ভয়াবহ এ অপরাধযজ্ঞটি ইরানে তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশের সর্বশেষ ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে দায়েশ ইরানে পার্লামেন্ট ভবন এবং ইমাম খোমেনি (র)'র পবিত্র মাজারে হামলার পাশাপাশি আহভাজে সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজে হামলার দায় স্বীকার করেছিল।
অকাট্য প্রমাণ রয়েছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী দাম্ভিক শক্তিগুলো আঞ্চলিক মিত্র দেশগুলোর সহযোগিতায় তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসআইএল বা দায়েশ প্রতিষ্ঠা এবং তাদেরকে হৃষ্টপৃষ্ট করতে মুুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। ইরাক ও সিরিয়া এবং সর্বশেষ আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশের উত্থান ও বিস্তারে আমেরিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মোটকথা তাকফিরি এ গোষ্ঠীকে লালান পালন এবং তাদেরকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করার পেছনে ওয়াশিংটন যে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তার পক্ষে অনেক প্রমাণাদি এবং নথিপত্র রয়েছে। আসলে দায়েশ সৃষ্টিতে আমেরিকা তার ভূমিকার কথা অস্বীকার করতে পারবে না।
ইরাকের বাথ পার্টির অবশিষ্ট সদস্য এবং সালাফি ও তাকফিরিদের অংশগ্রহণে ইরাকে প্রথম আইএসআইএল বা দায়েশ গঠিত হয়েছিল। সালাফি এবং তাকফিরি সদস্যদেরকে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ইরাকে জড়ো করা হয়েছিল এবং দ্রুত ইরাক থেকে সিরিয়া পর্যন্ত তাদের কার্যক্রমের পরিধি বিস্তৃতি ঘটেছিল।
সিরিয়ার বৈধ সরকারকে উৎখাত করার পাশাপাশি আঞ্চলিক প্রতিরোধকামী শক্তিগুলোকে দুর্বল করার লক্ষ্যেই আমেরিকা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে ব্যাপক আর্থিক এবং সামরিক সহায়তা দিয়েছিল। আইএসআইএল গঠনে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সরাসরি ভূমিকা নিয়ে কথা বলেছেন সদ্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তার নির্বাচনী ভাষণে ট্রাম্প বলেছিলেন: তারা (ওবামা এবং ক্লিনটন) অসৎ মানুষ। তারা দায়েশ তৈরি করেছেন। ওবামা ও হিলারি ক্লিনটন দুজনে মিলে দায়েশ তৈরি করেছেন। দায়েশ গঠনে ও তাদের কর্মকাণ্ডে হোয়াইট হাউসের প্রত্যক্ষ ভূমিকা সম্পর্কে ট্রাম্পের বক্তব্য নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মতো বিশ্বের কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রনেতাদের অসংখ্য অভিযোগ প্রমাণ করে যে তাকফিরি এ গোষ্ঠীকে তৈরিতে ওয়াশিংটনই নিশ্চিত ভূমিকা পালন করেছে।
মজার ব্যাপার হল মার্কিন সংবাদ মাধ্যমগুলোও আমেরিকার সাথে দায়েশের সম্পর্ক ও সংযোগ থাকার বিষয়টি ফাঁস করেছে। আমেরিকার সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্ট ২০২১ সালের এপ্রিলে এক প্রতিবেদনে লিখেছিল যে আমেরিকান সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে প্রকাশিত নথিপত্র থেকে জানা গেছে যে দায়েশের কথিত খলিফা আবু ইব্রাহিম আল-কুরাইশি আগে একজন বন্দী এবং গুপ্তচর ছিলেন। তিনি ২০০৮ সালে ইরাকে গ্রেপ্তার হন এবং পরে ইরাকে মার্কিন বাহিনীর একজন তথ্যদাতা হন। পরিশেষে বলা যায় পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন আধিপত্যকামী শক্তিসহ ইহুদিবাদী ইসরাইলের আগ্রান প্রতিরোধে গঠিত প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলোকে মোকাবেলা ও দুর্বল করার লক্ষেই ওয়াশিংট তাকফিরি দায়েশ সৃষ্টি করেছিল। #