আবনা ডেস্ক: ২০২৪ সালের পবিত্র হজকে সামনে রেখে ইরানি হজ কাফেলা পরিচালনা ও হাজিদের তত্ত্বাবধানের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা আজ (সোমবার) তেহরানে ইমাম খোমেনী (রহ.) হোসাইনিয়াতে সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান।
এ সময় তিনি 'আল্লাহর স্মরণ' এবং 'মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ও যোগাযোগ'-কে হজের দু'টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক ও সামাজিক উপাদান হিসেবে উল্লেখ করেন। সর্বোচ্চ নেতা গাজা পরিস্থিতি এবং রক্তখেকো ইহুদিবাদী ইসরাইলের নৃশংস অপরাধযজ্ঞের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন,
এবারের হজে পবিত্র কোরআনের দিক-নির্দেশনা বাস্তবায়ন এবং হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর বরকতময় নামের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পাশাপাশি মুসলমানদের জঘন্য শত্রু দখলদার ইসরাইল ও তার সহযোগীদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ বা বারায়াতের ঘোষণা দিতে হবে।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী পবিত্র হজকে আধ্যাত্মিক ও বৈষয়িক দিক থেকে বহু মাত্রিক ফরজ দায়িত্ব হিসেবে তুলে ধরে বলেন, হজের সময় পবিত্র কাবা, মসজিদুল হারাম, তওয়াফ এবং মহানবী (সা.)-এর মাজার জিয়ারতের দিকে মন নিবিষ্ট করুন যা অন্য আর কোথাও পাবেন না। বাজার বা পণ্যতো সব জায়গাতেই আছে।
হজ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি আরও বলেন,
একটি নির্দিষ্ট স্থানে এবং নির্দিষ্ট দিন-তারিখে উপস্থিত থাকার জন্য সবার প্রতি আল্লাহর আহ্বানের পেছনে উদ্দেশ্য হলো মুসলমানেরা যাতে একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারে এবং একসঙ্গে চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে অভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এর মধ্যদিয়ে হজের বরকতময় ও বস্তুনিষ্ঠ ফলাফল সমগ্র মুসলিম বিশ্ব তথা গোটা মানবতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বর্তমানে অভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্ব বড় ধরণের সমস্যায় রয়েছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা মুসলমানদের মধ্যে জাতিগত, মাজহাবগত ও সম্প্রদায় কেন্দ্রিক পার্থক্যগুলোকে উপেক্ষা করার ওপর জোর দিয়ে বলেন,
ইসলামের সব মাজহাবের অনুসারীদের অভিন্ন সমাবেশ পবিত্র হজের সামাজিক ও রাজনৈতিক দিককে তুলে ধরে।
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী হজের বারায়াত অনুষ্ঠানের ওপর জোর দিয়ে বলেন,
হজরত ইব্রাহিম (আ.)'র দেওয়া শিক্ষা অনুযায়ী এবারের হজ হলো বারায়াত বা সম্পর্কচ্ছেদের হজ। এটা পশ্চিমা সভ্যতার ফসল রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ারের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ যা গাজায় চলমান অপরাধযজ্ঞে সুস্পষ্ট হয়েছে।
তিনি বলেন,
ইরানি বা অ-ইরানি যে যেখান থেকেই হজব্রত পালন করতে আসুক না কেন তাদের দায়িত্ব পবিত্র কুরআনের এই যুক্তি সমগ্র মুসলিম বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এটা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব। হজরত ইব্রাহিম (আ.)'র মতে, কাফেরদের মধ্যে যারা সহিংসতাকামী নয় তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে। কিন্তু যারা হত্যা করে এবং অন্যদেরকে নিজেদের ভিটে-মাটি থেকে বের করে দেয় তিনি তাদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেছেন। বর্তমানে এই শ্রেণীর মধ্যে কারা পড়ে? তারা হলো ইহুদিবাদী ইসরাইল, আমেরিকা এবং তাদের সহযোগীরা।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন,
যদি আমেরিকা সাহায্য না করত তাহলে কি ইহুদিবাদী ইসরাইল গাজায় নারী, পুরুষ ও শিশুদের প্রতি এমন নৃশংস আচরণ করার শক্তি-সাহস পেত? খুনি ও খুনির পৃষ্ঠপোষকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা সম্ভব নয়। যারাই তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে তারা জালিম।
গাজা তথা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সবার সহযোগিতার হাত বাড়ানো উচিত বলে মন্তব্য করে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, ফিলিস্তিনের এখন সমর্থন ও সহযোগিতা প্রয়োজন। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান এই ইস্যুতে কারো অপেক্ষায় বসে থাকেনি এবং ভবিষ্যতেও বসে থাকবে না। তবে বিশ্বের মুসলিম সরকার ও জাতিগুলো যদি শক্তভাবে হাত বাড়িয়ে দিত তাহলে এর প্রভাব হবে অনেক বেশি। এটা সবার দায়িত্ব।