‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
শনিবার

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

৬:২৪:৫৬ PM
1396864

আগ্রাসী সৌদি জোটকে ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ নেতার পরামর্শ

ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ’র নেতা আগ্রাসী সৌদি জোটকে ইয়েমেনের উপর থেকে অবরোধ তুলে নিয়ে, শান্তি-চুক্তির লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন।

আহলে বাইত বার্তা সংস্থা (আবনা): ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ নেতা "সৈয়দ আব্দুল মালিক বদরুদ্বীন আল-হুথি" পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা.) উপলক্ষে প্রদত্ত এক ভাষণে, তাঁর নিজ দেশের গুরুত্বপূর্ণ  সামরিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতির প্রতি ইঙ্গিত করে, জাতীয় প্রতিরোধের বিষয়ে প্রশংসা ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন: নিজেদের ঈমানকে শক্তিশালী করতে এবং পবিত্র কুরআনের সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনে মিলাদুন্নবীর মত এই অনুষ্ঠানগুলির প্রভাবকে আমরা অবশ্যই কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। অতীতের তুলনায় বর্তমান সময়ের কঠিন পরিস্থিতিতে মুসলমানদের উচিত পবিত্র কোরআন ও মহানবীর (সা.) সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ককে আরও মজবুত করা।

আনসারুল্লাহ আন্দোলনের নেতা আরো বলেন: ইসলামের শত্রুদের অনুগত থাকতে যেয়ে মুসলিমরা আজ সবচেয়ে বড় বিপদের সম্মুখীন। ইসলামের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী-লবির আগ্রাসন এবং আমেরিকাসহ কিছু ইউরোপীয় দেশের সরাসরি পদক্ষেপ বর্তমান সময়ে অধিকতর সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তারা মুসলমানদের চিন্তা ও সাংস্কৃতিক বিষয়গুলোতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সৌদি আরবের মত অন্য দেশগুলির শিক্ষা ব্যবস্থায়ও তারা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী কুরআনের আয়াতের ব্যাখ্যা করতে চায়।

পশ্চিমাদের নৈতিক বিচ্যুতি ও অধপতনের কথা উল্লেখ করে হুথি নেতা বলেন: জায়োনিস্ট-লবি ও আমেরিকা ও ইসরাইলসহ  তাদের অপর অনুসারীদের নেতৃত্বে সমকামিতার প্রসারের ফলে পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

সাইয়্যেদ আব্দুল মালিক আল-হুথি বলেন: শত্রুর লক্ষ্য হল- সকল ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বে মুসলিম উম্মাহকে পনরুজ্জীবিত করতে এবং তাদের অগ্রণী ভূমিকা পুনরুদ্ধার করতে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালানো প্রয়োজন।

ইয়েমেনের আনসারুল্লাহর নেতা আরও বলেন, মহানবীর (সা.) জন্মবার্ষিকীতে এই আশা এতটাই শক্তিশালী হয়েছে যে, ইয়েমেনের জনগণ আত্নত্যাগের ক্ষেত্রে এবং নিজেদের ঈমান ভিত্তিক জীবন-যাপনে, আল্লাহর রাসূলকে (সা.) আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছে।

বিদেশী শত্রুদের হস্তক্ষেপের কারণে দশকের পর দশক ধরে সভ্যতা ধ্বংশ করার পাশাপাশি মানুষ অন্যায় ও অবিচারের শিকার হচ্ছে।

ইয়েমেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের লক্ষ্য হল- ইয়েমেনের মানবিক প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে বাধা প্রদান করা এবং আমাদের দেশকে জাতিসংঘ সনদের ৭নং অনুচ্ছেদের অধীনে আটকে রাখা। বর্তমান পরিস্থিতিতে ইয়েমেনের কিছু অংশ দখল করে শত্রুরা ইয়েমেনকে বিভক্ত করতে চাইছে। আমরা ইয়েমেনের জনগণের সর্বাত্নক অংশগ্রহণে গড়ে উঠা জাতীয় ঐক্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলতে চাই, এই ধরনের আগ্রাসন আমরা কখনই মেনে নেব না।

