‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
মঙ্গলবার

১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

১:০৯:৪০ AM
1437243

২৮শে রজব; ইমাম হুসাইনের (আ.) মদিনা ছেড়ে মক্কা অভিমুখে যাত্রা শুরুর দিন

ইমাম হুসাইন (আ.) ৬০ হিজরির ২৮শে রজব রাতে, মতান্তরে ৩রা শাবান রাতে আহলে বাইত ও তার সাহাবীদের মধ্য থেকে ৮২জন সদস্যকে সাথে নিয়ে মদিনা ত্যাগ করেন। এই সফরে মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া ব্যতীত বেশিরভাগ নিকটাত্মীয় তাঁর সফর সঙ্গী হন। বনী হাশিম ছাড়াও ইমামের সাহাবীদের মধ্য থেকে ২১জন তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন।

 

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): ২৮শে রজব; ইমাম হুসাইনের (আ.) মদিনা ছেড়ে মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরুর দিন। ইমাম হুসাইন (আ.) মদিনার পরিস্থিতি বিবেচনায়, তাঁর জীবন ঝুঁকি সম্মুখীন হওয়ায় এবং প্রকাশ্য বিরোধিতা প্রদর্শনের জন্য কোন প্রকার কার্যকর আন্দোলনের সম্ভাবনা ছাড়াই শহর ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।

মদিনা ত্যাগের সময় ইমাম যে আয়াতটি পাঠ করেন, সেখানে এই শহরে তার অনিরাপত্তার বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। ইমাম হুসাইনের (আ.) আন্দোলনের দর্শন মদিনা থেকে যাত্রার শুরুতে এবং পথিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া ঘটনায় প্রদত্ত তাঁর খোতবাতে (বক্তব্যে) দেখতে পাওয়া যায়।

মদিনা ত্যাগ

ইমাম হুসাইন (আ.) মদিনা ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে, রাতে তাঁর মাতা হজরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) ও ভাই ইমাম হাসানের (আ.) কবর জিয়ারত করেন, নামাজ আদায় করেন এবং তাদের নিকট থেকে বিদায় নিয়ে সকালে বাড়িতে ফিরে আসেন। বেশকিছু সূত্রে বলা হয়েছে, ইমাম হুসাইন (আ.) পরপর দুই রাত রসুলুল্লাহর (সা.) কবরের পাশে অতিবাহিত করেন।

মক্কা অভিমুখে যাত্রা

ইমাম হুসাইন (আ.) ৬০ হিজরির ২৮শে রজব রাতে, মতান্তরে ৩রা শাবান রাতে আহলে বাইত ও তার সাহাবীদের মধ্য থেকে ৮২জন সদস্যকে নিয়ে মদিনা ত্যাগ করেন। এই সফরে মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া ব্যতীত বেশিরভাগ নিকটাত্মীয় তাঁর সফর সঙ্গী হন। বনী হাশিম ছাড়াও ইমামের সাহাবীদের মধ্য থেকে ২১জন এই সফরে তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন।

ইমাম তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে মদিনা থেকে বের হন এবং নিকটাত্মীয়দের মতের বিপরীতে মক্কার প্রধান সড়কে যাত্রা শুরু করেন। যাত্রাপথে ইমাম ও তাঁর সঙ্গীরা আব্দুল্লাহ ইবনে মুতিয়ের সাথে সাক্ষাৎ করেন। পাঁচ দিন পর ৩রা শাবান তিনি মক্কায় পৌঁছান এবং মক্কার জনগণ ও আল্লাহর ঘরের মেহমানদের অভ্যর্থনা গ্রহণ করেন।

ইমামের মদিনা হতে মক্কায় গমনের পথ

মদিনা (১৫ই রজব ৬০ হিজরি মুয়াবিয়ার মৃত্যু এবং ২৮শে রজব ৬০ হিজরি ইমামের মদিনা ত্যাগ), জুল-হুলাইফা মিলাল, সিয়ালাহ, উরকু যানিয়াহ, জোহা, এনায়াহ, উরাজ, লাহরু জামাল, সাকিয়া, আবওয়া, গার্দানা হারশা, রাবেগ, জোহফা, কাদিদ, খালিস, এসফান, মারজাহরান, এবং মক্কা (৩শাবান ৬০ হিজরি ইমাম মক্কা পৌঁছান) ছিল ইমাম হুসাইনের (আ.) মদিনা থেকে মক্কা গমনের পথ।

