‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ابنا
শনিবার

১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

৭:০৭:৫৮ PM
1347226

সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ:

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পের ঘটনায় পশ্চিমা ও যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ ছিল বৈষম্যপূর্ণ।

যারা ইরানের পতনের স্বপ্নে বিভোর তাদের উদ্দেশ্যে লেবাননের হিজবুল্লাহ’র মহাসচিব বলেছেন: আপনাদের সকল হিসাব-নিকাশ হল মিথ্যা কল্পনা। আর এ হিসাব-নিকাশের পরিণতি হল পরাজয়। ইরানের জনগণ ইসলামি বিপ্লব বিজয় বার্ষিকীর বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে এ বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা তাদের পথ অব্যাহত রাখবে। ইসলামি বিপ্লবের সমর্থনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ, যারা ইরানের পতনের বিষয়ে কথা বলেছে তাদের জন্য এক দাঁতভাঙ্গা জবাব।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): লেবাননের হিজবুল্লাহ প্রধান সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ শহীদ কমান্ডারদের স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণে শহীদ আব্বাস মুসাভি, শহীদ ইমাদ মুগনিয়াহসহ হিজবুল্লাহর বেশ কয়েকজন শহীদের শাহাদাতে শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

ভাষণের শুরুতে তিনি ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ৪৪তম বিজয় বার্ষিকী উপলক্ষে ইরানি জাতি এবং ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতাকে অভিনন্দন জানান।

সাইয়্যেদ হাসান নাসরাল্লাহ বলেন, বেশীরভাগ পশ্চিমা ও আরব গণমাধ্যম ইরানে ইসলামি বিপ্লবের বিজয় বার্ষিকীতে দেশটির লাখো জনগণের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত বিজয় মিছিলের সংবাদ প্রচার করেনি। অথচ হাতে গোনা কিছু দাঙ্গা সৃষ্টিকারীদের প্রতি তাদের মনোনিবেশ ছিল সূক্ষ্ম, দাঙ্গা সৃষ্টিকারীদেরকে উস্কে দিতে তারা এ কাজ করেছে।

যারা ইরানের পতন ধরে নিয়ে অংক কষেছে তাদের উদ্দেশ্যে নাসরুল্লাহ বলেন: আপনাদের সকল হিসাব-নিকাশ হল মিথ্যা কল্পনা। আর এ হিসাব-নিকাশের পরিণতি হল পরাজয়। ইরানের জনগণ ইসলামি বিপ্লব বিজয় বার্ষিকীর বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে এ বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা তাদের পথ অব্যাহত রাখবে। ইসলামি বিপ্লবের সমর্থনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ, যারা ইরানের পতনের বিষয়ে কথা বলেছে তাদের জন্য এক দাঁতভাঙ্গা জবাব।

হিজবুল্লাহর মহাসচিব লেবাননের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরির হত্যা দিবসে তার পরিবার এবং তার সমর্থকদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে লেবাননের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের সাথে স্বাক্ষরিত "মার মিখাইল" চুক্তি সম্পর্কে বলেন: এই চুক্তি বর্তমানে উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে পড়েছে, জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে আমরা চুক্তি রক্ষা করতে সক্ষম হব বলে আশাবাদি।

সাইয়্যেদ হাসান নাসরাল্লাহ বাহরাইনের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিপ্লব বার্ষিকীর কথা উল্লেখ করে বলেন: বাহরাইনের জনগণ তাদের জাতীয় লক্ষ্য এবং ফিলিস্তিন ইস্যুকে কখনই ত্যাগ করেনি এবং আমি বাহরাইনের নিপীড়িত জাতিকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।

হিজবুল্লাহ প্রধান বলেন: আমাদের শহীদ কমান্ডাররা বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিকূলতার মাঝেও প্রতিরোধের উপর অনড় থেকেছেন। শহীদ কমান্ডার এবং প্রতিরোধ আন্দোলন, সেনাবাহিনীসহ ফিলিস্তিনী ও সিরিয় বিভিন্ন গ্রুপের সকল শহীদদের রক্তের বিনিময়ে সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

