আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা):পাকিস্তানের পর দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় রাষ্ট্র হিসেবে এই আধুনিক যুদ্ধবিমান বহরে যুক্ত করতে যাচ্ছে ঢাকা। যা দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় যুগান্তকারী মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী (বিএএফ) ১৬টি জে-১০সি যুদ্ধবিমান কেনার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা পুরনো হয়ে যাওয়া চীনের তৈরি এফ-৭ ইন্টারসেপ্টরসহ বিভিন্ন পুরনো যুদ্ধবিমানকে ঘাটতি পূরণ করবে।
এছাড়াও চীনের তৈরি চতুর্থ প্রজন্মের ৩২টি জেএফ-১৭ থান্ডার ব্লাক থ্রি যুদ্ধবিমান কিনতেও আগ্রহ দেখিয়েছে ঢাকা। এই বিমানকে ‘ভিক্টোরিয়াস ড্রাগন’ নামেও ডাকা হয়। পাকিস্তান অ্যারোনটিক্যাল কমপ্লেক্স (পিএসি) ও চীনের চেংদু এয়ারক্রাফ্ট ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপের (সিএআইজি) যৌথভাবে তৈরি জেএফ-১৭ থান্ডার বর্তমানে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে রয়েছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই ইঞ্জিনের মাধ্যমে চীন সম্পূর্ণভাবে রাশিয়ান প্রপালেশন সিস্টেমের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত হতে পেরেছে— যা কৌশলগতভাবে একটি বড় অগ্রগতি।
জে-১০সি যুদ্ধবিমানের যুদ্ধ-সক্ষমতা আরও একধাপ এগিয়ে গেছে এর অত্যাধুনিক এক্টিভ ইলেক্ট্রোনিক্যালি স্ক্যানড অ্যারি (এইএসএ) রাডার ব্যবস্থা সংযুক্তির মাধ্যমে। এই প্রযুক্তি যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধবিমানটিকে উন্নত পরিস্থিতি মূল্যায়ন, একাধিক লক্ষ্যবস্তুকে একসাথে অনুসরণ এবং দৃষ্টিসীমার বাইরে (বিবিআর) সুনির্দিষ্টভাবে আঘাত হানার সক্ষমতা প্রদান করে।
‘গেম চেঞ্জার’ জে-১০সি
যদিও অনেক সময় জে-১০সি-কে মার্কিন এফ-১৬ এর সাথে তুলনা করা হয়। তবে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন যে, এটি ইসরায়েলের বাতিল হওয়া লাভি প্রজেক্টের প্রযুক্তিগত ভিত্তি থেকে উপকৃত হয়েছে। এর ফলেই এই যুদ্ধবিমানটি উন্নত এরোডাইনামিক দক্ষতা ও বহুমুখী মিশন পরিচালনার ক্ষমতা অর্জন করেছে।
জে-১০সি-এর সবচেয়ে শক্তিশালী বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি হলো পিএল-১৫ বিভিআর আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের সক্ষমতা। পিএল-১৫ বর্তমানে মার্কিন এটিএম-১২০ এএমআরএএএম ক্ষেপণাস্ত্রের সরাসরি প্রতিযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং এটি অনেক সামরিক বিশ্লেষকের চোখে এমন একটি ‘গেম চেঞ্জার’ প্রযুক্তি, যা আকাশযুদ্ধে ভারসাম্য পরিবর্তন করে দিতে সক্ষম
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ যদি এই উচ্চ-প্রোফাইল জে-১০সি সংগ্রহের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে, তবে এটি দক্ষিণ এশিয়ার আকাশ শক্তির ভারসাম্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নির্দেশ করবে। এটি ঢাকাকে আকাশ প্রতিরক্ষা ও আক্রমণ প্রতিরোধে আরও আত্মবিশ্বাসী এবং প্রস্তুত করবে, বিশেষ করে ভারত বা মিয়ানমারের মতো আঞ্চলিক প্রতিপক্ষের উসকানি বা অনুপ্রবেশের জবাবে দ্রুত ও কার্যকর প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষেত্রে।
জে-১০সি একটি ৪.৫++ প্রজন্মের মাল্টিরোল ফাইটার জেট। এর অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা কৌশলকে আরও জোরালো করবে। শুধু আকাশে আধিপত্য বজায় রাখতেই নয়, বরং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ভূরাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
Your Comment