আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): ১৯৯৪ সালের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের নজির অনেক। ২০০৬-০৭ সালের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের সময় যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও জাতিসংঘের কূটনীতিকরা সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন।
তখনকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস, ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী এবং জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি রেনাটা লক ডেসালিয়ান বিভিন্ন বৈঠকের মাধ্যমে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
উইকিলিকসে প্রকাশিত তারবার্তা থেকে জানা যায়, তখন ঢাকায় নিযুক্ত পশ্চিমা কূটনীতিকরা ‘কফি গ্রুপ’ বৈঠক করতেন, যেখানে বাংলাদেশের রাজনীতি পর্যালোচনা হতো।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি জ্যাকবসন লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এছাড়া, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস ও জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই বৈঠকগুলো কেবল মানবাধিকার সংক্রান্ত নয়, বরং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের সূক্ষ্ম রূপ।
সাবেক মার্কিন কূটনীতিক জন ড্যানিলোভিচ বলেন, ‘‘২০০৭-০৮ সালে সেনাসমর্থিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা কূটনীতিকরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তবে জনগণের স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মন্তব্য করেছেন, ‘‘সাম্প্রতিক কালে বিদেশি কূটনীতিকরা কেবল পর্যবেক্ষণ নয়, দেশীয় রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছেন। রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থে তা গ্রহণ করছেন, যা উদ্বেগের বিষয়।’’
এছাড়াও, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২০০৯-২০১৩ সালের বিএনপি-আওয়ামী লীগ দ্বন্দ্বের সময় ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘ কর্মকর্তা রাজনৈতিক সমঝোতার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হলেও দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও শান্তিরক্ষা মিশনের ওপর প্রভাব ফেলেছিল।
বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, ‘‘যদি কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ বৃদ্ধি পায়, তবে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ঝুঁকিতে পড়তে পারে।’’ তারা মনে করেন, বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসন ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি সমস্ত কূটনীতিকের শ্রদ্ধা থাকা উচিত।
Your Comment