বর্তমানে চলমান যুদ্ধের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি এ সকল আত্মত্যাগের অর্জনগুলোকে রক্ষায় সকল পক্ষেরই দায়িত্ববান হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। 

আমেরিকার স্বীকারোক্তি: জনমতকে প্রভাবিত করে বিভিন্ন দেশের উপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করি আমরা

হিজবুল্লাহ প্রধান বলেন: লেবাননকে নিজের আধিপত্যে আনতে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র পূনরায় লেবাননের বিরুদ্ধে হামলা শুরু হয়।

সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ বলেন: যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নিজেই স্বীকার করেছেন যে, উদ্ভট ও মিথ্যা তথ্য প্রচার পূর্বক জনমতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমেই সরকারের পতন সম্ভব।

তিনি বলেন, ওবামা নিজেই স্বীকার করেছেন যে, জনগণকে তাদের দেশের বিষয়ে আস্থাহীন করে তোলার চেষ্টা চালায় যুক্তরাষ্ট্র, আর এর মাধ্যমে তারা সরকার পতনের পদক্ষেপ নেয়।  আর বাইডেন সরকারের চিন্তা-চেতনাও একই ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।

লেবাননে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট প্রসঙ্গে সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ বলেন: বর্তমানে লেবানন যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক টার্গেটে পরিণত হয়েছে, আর স্বয়ং এটাই একটা চ্যালেঞ্জ। লেবাননের বিরুদ্ধে আমেরিকা অস্ত্র হিসেবে যা কিছু ব্যবহার করছে তার শীর্ষে রয়েছে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি।

হিজবুল্লাহ প্রধানের সংযোজন: যুক্তরাষ্ট্রের লেবানন বিরোধী প্রকল্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে এবং তাদের মোকাবিলা করতে হবে। লক্ষ্যে পৌঁছুতে যে সকল বিষয় যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করছে সেগুলোর মধ্যে যে সকল কেন্দ্র ও অধিদপ্তরকে তারা টার্গেট করেছে সেগুলোতে বিদ্যমান দূর্নীতি ও ভুলের উপস্থিতি অন্যতম।

 

সিরিয়ার ভূমিকম্পের ঘটনায় মানবিক ইস্যুতে আমেরিকার ভণ্ডামী প্রকাশ পেয়েছে

গত সপ্তাহে তুরস্ক ও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে দু’দেশের জনগণ ও সরকারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে তিনি বলেন: ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করাকে আমরা বর্তমানে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এখানে মানবিক বিষয়াদিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভণ্ডামী প্রকাশ পেয়েছে। ভূমিকম্পের ৯ দিন পার হয়ে গেলেও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোন তৎপরতা দেখা যায় নি। একইভাবে আন্তর্জাতিক ও পশ্চিমা সমাজ বিভিন্ন স্তরে তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্প ইস্যুতে বৈষম্য নীতি অবলম্বন করেছে।

তিনি বলেন: ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থরা সকলেই মানুষ। কিন্তু আমরা স্পষ্টভাবে প্রত্যক্ষ করেছি যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিশ্বের অনেক দেশ কিভাবে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে। এ আচরণ মানবিক অবক্ষয়ের নতুন এক অধ্যায়; সকলের প্রতি আমাদের আবেদন হল, সিরিয়া ও তুরস্কের ক্ষতিগ্রস্থ জনগণকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সাহায্য করতে হবে, এ ভূমিকম্প অত্যন্ত কঠিন এক চ্যালেঞ্জ।

