২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ১৮:১২
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিল যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা

যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাএক যৌথ ঘোষণায় দেশগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই ঘোষণা আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এক বিবৃতিতে বলেন, এই সিদ্ধান্ত হামাসের প্রতি কোনো পুরস্কার নয়, বরং দীর্ঘদিনের সংঘাত নিরসনের জন্য একটি বাস্তবসম্মত রাজনৈতিক অঙ্গীকার।



তিনি বলেন, “আজ আমরা সেই দেড় শতাধিক দেশের সঙ্গে যোগ দিলাম, যারা ইতিমধ্যেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই পদক্ষেপ শুধু প্রতীকী নয়; এটি ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি উভয় জনগণের জন্য উন্নত ভবিষ্যতের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি।”

তিনি আরও যোগ করেন, এই সংঘাত ইতোমধ্যেই গভীর বিভাজন সৃষ্টি করেছে এবং অনেকেই এটিকে ঘৃণা ও ভয় জাগানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। শুধু ঘৃণাকে প্রত্যাখ্যান করলেই চলবে না, বরং সব ধরনের ঘৃণা ও বিভাজনের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী অবস্থান নিতে হবে।

একই দিনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এক কঠোর ভাষার বিবৃতিতে জানান, বর্তমানে ইসরায়েল সরকার পদ্ধতিগতভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে রোধ করছে।

তিনি বলেন, “গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় হাজার হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, আরও কয়েক লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সেখানে এক ভয়াবহ মানবিক সংকট ও দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়েছে। ইসরায়েল সরকারের প্রকাশ্য নীতি হলো—কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র থাকবে না। এই বাস্তবতার প্রেক্ষাপটেই আমরা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি।”

কার্নি জোর দিয়ে বলেন, কানাডা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে, যাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা সফল হয়।

অস্ট্রেলিয়ার সরকারও তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার স্পষ্ট বক্তব্য, ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনের রাজনীতিতে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকা উচিত নয়। দেশটির মতে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া মানে সন্ত্রাসী সংগঠনকে সমর্থন করা নয়, বরং জনগণের ন্যায্য অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া।

তিন দেশের এই সিদ্ধান্তে ইসরায়েল সরকার প্রবল প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আগেই সতর্ক করে বলেছিলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া মানে ‘সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করা’। ঘোষণার পর ইসরায়েলের বিভিন্ন মহল, বিশেষ করে জিম্মিদের পরিবার ও কিছু রক্ষণশীল রাজনৈতিক গোষ্ঠী, তীব্র সমালোচনা করেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতেও এ সিদ্ধান্ত বড় প্রভাব ফেলেছে। দেশটির অন্তত ২৫ জন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

তাদের মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, নিউইয়র্কের এলিস স্টেফ্যানিক এবং টেক্সাসের প্রভাবশালী সিনেটর টেড ক্রুজ রয়েছেন।

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বের নীতি ও অবস্থানে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটল। এর আগে ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বহু দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলেও যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা অপেক্ষাকৃত নীরব ভূমিকা পালন করে আসছিল।

অবশেষে তারা দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিল—দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই হলো দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাত নিরসনের একমাত্র কার্যকর পথ।

এই পদক্ষেপ শুধু ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সম্পর্কেই নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যের সামগ্রিক ভূ-রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে—ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বাস্তব কাঠামো কেমন হবে, গাজা ও পশ্চিম তীরের শাসনব্যবস্থা কীভাবে সাজানো হবে, এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা-আশঙ্কা কতটা দূর হবে।

যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার এই ঘোষণা নিঃসন্দেহে ফিলিস্তিনিদের জন্য কূটনৈতিক বিজয়। তবে এটি একইসঙ্গে নতুন রাজনৈতিক টানাপোড়েনও তৈরি করেছে। ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়া এবং মার্কিন রিপাবলিকানদের হুমকি এই সংকেতই দিচ্ছে যে, শান্তির পথে যাত্রা এখনো সহজ হবে না।

তবুও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নতুন এই অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শান্তি প্রতিষ্ঠার লড়াইকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিল।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha