আগেই পুলিশের মোতায়েন ছিল।
তবে বিকেল ৫টার পর হামলাকারীরা কনস্যুলেটের সামনে অবস্থান নিয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে, অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করে এবং অতিথিদের ধাওয়া দেয়। প্রবেশে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি ডিম নিক্ষেপ করে।
ভবনের পাশের একটি অফিসের কাচের দরজায় আঘাত করলে সেটি ফেটে যায়। পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে দুষ্কৃতকারীদের ছত্রভঙ্গ করে এবং কয়েকজনকে আটক করে। ঘটনার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ পুলিশের হাতে রয়েছে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছে নিউইয়র্ক পুলিশ।
কনস্যুলেট জানায়, পুরো সময় পুলিশ সতর্ক ছিল এবং প্রধান অতিথি নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ ও প্রস্থান করেন। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় পুলিশ, মেয়র এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের স্থানীয় অফিসে আনুষ্ঠানিক পত্র পাঠানো হয়েছে।
এদিকে আজ রোববার দিবাগত রাত ১টা ৪ড় মিনিটে জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউেইয়র্কে আসছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূস।
নিয়ইয়র্কের স্থানীয় সময় রোববার রাতেই তাঁর পৌঁছানোর কথা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিবেন ২৬ সেপ্টেম্বর।
এদিকে এ বছর প্রধান উপদেষ্টার সফরকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা জোরদারের জন্য নিউইয়র্ক পুলিশ, মেয়র অফিস এবং ফরেন সার্ভিসের কাছে বাড়তি সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশের কনসুলার জেনারেল অফিস। চিঠিতে তারা নোবেলবিজয়ী ও বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নিরাপত্তার শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত ও যেকোন ধরনের অপ্রীতিকার ঘটনা এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা বিমানবন্দর, হোটেল এবং জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে গণজমায়েতের ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থকরাও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে পারেন বলে আশঙ্কা করছে কনস্যুলেট অফিস।
এ ব্যাপারে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মাদ মোজাম্মেল হক জনকন্ঠকে বলেন, আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা প্রধান উপদেষ্টার আগমনকে কেন্দ্র করে বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করবেন। এ কারণে আমরা স্থানীয় প্রশাসন, নিউইয়র্ক পুলিশ, মেয়র অফিস কাছে বাড়তি নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি দিয়েছি। একইভাবে নিউইয়র্কের ফরেন সার্ভিসকে বিষয়টি অবগত করেছি। আশা করি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সহায়তা করবেন। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সফরকে কেন্দ্র যেকোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বিএনপি-জামায়াত আলাদাভাবে অবস্থান করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। তবে আমরা সতর্ক অবস্থানে থাকবো। এদিকে কনস্যুলেট অফিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি কর্মসূচি চলাকালে শৃঙ্খলা বজায় রাখা, কূটনৈতিক প্রোটোকল মানা এবং যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে চলতে হবে। একইসঙ্গে বলা হয়েছে কনস্যুলেট প্রাঙ্গণ বা অফিস সংলগ্ন এলাকায় অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের সমাবেশ বা বিক্ষোভ কার্যক্রমকে বেআইনি হিসেবে গণ্য করা হবে।
Your Comment