আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): মুড়ালীতে এ ইমামবাড়াটি তৈরি করেন হাঝি মন্নুজান খানম যিনি সম্পর্কে হাজি মোহাম্মদ মহসীনের বৈপিত্রেয়ী বোন ছিলেন। ১৭শ শতকের শেষের দিকে মন্নুজান এ অঞ্চলের সম্পত্তিগুলো পৈতৃক সূত্রে পেয়েছিলেন। পরবর্তিতে নবাব সিরাজউদদৌলা পরাজিত হলে মন্নুজান ও তার স্বামী সৈয়দপুর অঞ্চলে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন কিন্তু ১৭৬৪ সালে মন্নুজানের স্বামী মৃত্যুবরণ করেন ও পুরো সম্পত্তির মালিক হন মন্নুজান।
১৮০২ সালে তিনি মুড়ালীতে অন্যান্য স্থাপনার সাথে এই ইমামবাড়াটিও নির্মাণ করেন। ১৮০৩ সালে মন্নুজান মৃত্যুর পূর্বে এই ইমামবাড়াসহ তার সব সম্পত্তি হাজি মোহাম্মদ মহসীনকে দিয়ে দেন। ১৯শে মার্চ ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এ ইমামবাড়াটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। হাজি মোহাম্মদ মহসীনের ওসিয়ত অনুযায়ী তার রেখে যাওয়া সম্পদের এক তৃতীয়াংশ মহররমের শোক অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত করা ছিল।
আয়তাকার আকৃতির মুড়ালী ইমামবাড়াটি সভাকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এর মোট আয়তন উত্তর ও দক্ষিণে ১৮.২৯ মিটার এবং পূর্ব থেকে পশ্চিমে ১৫.২৪ মিটার। পুরো কাঠামোটি দশটি স্তম্ভের উপর ভিত্ত করে তৈরি করা হয়েছে যা ৩টি সাড়িতে বিভক্ত।
বাংলাদেশের অন্যতম একটি পুরাকীর্তি মুড়ালী ইমামবাড়া মূলত আহলে বাইত (আ.)-এর প্রেমিক ও শিয়াদের ইমামবাড়া বলে পরিচিত। আহলে বাইত (আ.)-এর বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, মিলাদ মাহফিল বা আযাদারীর জন্য তাঁদের প্রেমিকগণ এই স্থানে একত্রিত হন।
মহররম মাসের শুরু থেকেই এখানে প্রতি নিয়ত মজলিসের আয়োজন করা হয় এবং পবিত্র আশুরার দিনে আযাদারী, শোক মজলিস, শোক র্যালিও করে থাকেন আহলে বাইত (আ.)-এর অনুসারীরা।
ইমামবাড়াতে প্রতি সপ্তাহে মুমিনিনদের উপস্থিতিতে জুমার নামায আদায় করা হয়। পবিত্র রমজান মাসের প্রতিনিয়ত অনুষ্ঠান এবং বিশেষত শবে ক্বদরের আমল হয়ে থাকে। এছাড়া মুমিনিনদের জন্য ইতেকাফেরও ব্যবস্থা করা হয়।
ইমামবাড়ার পাশে অবস্থিত রয়েছে একটি কবরেস্তান, যা শিয়াদের কবরেস্তান নামে পরিচিত। এই কবরস্থানে যশোরের প্রিয়জনেরা চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন; সেই মহান মানুষ, মহৎ আত্মারা, যারা এই ইমামবাড়ি ও কবরস্থানের পবিত্র ভূমি রক্ষায় অপরিসীম পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের স্মৃতি চিরকাল অমলিন থাকুক।
Your Comment