২৫ এপ্রিল ২০২৫ - ২৩:১০
Source: Parstoday
লোহিত সাগরে ইয়েমেনের কিস্তিমাত: ইয়েমেন কি ওয়াশিংটনের সামরিক অক্ষমতাকে প্রমাণ করছে?

লোহিত সাগরে ইয়েমেনি সেনাবাহিনীর অভিযান কেবল পশ্চিমা বিশ্ব বাণিজ্যের জন্যই নয় বরং বিভিন্ন অঞ্চলে দ্রুত সামরিক বাহিনী মোতায়েনের আমেরিকার সক্ষমতার জন্যও মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে। এমন একটি সমস্যা যা ওয়াশিংটনকে এর মোকাবেলায় সামরিক, কূটনৈতিক এবং লজিস্টিক সমাধান খুঁজতে বাধ্য করেছে।

ইহুদিবাদী ইসরাইলি সরকারের সমর্থনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন ২০২৫ সালের ২৫ মার্চ থেকে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করে যার লক্ষ্য ছিল দেশটির আবাসিক এলাকা এবং বেসামরিক বিভিন্ন অবকাঠামো। এসব হামলা সত্ত্বেও ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী গাজা উপত্যকায় প্রতিরোধ এবং ফিলিস্তিনি জনগণকে সমর্থন করে চলেছে এবং দখলকৃত অঞ্চলের কেন্দ্রস্থলে অভিযান চালাচ্ছে। ইহুদিবাদী ইসরাইলি সরকারের সঙ্গে যুক্ত জাহাজ এমনকি লোহিত সাগর ও ভারত মহাসাগরে মার্কিন জাহাজগুলোকে লক্ষ্য করে এবং বেশ কয়েকটি উন্নত আমেরিকান ড্রোন ভূপাতিত করেছে।

ইরানের বার্তা সংস্থা ইরনার বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে,  ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, লোহিত সাগরে ইয়েমেনি সেনাবাহিনীর অভিযানের ধারাবাহিকতার কথা উল্লেখ করে জানিয়েছে যে আনসারুল্লাহ বাহিনী পশ্চিম এশীয় অঞ্চলে মার্কিন সেনাবাহিনীকে তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে "বিভ্রান্ত এবং হতবাক" করেছে।

আমেরিকান থিঙ্ক ট্যাঙ্কটি লিখেছে যে ইয়েমেনি সেনাবাহিনী লোহিত সাগরে পশ্চিমা জাহাজ চলাচলের পথ অবরুদ্ধ করে রেখেছে যা পশ্চিম এশিয়া এবং তার বাইরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্রুত বাহিনী মোতায়েন এবং সজ্জিত করার ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, এই হুমকি মোকাবেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লজিস্টিক সমাধান, সামরিক পদক্ষেপ এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সমন্বয় গ্রহণ করছে বলে মনে হচ্ছে।

১৫ মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইয়েমেনে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য লোহিত সাগরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কোনও গোপন বিষয় নয়। এই পথ দিয়ে বছরে এক ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য যাতায়াত হয় এবং বিশ্বের ৩০ শতাংশ কন্টেইনার পরিবহন এই পথ দিয়ে যায়।

সমুদ্রের উপর আমেরিকার নির্ভরতা

লোহিত সাগরে ইয়েমেনি সেনাবাহিনীর উপস্থিতির মুখোমুখি হয়ে সামরিক জাহাজগুলো বাব আল-মান্দাব প্রণালী দিয়ে যাতায়াত অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু অনেক বাণিজ্যিক জাহাজ কোম্পানিকে কেপ অফ গুড হোপের চারপাশে দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল পথ বেছে নিতে বাধ্য করা হয়েছে। এই হুমকি সামরিক সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ গতিকে ব্যাহত করে এই প্রশ্ন উত্থাপন করে,  "ইয়েমেনিরা কি লোহিত সাগরে ওয়াশিংটন এবং তার মিত্রদের ছাড়িয়ে যেতে সফল হয়েছে?" যুদ্ধের সময় যুদ্ধ পরিচালনায় সহায়তা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ৮০ শতাংশ পর্যন্ত সরঞ্জাম বাণিজ্যিক জাহাজের মাধ্যমে পরিবহন করে। সামরিক নৌবহরের সক্ষমতা ছাড়াও, মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ সংকটের সময়ে ব্যক্তিগত জাহাজও ব্যবহার করতে পারে, যার ফলে আরও নমনীয়তা, খরচ হ্রাস এবং যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত সরঞ্জাম সরবরাহ করা সম্ভব হয়। কিন্তু বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের উপর এই অত্যধিক নির্ভরতার জন্য নিরাপদ এবং নিরবচ্ছিন্ন রুট প্রয়োজন। মার্কিন নৌবাহিনীর সীমিত সম্পদ এবং বিশ্বব্যাপী এর বিস্তৃত প্রতিশ্রুতির কারণে সমস্ত বাণিজ্যিক জাহাজকে এসকর্ট করা সম্ভব নয়; তবে, এমনকি কিছু জাহাজ যাদের এসকর্ট ছিল, তাদের উপরও আক্রমণ করা হয়েছে।

কেপ হোপে যাওয়ার বিকল্প স্থলপথ

দ্রুত সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েনের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের জন্য কেপ অফ গুড হোপের বিকল্প পথটি ব্যবহারযোগ্য নয়। বৃহৎ শক্তির প্রতিযোগিতার জন্য মার্কিন সামরিক বাহিনীকে দ্রুত তার সামরিক সরঞ্জাম ইউরোপ,মধ্য এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে পরিবহন করতে সক্ষম হতে হবে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে বাব আল-মান্দেব অতিক্রম করা অপরিহার্য হবে।

সামরিক সরবরাহের জন্য সমুদ্র পরিবহন এখনও সবচেয়ে সস্তা বিকল্প। বিমান পরিবহন বেশি ব্যয়বহুল এবং জরুরি মিশনগুলোকে এই পথে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়। তৃতীয় বিকল্পটি বিবেচনা করা হচ্ছে স্থল পরিবহন। ইয়েমেনি সেনাবাহিনীর অভিযান থেকে নিরাপদ থাকার জন্য আমেরিকান কৌশলগুলোর মধ্যে একটি হল লোহিত সাগরের বন্দরগুলোর কাছাকাছি না থাকা। উদাহরণস্বরূপ, ওয়াশিংটন জেদ্দায় তার জাহাজ পাঠাতে পারে এবং সেখান থেকে স্থলপথে সরঞ্জাম পরিবহন করতে পারে।

বন্দরে পণ্য খালাসের সময় জাহাজগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়; কিন্তু যখন পণ্যবাহী মালামাল ট্রাক, বিমান বা অন্যান্য যানবাহনে স্থানান্তরিত করা হয় তখন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতের সম্ভাবনা কমে যায়।

এখন, এই আমেরিকান থিঙ্ক ট্যাঙ্কের প্রতিবেদন অনুসারে, আমেরিকানরা ইয়েমেনের বিষয়ে কোনও যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে কিনা, নাকি তারা ইয়েমেনের নগর এলাকা এবং জলসম্পদ আক্রমণ করে তাদের সামরিক অক্ষমতা ঢাকতে থাকবে তা দেখার বিষয়।#

342/

Your Comment

You are replying to: .
captcha