সাইয়্যেদ আব্দুল মালিক আল-হুথি আরো বলেন: ইয়েমেনে নতুন সরকার গঠনের পর, আমরা বিচার ব্যবস্থা সংস্কারের চেষ্টা করব এবং ইসলামী বিধি-বিধানে অভিজ্ঞদের নিয়ে আসার চেষ্টা করব।

তিনি আরো বলেন: দেশের জাতীয় সম্পদ কয়েক দশক ধরে লুটপাট করা হয়েছে এবং জনগণের সেবায় সেগুলো ব্যবহার করা হয়নি। কেবল উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ ও ধনী ব্যক্তিরা তা থেকে লাভবান হয়েছে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইথিওপিয়া এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে তারা সম্পত্তির পাহাড় গড়ে তুলেছে। এরাই সেই লোক যারা ইয়েমেনি জনগণের বর্তমান কঠিন পরিস্থিতিতে মায়া-কান্নার দরদ দেখাচ্ছে, অথচ তারা এখনও শত্রুদের কাতারে দাঁড়িয়ে। তাদের হাত ইয়েমেনি জনগণের রক্তে রঞ্জিত। তারা ইয়েমেনের বাড়িঘর, শহর ও গ্রাম ধ্বংসে সহায়তা করে যাচ্ছে।

কিছু লোক দেশের গৃহীত সমস্ত ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করছে এবং এমনকি আমাদের সামরিক বাহিনীর অর্জনগুলিও তারা না দেখার ভান করছে। ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী বর্তমান কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি, কঠিন নিষেধাজ্ঞার বোঝা মাথায় নিয়ে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকেও যে সামরিক শক্তি অর্জনে সক্ষম হয়েছে, তার ফলে শত্রুরা তাদের তেল উত্তলন প্রকল্পসহ সংবেদনশীল স্থাপনাগুলি রক্ষার ক্ষেত্রে ইয়েমেনি বাহিনীর আক্রমনের ভয়ে থাকে। এই দেশগুলির উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং প্যাট্রিয়টসহ ড্রোন- বিধ্বংসী ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও, ইয়েমেনি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের অনেক অভ্যন্তরে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে এবং কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে আঘাত হেনেছে।

আনসারুল্লাহর নেতা সৌদি পক্ষগুলোর সাথে তাঁর আলোচনার কথা উল্লেখ করে বলেন: যুদ্ধ, দখলদারিত্ব এবং অবরোধ অব্যাহত থাকলে কেবল আগ্রাসী জোটের বিপরীত ধারার প্রভাবই শক্তিশালী হবে; তাই ওমানের নেতৃত্বে চলা শান্তি-আলোচনার প্রচেষ্টায় তাদের সাড়া দেওয়া উচিত।

সাইয়্যেদ আব্দুল মালিক আল-হুথি ইয়েমেনের যুদ্ধ সম্পর্কিত বিষয়গুলি উল্লেখ করে বলেছেন: আমি আগ্রাসী জোটকে তাদের আগ্রাসন ও অবরোধ বন্ধ করে, আমাদের জনগণকে তাদের নিজ দেশের তেল ও গ্যাস সম্পদ থেকে লাভবান হওয়ার ক্ষেত্রে অবরোধ আরোপ না করার পরামর্শ দিচ্ছি। মানবাধিকার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে এসব আগ্রাসন বন্ধ করা প্রয়োজন।

পরিশেষে তিনি বলেন: আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থের পক্ষে সূদৃঢ় অবস্থানের উপর গুরুত্বারোপের পাশাপাশি, ইহুদিবাদী শত্রুর সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সব ধরণের প্রচেষ্টার নিন্দা জানাই এবং ফিলিস্তিনি জাতি ও মুজাহিদিনের প্রতিরোধ আন্দোলনের পক্ষে থাকার দৃঢ় অঙ্গিকার ব্যক্ত করছি।#176