‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
শনিবার

৭ ডিসেম্বর ২০২৪

৬:৫৭:২৭ PM
1511800

আলেপ্পোতে ইসরাইলের সন্ত্রাসবাদ এবং প্রতিরোধ অক্ষে সিরিয়ার ভূমিকা

পার্সটুডে: ইহুদিবাদী ইসরাইল লেবাননে যুদ্ধ বন্ধ করে গত ২৭ নভেম্বর যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার পর দক্ষিণ লেবানন এবং অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা অবশেষে তাদের বাড়িঘরে ফিরে যেতে সক্ষম হয়েছিল।

যাইহোক উচ্চা মাত্রার নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে কিছু সীমান্ত গ্রাম ও শহরকে অত্যন্ত  ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে এখনো বলবৎ রাখা হয়েছে এবং সেখানে প্রবেশের ওপর এখনো নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইসরাইলি সৈন্যরাও প্রমাণ করেছে যে তারা সত্যিই যুদ্ধবিরতি মানে না।

এদিকে লেবাননে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিম আলেপ্পোতে সহিংসতার বৃদ্ধি যেখানে সিরিয়ান আরব আর্মি (এসএএ) ইসরাইল-সমর্থিত তাকফিরি সন্ত্রাসীদের সাথে লড়াই করছে। মূলধারার গণমাধ্যমে এই দলগুলোকে ভুলভাবে "সিরিয়ান বিদ্রোহী" হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো যারা হায়াত তাহরির আল-শামের ছত্রছায়ায় কাজ করে তারা ইসরাইলি সরকার এবং পশ্চিমা শক্তি দ্বারা সমর্থিত এবং একটি বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করছে।

ইহুদিবাদী ইসরাইল দক্ষিণ লেবাননে টানা ৭০ দিন আগ্রাসন চালিয়েও তারা লেবাননের ভূখন্ডে অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হয় নি এবং এ ক্ষেত্রে তাদের লজ্জাজনক পরাজয় ঘটেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ইসরাইলি সরকারকে তার কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছিল।

ইসরাইল তার হারানো বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করার জন্য এখন অবৈধ শাসক গোষ্ঠী লেবাননের প্রতিরোধের জন্য অত্যাবশ্যক অস্ত্র সরবরাহের চেইনগুলোকে ব্যাহত করতে যুদ্ধের নতুন ফ্রন্ট খুলতে চাইছে।

ইহুদিবাদী শাসকের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদকে সরাসরি সতর্ক করার পর সংঘর্ষের এই বৃদ্ধি ঘটে। তিনি আসাদকে বলেছিলেন যে তুমি আগুন নিয়ে খেলছ।

নেতানিয়াহুর এই বিবৃতি যেটি লেবাননে যুদ্ধবিরতি এবং হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে পরাজয় মেনে নেওয়ার পর দেয়া হয়েছিল প্রতিরোধ অক্ষকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে সরাসরি নির্দেশ করে।

প্রতিরোধ অক্ষে সিরিয়ার ভূমিকা

সিরিয়া প্রতিরোধ অক্ষকে শক্তিশালী করতে একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে এবং হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোর মূল সমর্থক হিসেবে কাজ করে আসছে। এই সহায়তার মধ্যে অস্ত্র ও সম্পদ হস্তান্তরের সুবিধা অন্তর্ভুক্ত।

তার লজিস্টিক ভূমিকা ছাড়াও সিরিয়া আলেপ্পো শহরে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কেন্দ্রগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে যার মাধ্যমে বৃহত্তর প্রতিরোধ নেটওয়ার্কের কৌশলগত গুরুত্ব নির্দেশ করে। পশ্চিমা-সমর্থিত প্রক্সি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সিরিয়াও একটি ফ্রন্টলাইন দেশ। এই প্রক্সি বাহিনীর লক্ষ্য আলেপ্পোকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং দামেস্কে বাশার আল-আসাদের নির্বাচিত সরকারকে দুর্বল করা।

