‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
সোমবার

২৯ জানুয়ারী ২০২৪

৭:২৭:৫৬ PM
1433548

সাইয়্যেদ আব্দুল মালিক আল-হুথি;

মার্কিনীরাই জায়নবাদীদের অপরাধযজ্ঞের ধারাবাহিকতার কারণ/ ইয়েমেনের জনগণ গাজাকে নিঃসঙ্গ ত্যাগ করবে না

ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলনের নেতা বলেন, মার্কিনীরাই জায়নবাদী অপরাধযজ্ঞের ধারাবাহিকতা এবং গাজায় আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার জন্য দায়ী। ফিলিস্তিনিদের হত্যা করতে মার্কিনীরা শুধু বোমা সরবরাহ করেনি বরং ফিলিস্তিনি জনগণকে সরাসরি ক্ষুধায় মরতে সহযোগিতা করছে। গাজার জনগণের বিরুদ্ধে জায়নবাদীদের অপরাধযজ্ঞ পরিচালনা করতে আমেরিকা তার সেনা সদস্যদের পাঠিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আমেরিকানরাই জায়নবাদীদের ক্রমাগত অপরাধযজ্ঞ পরিচালনা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার কারণ।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): ইয়েমেনের আনাসরুল্লাহ আন্দোলনের নেতা বৃহস্পতিবার বিকালে ফিলিস্তিনের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে আলোচনা করেন।

ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলনের নেতা এক ভাষণে গাজা উপত্যকায় জায়নবাদী সরকারের হামলাকে সময় ও মাত্রার ভিত্তিতে আরব ও ইসরায়েলের সংঘাতের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে মনে করেন। গাজায় জায়নবাদী শত্রুর বর্বর আগ্রাসনে মুজাহিদদের অবিচলতা ও সাহসিকতা ছিল অতুলনীয়।

মার্কিনীরাই জায়নবাদীদের অপরাধযজ্ঞের ধারাবাহিকতার কারণ

সাইয়্যেদ আব্দুল মালিক বদরুদ্দীন আল-হুথি বলেন, মার্কিনীরাই জায়নবাদী অপরাধযজ্ঞের ধারাবাহিকতা এবং গাজায় আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার জন্য দায়ী। ফিলিস্তিনিদের মারতে মার্কিনীরা শুধু বোমা সরবরাহ করেনি বরং ফিলিস্তিনি জনগণকে সরাসরি ক্ষুধায় মরতে সহযোগিতা করছে। গাজার জনগণের বিরুদ্ধে জায়নবাদীদের অপরাধযজ্ঞ পরিচালনা করতে আমেরিকা তার সেনা সদস্যদের পাঠিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আমেরিকানরাই জায়নবাদীদের ক্রমাগত অপরাধযজ্ঞ পরিচালনা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার কারণ। জায়নবাদী সরকার আমেরিকার সহযোগিতা ও অংশগ্রহণে প্রজন্ম-হত্যায় (গণহত্যায়) লিপ্ত।

তিনি আরও বলেন, গাজা উপত্যকায় জায়নবাদী সরকারের হাজার হাজার সৈন্য নিহত ও আহত হয়েছে এবং জায়নবাদীরা ফিলিস্তিন ইস্যুকে শেষ করতে পারেনি। এছাড়াও জায়নবাদীরা প্রচুর আর্থিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। জায়নবাদী শত্রুরা তাদের প্রকাশ্য লক্ষ্য গাজা উপত্যকা দখল এবং জনগণ ও প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মনোবলকে ভাঙতে ব্যর্থ হয়েছে। গাজার জনগণ এই অপরাধযজ্ঞ এবং হামলায় মোকাবেলায় নজিরবিহীন প্রতিরোধ প্রদর্শন করেছে। এ পর্যন্ত যুদ্ধে ইসরাইলি বাহিনীর সহস্রাধিক সেনা নিহত ও আহত হয়েছে। এছাড়াও এই সরকার অত্যধিক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। গাজার জনগণ যতটা না কষ্ট পাচ্ছে, সে তুলনায় ইসরায়েলিদের কষ্ট অনেক বেশি।

ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী দুই-শতাধিক ড্রোন হামলা চালিয়েছে

ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলনের নেতা তার ভাষণে প্রতিরোধ ও যুদ্ধ অব্যাহত রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে। এখনো পর্যন্ত আমরা দুই-শতাধিক ড্রোন এবং অর্ধশতাধিক ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক হামলা চালিয়েছি। গাজার সকল অধিবাসীদের নিকট খাদ্য ও ঔষধ পৌঁছানো এবং জায়নবাদীদের অপরাধযজ্ঞ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অভিযান ও আক্রমণ অব্যাহত থাকবে।