নাসরুল্লাহ বলেন: বর্তমানে লেবানন নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যানুযায়ী লেবাননেও ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ভূমিকম্প মোকাবেলায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। সামান্য যে সকল সুযোগ-সুবিধা সরকারের হাতে রয়েছে সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে যদি ভূমিকম্প মোকাবেলায় পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করা হয় তাহলে মোটামুটি ভাল প্রস্তুতি গ্রহণ করা সম্ভব।

ভাষণে নাসরুল্লাহ জায়নবাদী ইসরাইলের অভ্যন্তরীন অবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন: জায়নবাদী ইসরাইলের অভ্যন্তরীন অবস্থা নজিরবিহীনভাবে বিশৃঙ্খল। ইসরাইলের নির্বোধ মন্ত্রিসভা জায়নবাদীদেরকে দু’টি বড় সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যাচ্ছে; একটি ফিলিস্তিনের ভেতরে অপরটি ফিলিস্তিনের বাইরে। এই সংঘর্ষ অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জায়নবাদী ইসরাইলের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গড়িয়েছে যে, স্বয়ং জায়নবাদীরাই প্রথমবারের মত গৃহ যুদ্ধের শংকা প্রকাশ করেছে।

তিনি বলেন: জায়নবাদী নেতাদের উদ্বেগের বিষয়টিও স্পষ্ট। ইহুদি বসতির ইহুদিরা জায়নবাদী নেতাদের উপর আস্থা রাখতে পারছে না। বিষয়টি এখন পরিস্কার হয়ে গেছে।

আমরা সম্মানের সাথে ফিলিস্তিনি জাতির পাশে রয়েছি, বিশেষতঃ অধিকৃত জেরুজালেম, পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকার তরুণ প্রজন্মের পাশে। ফিলিস্তিনি জাতি বর্তমানের তরুণ প্রজন্মকে সাথে নিয়ে এ বিষয়টি প্রমাণ করছে যে, আগের যেকোন সময়ের চেয়ে তারা এখন প্রকৃত ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদায় অবস্থান করছে। 

‘অভ্যন্তরীন সমঝোতা’ লেবানন সংকট নিরসনের একমাত্র উপায়

হিজবুল্লাহর মহাসচিব বলেন: প্রেসিডেন্ট ইস্যুতে সৃষ্ট সমস্যার একমাত্র উপায় হল অভ্যন্তরীন সমঝোতা এবং যতদ্রুত সম্ভব প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।

লেবাননের মূল উদ্বেগের বিষয়টি হল অর্থনৈতিক এবং জনগণের দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থা। ডলারের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির ফলে দ্রব্যমূল্য ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পরিস্থিতিকে আরো শোচনীয় করে তুলেছে। বর্তমানে  আমেরিকার প্রচন্ড চাপের মুখে রয়েছে লেবানন।

তিনি বলেন: সরাসরি আলোচনায় বসার জন্য মার্কিনীরা ইরানকে বহুবার বার্তা পাঠালেও তেহরান তাতে সম্মত হয় নি। সরাসরি আলোচনায় মার্কিনীদের দাবি-দাবার কোনো সীমা নেই, তাই আমাদের সংকট সমাধানে তাদের সন্তুষ্টির অপেক্ষায় থাকা উচিত হবে না।

লেবাননের হিজবুল্লাহর মহাসচিব মার্কিনীদের উদ্দেশ্যে বলেন: যে কেউ লেবাননকে বিশৃঙ্খলা ও পতনের দিকে নিয়ে যেতে চায় তাকে অবশ্যই এমন কিছুর জন্য অপেক্ষা করা উচিত যা সে কখনও কল্পনা করেনি। আপনি যদি লেবাননকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দেন, তাহলে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে আপনাদের পোষ্য ইসরাইলে বিশৃঙ্খলার অপেক্ষায় থাকুন।

যেভাবে আমরা আমাদের তেল সম্পদ রক্ষায় প্রস্তুত সেভাবেই আপনাদের পোষ্য ইসরাইলের দিকে হাত বাড়াতেও আমরা প্রস্তুত।#176