একটি লজিস্টিক হাব হিসাবে সিরিয়ার দ্বৈত ভূমিকা এবং অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার বিদেশী প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করার জন্য দামেস্ক সরকারের প্রতিরোধকামীতা সবার প্রতিরোধ অক্ষের মাঝে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করেছে।

সিরিয়ার অস্ত্র ডিপো যার মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত অস্ত্রের পাশাপাশি অন্যান্য দেশ থেকে সংগ্রহ করা অস্ত্র রয়েছে সেগুলো লেবাননে হিজবুল্লাহর কার্যক্রমকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

সিরিয়ার সামরিক অবকাঠামোতে হামলা

গত দশকে সিরিয়ার গবেষণা এবং বৈজ্ঞানিক কেন্দ্রগুলো অত্যাধুনিক অস্ত্রের তৈরির কাজে নিয়োজিত থাকায় এগুলো শত্রুদের দ্বারা বারবার আক্রমণ করা হয়েছে। এই আক্রমণগুলোর মধ্যে রয়েছে কৌশলগত স্থানগুলোতে বিমান বোমাবর্ষণ এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যা। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই আক্রমণগুলো তীব্র হয়েছে এবং সিরিয়ার সামরিক অবকাঠামো এবং প্রতিরোধ অক্ষে এর ভূমিকাকে দুর্বল করার ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দেয়।

সিরিয়া সরাসরি যুদ্ধে নামল না কেন?

সিরিয়া যে কারণে ইহুদিবাদী শাসকের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে নামেনি তার জটিল অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক বাস্তবতার দিকে তাকালে তা আমাদের কাছে স্পষ্ট হবে। সিরিয়া তার সীমানার মধ্যে সন্ত্রাসী বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতের কারণে সে হিজবুল্লাহ বা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর সাথে সরাসরি যুদ্ধে প্রবেশ করতে অস্বীকার করে। যাইহোক, এটি প্রতিরোধের ফ্রন্টে অস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী হিসাবে কাজ করে চলেছে।

উদাহরণস্বরূপ হিজবুল্লাহ ইসরাইলের তেল নফ বিমান ঘাঁটি লক্ষ্য করে সিরিয়ার খাইবার-১ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার একটি পরিবর্তিত সংস্করণ ব্যবহার করেছিল যা ফাদি-৬ নামে পরিচিত। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ২২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত।

সিরিয়ায় ইসরাইলের প্রচেষ্টা (২০২২-২০২৪)

২০২২ এবং ২০২৪ সালের মধ্যে সিরিয়ায় ইসরাইলের সামরিক অভিযানগুলো মূলত দেশটির প্রতিরক্ষা অবকাঠামো ধ্বংস করার দিকে মনোনিবেশ করেছিল। এর মধ্যে রাডার সিস্টেম, গবেষণা সুবিধা এবং অস্ত্রের ডিপোকে টার্গেট করা অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণস্বরূপ ২০২৪ সালের নভেম্বরে ইসরাইল আলেপ্পো গ্রামাঞ্চলে আল-সুফিরার কাছে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্র এবং প্রতিরক্ষা গবেষণাগারে হামলা চালিয়েছিল। এসব কেন্দ্র অস্ত্র উৎপাদন এবং প্রতিরোধের অক্ষের প্রতি সিরিয়ার কৌশলগত ভূমিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার

ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোকে তেল আবিব সরকারের ব্যর্থ পদক্ষেপ হিসাবে দেখা যেতে পারে যা লেবাননের পরাজয়ের স্বীকৃতি দেখায়। তবে সিরিয়ার সেনাবাহিনী জনগণ ও প্রতিরোধের অক্ষকে রক্ষা করে চলেছে। ইতিহাস দেখিয়েছে যে এই ধরনের প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত শত্রুদের আবার পরাজয়ের দিকে নিয়ে যাবে। তার প্রতিরোধ ও কৌশলগত জোটের মাধ্যমে,সিরিয়া এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার জন্য ইহুদিবাদী শাসনের প্রচেষ্টাকে নিষ্ক্রিয় করছে এবং ফিলিস্তিনকে দখলদার মুক্ত করার দিকে পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে।#