তিনি উল্লেখ করেন, মার্কিনীদের জায়নবাদীদের অপরাধে সমর্থন জানানো এবং মানবিক দিকগুলি বিবেচনায় না নেয়া আমাদেরকে প্রভাবিত করবে না এবং কখনোই আমাদেরকে পিছু হটাতে পারবে না। আমাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে এবং আমাদের যুদ্ধ সম্পূর্ণরূপে গাজার সাথে সম্পৃক্ত, অথচ আমেরিকা ব্যাপক আকারে ধোঁকা দেয়ার পায়তারা করছে।

আনসারুল্লাহর নেতা বলেন, আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের নিকট খাদ্য সরবরাহের উদ্দেশ্যে প্রকাশ্যে ইসরায়েলের সাথে সম্পৃক্ত জাহাজগুলিকে টার্গেট করি। মার্কিন ও ব্রিটিশদের উত্তেজনা যতই বৃদ্ধি পাক না কেন, তার ফলাফল হিতের বিপরীত হবে এবং তা আমাদের অবস্থানকে প্রভাবিত করবে না। আমরা একটি পবিত্র কাজে নিযুক্ত রয়েছি। যেটিকে আমরা আল্লাহর পথে জিহাদের অংশ বলে মনে করি এবং তা আমাদের সামরিক সক্ষমতাকে প্রভাবিত করবে না, বরং আমরা সবসময় এর পরিধি বাড়ছে। আমরা সতর্কতার সাথে পদক্ষেপ নিচ্ছি। সামরিক ও যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা নতুন নই, এ ক্ষেত্রে আমরা অভিজ্ঞ। খরচের দিক থেকে আগ্রাসনের ফলাফল, পরিস্থিতির উত্তেজনা, সংঘাতের বিস্তার ও সামুদ্রিক নৌ চলাচলে হুমকি শত্রুদের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করবে। আমাদের দেশে হামলার শুরু থেকেই স্বয়ং আমেরিকান ও ব্রিটিশরাই সমস্যায় পড়েছে।

ফিলিস্তিনি জাতিকে সমর্থন করা ইসলামী উম্মাহর দায়িত্ব

সাইয়্যেদ আব্দুল মালিক আল-হুথি আরও বলেন, মার্কিনীরা লোহিত সাগর সমস্যা সমাধানের ন্যায্য পন্থা গ্রহণ করেনি, অর্থাৎ গাজায় খাদ্য ও ঔষধ প্রবেশের মাধ্যমে তা সমাপ্ত হতে পারতো। এই মার্কিন দাঙ্গা ও অপরাধ মোকাবেলা করা এবং ফিলিস্তিন জাতিকে সমর্থন করা মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব। ইয়েমেনি জাতির অবস্থান আমাদের মানবিক, নৈতিক ও ধর্মীয় কর্তব্য ও ঈমানী পরিচয় থেকে উদ্ভূত। লোহিত সাগরে সংঘাত হল জায়নবাদী সরকারের সমর্থনে মার্কিন অপরাধের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি জাতিকে সমর্থন করার যুদ্ধ।

তিনি গুরুত্বারোপ করে বলেন, গাজা উপত্যকায় যত সময় ধরে দখলদারিত্ব অব্যাহত থাকবে, আরও শক্তিশালী হয়ে এগিয়ে যেতে মুসলিম উম্মাহর কাঁধে আরও দায়িত্ব আরোপিত হবে। ইসরায়েলি ও মার্কিনীরা অপরাধ অব্যাহত রাখতে যতটা পীড়াপীড়ি করবে, আমাদেরকেও তাদের প্রতিরোধ করার বিষয়ে অধিক অবিচল এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞা হতে হবে। ইউরোপ, আমেরিকা এবং এমনকি অন্য পশ্চিমা দেশগুলোতেও বিক্ষোভ অব্যাহত রাখতে হবে। ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ঘৃণিত ও গর্হিত অপরাধযজ্ঞ বন্ধ করতে বিস্তৃত ও ক্রমবর্ধমান আন্দোলনের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। গাজায় আগ্রাসন বন্ধ করতে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধের অবসান ঘটাতে এমন গণআন্দোলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে সকল জনগণ তাদের সরকার কর্তৃক কঠোর দমন-পীড়নের শিকার হয়েছে, তারা আমেরিকান এবং ইসরায়েলি পণ্য বর্জনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।

আনসারুল্লাহর নেতা বলেন, ইয়েমেনের জনগণ গাজাকে নিঃসঙ্গ ত্যাগ করবে না এবং যা ঘটছে তা উপেক্ষা করে ঘরে বসে থাকবে না। গণবিক্ষোভে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ অব্যাহত থাকবে। আমি শুক্রবার রাজধানী সানার আল-সাবাইন চত্বর এবং বাকি প্রদেশগুলিতে জনসমাবেশ এবং বিক্ষোভের আহ্বান জানাচ্ছি।#176A