আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): রয়টার্স এবং ইপসসের সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮ শতাংশ বাসিন্দা মনে করেন, জাতিসংঘের সব সদস্য দেশগুলোকে উচিত ফিলিস্তিনকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। অন্যদিকে ৩৩ শতাংশ মানুষ এই ধারণার বিরোধিতা করেছেন এবং নয় শতাংশ কোনো উত্তর দিতে রাজি হননি। অনলাইনে ছয়দিন ধরে চলা এই জরিপে চার হাজার ৪৪৬ জন অংশ নিয়েছেন।
জরিপের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডেমোক্র্যাট পার্টির সমর্থকদের মধ্যে ৭৮ শতাংশ এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির ৪১ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সহানুভূতির কথা জানিয়েছেন।
নিউইয়র্ক শহরে অনুষ্ঠিত ‘গাজাকে অনাহারে রাখা বন্ধ কর’ শীর্ষক বিক্ষোভে মার্কিন নাগরিকদের সতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা গেছে। হাজার হাজার মানুষ প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে গাজাবাসীর জন্য ন্যায্য অধিকার ও মানবিক সহায়তার দাবি জানান। এই জনসচেতনতা শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনে নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধির প্রমাণ দিচ্ছে।
ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। প্রতি বছর ইহুদি রাষ্ট্রটিকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে আসছে ওয়াশিংটন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জনমতের পরিবর্তন ইসরায়েলের জন্য উদ্বেগের কারণ। জরিপে দেখা গেছে, ৫৯ শতাংশ মার্কিনি বিশ্বাস করেন ইসরায়েল গাজায় অতিরিক্ত সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। এছাড়া প্রায় ৬৫ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
মারজোরি টেইলর গ্রিনি, যিনি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ এবং উগ্র ডানপন্থি হিসেবে পরিচিত, মার্কিন কংগ্রেসে গাজার পরিস্থিতিকে ‘গণহত্যা’ বলে উল্লেখ করেছেন। যদিও রিপাবলিকানদের মধ্যে এই ধরনের সমালোচনা কম, তবু অনেক নেতা প্রকাশ্যে ইসরায়েলের সমালোচনা করছেন। ডেমোক্র্যাটদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চাপের কারণে রিপাবলিকান পার্টিতেও ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড নিয়ে ভিন্ন মত তৈরি হচ্ছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী স্লোগান ছিল ‘আমেরিকা ফার্স্ট’। অনেক মার্কিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও এই নীতি প্রাধান্য পেতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সহায়তা মূলত মার্কিন নাগরিকের ভাগ্য উন্নয়নে ব্যয় হওয়া উচিত। ফলে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি, গাজার মানবিক সংকটের দিকে জনমতের দৃষ্টি, এবং আন্তর্জাতিক চাপ—এই সব মিলিয়ে ইসরায়েলের কূটনৈতিক ও সামরিক অবস্থানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ফিলিস্তিনিদের প্রতি জনমতের পরিবর্তন শুধু ওয়াশিংটনের নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের নজরেও এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র যদি জনমতের এই পরিবর্তনকে তার পররাষ্ট্রনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করে, তাহলে ইসরায়েলের ওপর প্রভাব পড়তে বাধ্য। কারণ, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রই ইসরায়েলকে সবচেয়ে বেশি সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা প্রদান করে।
জনমতের পরিবর্তন, বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধির ঘটনা, ইসরায়েলের জন্য এক ধরনের দুঃসংবাদ। নিউইয়র্কের সমাবেশ থেকে শুরু করে জরিপে প্রকাশিত ডেটা—সব মিলিয়ে দেখাচ্ছে, মার্কিন মুল্লুকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি বাড়ছে। আন্তর্জাতিক চাপ, পার্টি ভিত্তিক মতানৈক্য এবং জনমতের এই পরিবর্তন ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে।
Your Comment