আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): গাজায় মানবিক ত্রাণবাহী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর বাধা, গ্রেফতারের প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। এ সময় তারা নৌবহরের গ্রেফতার মানবাধিকারকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানায়। সমাবেশে তারা স্লোগান দেয়, ‘ফ্লোটিলা রক্ষা করো—ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো।’
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এসব কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
বায়তুল মোকাররমে জামায়াতের বিক্ষোভ
শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিলও বের করা হয়। এতে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সাধারণ মুসল্লিরা অংশ নেন।
মিছিল-পূর্ব সমাবেশে জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা বক্তব্য রাখেন। বক্তারা জরুরি ত্রাণ-সহায়তা নিয়ে গাজা অভিমুখে যাওয়ার পথে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র গ্রেফতার করা ক্রু এবং নৌবহরটিতে থাকা মানবাধিকারকর্মীদের মুক্তির দাবি জানান।
একই স্থান থেকে বৈষম্যবিরোধী কওমি ছাত্র আন্দোলনও বিক্ষোভ মিছিল করে। তারাও মিছিল থেকে ইসরায়েলবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান ও বক্তব্য রাখেন। তারা জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে মানবিক সহায়তাকারী ত্রাণবাহী নৌকাগুলোকে গাজাবাসীর কাছে যেতে দিতে হবে এবং আটক মানবাধিকারকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে।
মানিক মিয়ায় বিভিন্ন যুব সংগঠনের কর্মসূচি
শুক্রবার বিকালে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ সিনার্জি অ্যালায়েন্স’। এতে যোগ দেয় মানবাধিকার, পরিবেশ, নারী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, ক্রীড়া ও স্বেচ্ছাসেবীসহ নানা অঙ্গনের ৭০টি সংগঠনের কর্মী ও সাধারণ মানুষরা।
‘ফ্লোটিলা রক্ষা করো—ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো’ স্লোগানে মুখর এই বিক্ষোভ সংসদ ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। বক্তারা বলেন, ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা ছিল একটি শান্তিপূর্ণ মানবিক উদ্যোগ, অথচ ইসরায়েলের হামলা ও মানবাধিকারকর্মীদের গ্রেফতার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল।’
বিক্ষোভকারীরা পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হচ্ছে—১. গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার সুরক্ষা নিশ্চিত করা। ২. আটক স্বেচ্ছাসেবক ও মানবাধিকারকর্মীদের মুক্তি দেওয়া। ৩. ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা উদ্যোগ গ্রহণ। ৪. ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ ও ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়া। ৫. আইডিএফকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা।
শাহবাগে ফিলিস্তিন সংহতি কমিটির সমাবেশ
‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ আটক করার প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে ফিলিস্তিন সংহতি কমিটি। আজ শুক্রবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশের আয়োজন করে তারা। এতে বক্তব্য রাখেন লেখক কল্লোল মোস্তফা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুব হোসেন, লেখক ও গবেষক চৌধুরী মুফাদ আহমেদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তারসহ অনেকে।
বক্তারা বলেন, ‘আজ সারা বিশ্বে ইহুদিরা রাস্তায় নেমে এসেছে গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে। তার মানে এটা কোনোভাবেই মুসলমান আর ইহুদিদের যুদ্ধ নয়। ইহুদিদের ভেতরে মানবতা আছে এবং তারাও গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।’
শ্রমিক সংগঠনের সমাবেশ
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জাহাজ থেকে আটক মানবাধিকারকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি এবং সুমুদ ফ্লোটিলার প্রতি বাংলাদেশের শ্রমজীবীদের সংহতি জানিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে দেশের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) এই প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ সমাবেশে বলেন, ‘বাংলাদেশসহ ৪৪টি দেশের ৫০০ মানবাধিকারকর্মী সুমুদ ফ্লোটিলা যাত্রায় অংশগ্রহণ করেছেন। অত্যন্ত সুশৃঙ্খল এবং আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার বিধিমালা মেনে মানবাধিকারকর্মীরা গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের প্রধানদের সব নিবেদন উপেক্ষা করে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বহরের জাহাজগুলো অপহরণ করেছে। মানবাধিকারকর্মীদেরও গ্রেফতার করেছে।’
তিনি বলেন, ‘জাহাজগুলোতে নেতৃত্বদানকারী তরুণ মানবাধিকারকর্মী, পরিবেশকর্মীসহ বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন মানবাধিকারকর্মী ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। তাদের মধ্যে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’
সৈয়দ সুলতান আরও বলেন, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন যেখানেই হবে, আমরা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করবো—এটাই হচ্ছে আমাদের অঙ্গীকার। কলোম্বিয়ার একজন নাগরিক ফ্লোটিলায় ছিলেন এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ জন্য কলোম্বিয়া তার ইসরায়েলি দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে এবং চুক্তি ও ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে।
আমাদের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই—অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে মিলে প্রতিবাদ এবং প্রতিক্রিয়া জানানোর ব্যবস্থা করা হোক—যাতে সবাইকে মুক্ত করে নিয়ে আসা যায়।’
প্রসঙ্গত, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা ইতালি থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর গাজা অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। তখন ৪৪টি জাহাজে সাংবাদিক, চিকিৎসক, সংসদ সদস্য ও মানবিক কর্মীসহ প্রায় ৪৫০ জন অংশ নেন। তবে ২ অক্টোবর ইসরায়েলের নৌবাহিনী প্রায় সব জাহাজ দখল এবং শতাধিক কর্মীকে আটক করে।
Your Comment