ইমাম হুসাইনের (আ.) মক্কায় প্রবেশ

ইমাম হুসাইনের (আ.) কাফেলা মদিনা চেড়ে আসার পাঁচ দিন পর মক্কায় পৌঁছায়। মক্কা অধিবাসী এবং আল্লাহর ঘরের জিয়ারতকারীরা এই সংবাদ পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হন। জনগণ সকাল-সন্ধ্যা ইমামের সাক্ষাতে আসতে শুরু করে। যা মেনে নেয়া আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়েরের জন্য কষ্টকর ছিল; কেননা সে মনে মনে চেয়েছিল মক্কার জনগণ তার হাতে বাইয়াত করুক, কিন্তু সে জানতো ইমাম হুসাইন যতক্ষণ মক্কায় থাকবে কেউ তার সাথে বাইয়াত করবে না। কারণ মক্কার জনগণের নিকট ইমাম হুসাইনের (আ.) মর্যাদা যুবাইরের পুত্রের চাইতে বেশি ছিল।

কিন্তু কেন ইমাম হুসাইন তার যাত্রার শুরুতে মক্কায় যান, এর কারণ হচ্ছে প্রথম উমাইয়্যা খলিফা মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান ৬০ হিজরির রজব মাসের মাঝামাঝি সময়ে মারা যায় এবং তার সন্তান ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া, মুসলমানদের খেলাফতের দায়িত্ব হাতে নিয়ে সে উমাইয়্যা দরবারী শাসকদের সাহায্য নিয়ে সকল জনগণের বাইয়াত গ্রহণের চেষ্টা চালায়।

তাদের শাম, মিশর, ইরাক ও ইয়েমেনের অধিবাসীদের বাইয়াত গ্রহণে তেমন কোন সমস্যা ছিলনা। শুধুমাত্র তাদের ভয়ের জায়গা ছিল হেজাজ, বিশেষ করে মদিনা। কেননা সেখানে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর, মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর এবং আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়েরের মত ব্যক্তিরা বসবাস করতো, যারা বিভিন্ন দিক দিয়ে ইয়াজিদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব রাখতো এবং খলিফা হবার বিষয়ে ইয়াজিদের চেয়ে এগিয়ে ছিল।

কিন্তু সকলের দৃষ্টিতে মদিনায় ইয়াজিদের বিরোধীদের মধ্যে খেলাফত ও মুসলমানদের নেতৃত্বের উপযুক্ত হিসেবে ছিলেন রসুলুল্লাহর (সা.) একমাত্র স্মৃতি, মজলুম পিতা আলী (আ.) ও ভাই ইমাম হাসান মুজতাবার (আ.) একমাত্র উত্তরাধিকারী ইমাম হুসাইনের (আ.) মত ব্যক্তি। যার উদাহরণ হল আলো ছড়ানো সূর্যের ন্যায়, যার আলোয় বাকি গ্রহ নক্ষত্রের আলো ছায়ায় পরিণত হয়। আর তাই তার থেকে ইয়াজিদের সবচেয়ে বেশি তাকে ভয় ছিল এবং তাকে আত্মসমর্পণ করানোর চেষ্টা করেছিল। যে কারণে ইমাম হুসাইন (আ.) মদিনা ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন তা হল, জনগণ প্রকাশ্যে আন্দোলন ও ইয়াযিদের বিরোধিতা করবে এই পরিস্থিতি মদিনায় ছিল না এবং এই শহরে অবস্থান ইমামের নিরাপত্তাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছিল। আর তাই ইমাম কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ না করেই ইমাম হুসাইন (আ.) মদিনা ত্যাগ করেন।#176A