আল-আকসা তুফান অভিযান শুরু হওয়ার পর লেবাননের হিজবুল্লাহ তার ভাণ্ডারে থাকা নিখুঁত সমরাস্ত্র দিয়ে ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে হামলা শুরু করে। এই হামলার ফলে উত্তর ইসরাইলের বিস্তীর্ণ এলাকার অধিবাসীরা তাদের ঘরবাড়ি ফেলে দক্ষিণ দিকে পালিয়ে যায়। ইসরাইলি গণমাধ্যম পালিয়ে যাওয়া ইহুদিবাদীর সংখ্যা ৬০ হাজার বলে উল্লেখ করলেও প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি বলে মনে করা হয়। কার্যত লেবানন সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে হিজবুল্লাহর হামলায় ইসরাইলি বাহিনী অসহায় হয়ে পড়ে এবং বিষয়টি ইহুদিবাদী কর্মকর্তাদের মারাত্মকভাবে ভাবিয়ে তোলে।
পার্সটুডের রিপোর্ট অনুসারে, ইসরাইলি দৈনিক হারেতজ ‘লেবাননের সঙ্গে যুদ্ধের ফলাফল সম্পূর্ণ পরাজয়’ শিরোনামের এক সংবাদ বিশ্লেষণে লিখেছে: লেবাননের বিরুদ্ধে ব্যাপকভিত্তিক যুদ্ধ শুরু করলে বিশেষ করে দেশটির বিরুদ্ধে স্থল অভিযান চালালে ইসরাইল ভয়াবহ পরাজয়ের সম্মুখীন হবে।
লেবাননে ব্যাপকভিত্তিক হামলা চালিয়ে মূলত দক্ষিণ লেবানন দখল করতে চায় ইসরাইল। এর মাধ্যমে তেল আবিব দক্ষিণ লেবানন থেকে হিজবুল্লাহকে উৎখাত করার বাসনা পোষণ করে। কিন্তু দৈনিক হারেতজ লিখেছে, ইসরাইলি বাহিনীর এই কাজ করার সামর্থ্য নেই। এটির সংবাদ বিশ্লেষণে বলা হয়েছে: ইসরাইলের পক্ষে লিতানি নদী পর্যন্ত দক্ষিণ লেবানন দখল করা সম্ভব নয়। ইসরাইলি সেনারা বড়জোর যেটি করতে পারে সেটি হচ্ছে, সীমান্তে সীমিত আকারে এতটুকু অভিযান পরিচালনা করা যাতে উত্তর ইসরাইল থেকে যারা দক্ষিণ দিকে পালিয়ে গেছে তারা তাদের ঘরবাড়িতে ফিরতে নিরাপদ বোধ করে।
লেবানন সীমান্তবর্তী পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত জটিল’ আখ্যায়িত করে ইহুদিবাদী পত্রিকাটি লিখেছে: এমনকি সেরকম কোনো সীমিত পর্যায়ের অভিযানের ফলেও উত্তেজনা ভয়ানকভাবে বেড়ে যেতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
দৈনিক হারেতজ আরো লিখেছে: ইসরাইলের সামরিক পদক্ষেপের যে জবাব হিজবুল্লাহ দেবে তাতে যুদ্ধ আর অল্প পর্যায়ে সীমিত থাকবে না বরং ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। সেক্ষেত্রে ইসরাইলের কৌশলগত অবকাঠামোতে হিজবুল্লাহর হামলা হবে এবং যুদ্ধের প্রথম ধাক্কায় ইসরাইলের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।
এদিকে আরেক ইসরাইলি দৈনিক ইয়াদিওত আহারোনোত লিখেছে: লেবাননের হিজবুল্লাহর কাছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সামরিক সরঞ্জাম ও অত্যন্ত বিপজ্জনক সামরিক প্রযুক্তি রয়েছে। লেবানন সীমান্ত দিয়ে ইসরাইলে নির্বিঘ্নে শত শত ড্রোনের ঢুকে পড়ার ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে, ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এসব ড্রোন মোকাবিলা করতে সক্ষম নয়।
দৈনিক ইয়াদিওত আহারোনোত আরো লিখেছে, হিজবুল্লাহর এই হুমকি মোকাবিলা করার উপায় খুঁজে বের করার জন্য ইসরাইলি বাহিনী মরিয়া হয়ে উঠেছে। ইসরাইলি সমরবিদরাও এখন একথা বলতে শুরু করেছেন যে, লেবাননের হিজবুল্লাহ একাই ইসরাইলের গোটা সামরিক শক্তির অর্ধেককে উত্তর ইসরাইলে আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছে; যে কারণে এই বাহিনী দক্ষিণের গাজা ফ্রন্টে সঠিকভাবে মনযোগ দিতে পারছে না। #