১২ অক্টোবর ২০২৫ - ১৫:৪৪
‘আমরা খুশি, ধ্বংসস্তূপের ওপর হলেও নিজের জায়গায় ফিরতে পারছি’

গাজার সবচেয়ে বড় শহর গাজা সিটির দিকে রওনা হয়-যে নগরীটি মাত্র কয়েক দিন আগেও ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযানের টার্গেট ছিল।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান এলাকায় দাঁড়িয়ে ৪০ বছর বয়সী ইসমাইল জায়েদা বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ, আমার বাড়িটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু চারপাশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত, আমার প্রতিবেশীদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে, গোটা অঞ্চল মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।’


ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। ইসরায়েলি সরকার শুক্রবার ভোরে হামাসের সঙ্গে এই চুক্তি অনুমোদন করে, যা সেনা প্রত্যাহার ও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজায় সব সামরিক অভিযান স্থগিতের পথ তৈরি করে। চুক্তি অনুযায়ী, হামাস ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে।


এর পর ইসরায়েল মুক্তি দেবে ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে, যারা দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড ভোগ করছেন এবং যুদ্ধ চলাকালে গাজা থেকে আটক আরো এক হাজার ৭০০ জনকে।


চুক্তি কার্যকর হলে খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রীবাহী ট্রাকগুলো গাজায় ঢুকবে, যেখানে লক্ষাধিক মানুষ গত দুই বছর ধরে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় করা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে ইসরায়েলি সেনারা গাজার কিছু প্রধান নগর এলাকা থেকে সরে যাবে, তবে উপত্যকার প্রায় অর্ধেক অংশের ওপর তারা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে।


টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলে, ‘যদি এটি সহজ উপায়ে সম্ভব হয়, তাহলে ভালো। আর যদি না হয়, তাহলে কঠিন উপায়েও তা অর্জন করা হবে।’ 


দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসে, পূর্ব সীমান্তের কাছ থেকে কিছু ইসরায়েলি সেনা সরে গেলেও এখনো ট্যাংকের গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে বলে বাসিন্দারা রয়টার্সকে জানিয়েছে।


কেন্দ্রীয় গাজার নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে, কিছু সেনা তাদের অবস্থান সরিয়ে সীমান্তের দিকে চলে গেলেও শুক্রবার ভোরে গুলিবর্ষণের শব্দ পাওয়া যায় এবং অন্য সেনারা এলাকায় থেকে যায়। ইসরায়েলি সেনারা গাজা সিটির উপকূলীয় সড়ক থেকেও সরে গেছে।


৪০ বছর বয়সী বাসিন্দা মাহদি সাকলা বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির খবর শুনেই আমরা আনন্দে গাজা সিটির পথে রওনা হয়েছি। যদিও ঘরবাড়ি বলে কিছু নেই-সব ধ্বংস হয়ে গেছে। তবু আমরা খুশি, কারণ ধ্বংসস্তূপের ওপর হলেও আমরা নিজের জায়গায় ফিরতে পারছি। দুই বছর ধরে ঘরছাড়া হয়ে ঘুরেছি, এখন অন্তত ফিরে যাচ্ছি।’


নির্বাসিত অবস্থায় থাকা হামাস নেতা খালিল আল-হাইয়া বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর কাছ থেকে নিশ্চিত আশ্বাস পেয়েছেন যে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটেছে।


গাজায় এখনো ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মি জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে, ২৬ জনের মৃত্যু নিশ্চিত এবং দু’জনের ভাগ্য অজানা। হামাস ইঙ্গিত দিয়েছে, নিহতদের মরদেহ উদ্ধারে জীবিতদের মুক্তির চেয়ে বেশি সময় লাগতে পারে।


হামাস পরিচালিত গাজা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা যেসব এলাকা থেকে সরে যাচ্ছে সেখানে তাদের নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হবে। তবে আগের যুদ্ধবিরতির মতো এবারও যোদ্ধারা রাস্তায় ফিরবে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়-কারণ ইসরায়েল তা উসকানি হিসেবে দেখতে পারে।


ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছে, সে রবিবার মধ্যপ্রাচ্যে যাবেন, সম্ভবত মিশরে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। ইসরায়েলি পার্লামেন্টের স্পিকার আমির ওহানা তাকে কনেসেটে (সংসদে) ভাষণ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha