আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): গত বসন্তে গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এ আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার, প্রবেশন ও ডিগ্রি বাতিলসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা আটটি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গঠিত গ্রুপ ‘আইভি লীগের’ একটি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পরই গাজা যুদ্ধ নিয়ে ক্যাম্পাসে হওয়া আন্দোলন প্রতিহত করতে না পারার অজুহাতে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ৪০০ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল স্থগিত করে প্রশাসন।
সম্প্রতি এই তহবিল ফেরাতে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে কলাম্বিয়া প্রশাসন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শৃঙ্খলাবিষয়ক প্রক্রিয়া পুনর্গঠন ও ইহুদিবিদ্বেষের নতুন সংজ্ঞা গ্রহণকরাসহ প্রশাসনের বেশ কয়েকটি দাবিতে সম্মতি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি জানিয়েছে, ‘একটি সমৃদ্ধ অ্যাকাডেমিক পরিবেশ গড়ে তুলতে পরস্পরের প্রতি এবং প্রতিষ্ঠানের মৌলিক কাজ, নীতিমালা ও নিয়মকানুনের প্রতি সম্মান থাকা আবশ্যক। অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটানো বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা ও নিয়মের লঙ্ঘন, এবং এমন লঙ্ঘনের জন্য অবশ্যই পরিণতি ভোগ করতে হবে।’
ওই বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিচারিক বোর্ডের মাধ্যমে আরোপিত শাস্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রবেশন, ডিগ্রি বাতিলসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা। তবে যেসব শিক্ষার্থীদের এই শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে তাদের পরিচয় প্রকাশ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর আগে মে মাসে তারা জানিয়েছিল, অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ১৮০ জন কর্মী ছাঁটাই করবে এই বিশ্ববিদ্যালয়। একইসঙ্গে গবেষণার পরিসরও সীমিত করবে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের একটি অধিকার-সংগঠন থেকে জানানো হয়েছে, আন্দোলনে অংশ নেওয়ার দায়ে প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থীকে ১-৩ বছরের জন্য বহিষ্কার বা তাদের স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আগের যেকোনো আন্দোলনের শাস্তির নজিরকে ছাড়িয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছে সংগঠনটি। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসতে হলে তাদের ক্ষমা চাইতে হবে, নাহলে তাদের স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের মুখে পড়তে হবে। তবে অনেকেই এটি করতে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন বলে মনে করছে তারা।
এর আগে, গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে সংঘঠিত বিক্ষোভে জড়িত থাকার কারণে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তার করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) কর্মকর্তারা। বিষয়টি নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়।
ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে ফিরেই অঙ্গীকার করেছিলেন, গত বছর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিপন্থি প্রতিবাদী আন্দোলনে জড়িত কিছু বিদেশি শিক্ষার্থীকে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেবেন। এই আন্দোলনকে তিনি ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে অভিহিত করেন।
ট্রাম্পের মতে, গাজার ক্ষমতায় থাকা ‘সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসকে’ সমর্থন করে ওই শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অধিকার হারিয়েছেন। তবে ট্রাম্পের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছেন, তারা কেবল যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। এমনকি তাদের সঙ্গে কিছু ইহুদি শিক্ষার্থী ও তাদের কয়েকটি সংগঠনও ছিল।
Your Comment