৮ নভেম্বর ২০২৫ - ০০:৪৫
গাজায় যুদ্ধাপরাধ নিয়ে ইসরায়েলি সামরিক আইনজীবীরা যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গাজায় যুদ্ধ চলাকালীন ইসরায়েলের সামরিক আইনজীবীদের কাছ থেকে এমন এক সতর্কতা পেয়েছিল যাতে বলা হয়েছিল যে, ইসরায়েলের অভিযানে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনার মতো প্রমাণ রয়েছে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা):  ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে সাবেক পাঁচ মার্কিন কর্মকর্তা।


তাদের মতে, এই তথ্য ছিল যুদ্ধ চলাকালীন মার্কিন নীতিনির্ধারকদের কাছে উপস্থাপিত সবচেয়ে উদ্বেগজনক গোয়েন্দা তথ্যগুলোর একটি। এতে দেখা গেছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ভেতরেই অভিযানের বৈধতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। যা সরকারের প্রকাশ্য অবস্থানের সঙ্গে তীব্র বৈপরীত্য সৃষ্টি করে।


সাবেক দুই কর্মকর্তা বলেন, এই তথ্য ২০২৪ সালের শেষের দিকে বাইডেন প্রশাসনের সময় কংগ্রেস ব্রিফিংয়ের আগে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়।


গোয়েন্দা তথ্যটি ওয়াশিংটনে উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে যখন গাজার বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। মার্কিন কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ইসরায়েলের অভিযান হয়তো আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করছে।

গাজা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, দুই বছরের অভিযানে ইসরায়েল ৬৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, নিহতদের অন্তত ২০ হাজার যোদ্ধা।

এই তথ্য প্রকাশের পর জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে মার্কিন কর্মকর্তারা ও আইনি পরামর্শকরা আলোচনা করেন, কীভাবে এই তথ্যের প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত।

যদি যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করত যে ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করছে, তবে মার্কিন আইনে অস্ত্র সরবরাহ ও গোয়েন্দা সহায়তা বন্ধ করতে হতো। দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সহযোগিতা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

বাইডেন প্রশাসনের ডিসেম্বরের বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পেন্টাগন, গোয়েন্দা সংস্থা ও হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা অংশ নেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনকেও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা বিষয়টি অবহিত করেন।

তিন সাবেক কর্মকর্তা জানান, শেষ পর্যন্ত মার্কিন আইনজীবীরা সিদ্ধান্ত নেন যে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব প্রমাণ অনুযায়ী ইসরায়েল আইন লঙ্ঘন করেছে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়। ফলে অস্ত্র ও গোয়েন্দা সহায়তা চালু থাকে।

কিছু কর্মকর্তা আশঙ্কা করেছিলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুললে হামাস শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে এবং যুদ্ধবিরতি আলোচনায় বিলম্ব ঘটবে।

অন্যদিকে, প্রশাসনের একাংশ মনে করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ছিল ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করা, কারণ মার্কিন অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে গাজায় ইসরায়েলি হামলায়।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর এই ইস্যুতে ওয়াশিংটনের আগ্রহ কমে যায় বলে জানান সাবেক কর্মকর্তারা।

সাবেক পাঁচ মার্কিন কর্মকর্তা জানান, এমনকি ইসরায়েলের ভেতরকার গোয়েন্দা সতর্কতা পাওয়ার আগেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনি পরামর্শকরা অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে একাধিক বৈঠকে সতর্ক করেছিলেন যে, ইসরায়েলের অভিযান আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করতে পারে।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরেই কিছু আইনজীবী ব্লিঙ্কেনকে বলেছিলেন, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক আচরণ যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়তে পারে।

এই আশঙ্কা আংশিকভাবে প্রতিফলিত হয় ২০২৪ সালের মে মাসে প্রকাশিত এক সরকারি মার্কিন প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়েছিল, ইসরায়েল মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করে থাকতে পারে। তবে প্রতিবেদনে ‘যুদ্ধের অনিশ্চয়তা’ উল্লেখ করে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়নি।

গত বছরের নভেম্বরে নেদারল্যান্ডসের হেগ-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী  নেতানিয়াহু, সাবেক ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ও হামাস নেতা মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। হামাস পরে জানায়, ইসরায়েল দেইফকে হত্যা করেছে।

ইসরায়েল আদালতের এখতিয়ার অস্বীকার করে এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, তারা প্রায় দুই হাজার ঘটনার তদন্ত করছেন। এর মধ্যে বেসামরিক মৃত্যুর ঘটনাও রয়েছে। কিছু ঘটনা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দায়ের করা গণহত্যা মামলার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে।

বাইডেন ও পরে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের প্রচারণার সময় এই ইস্যু মার্কিন রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলেছিল। ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন বজায় রাখা নিয়ে ডেমোক্র্যাট শিবিরের ভেতর তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha