পরবর্তী উসমানি শাসকরাও তা মেনে চলেছেন। তিনি তাঁর অসিয়তে বলেছিলেন—
প্রিয় সন্তান আমার, আল্লাহ তোমাকে যে কাজের আদেশ করেননি তা করা থেকে তুমি বিরত থাকবে। শাসনকার্যের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে উলামায়ে কিরামের পরামর্শকে আশ্রয়স্থল হিসেবে গ্রহণ করবে।
প্রিয় সন্তান, তোমার অধীনদের যথাবিহিত সম্মান করবে।
সৈন্যদলের প্রতি অনুগ্রহ করবে। তোমার সৈন্য ও সমপদের মাধ্যমে যেন শয়তান তোমাকে ধোঁকা দিতে না পারে। শরিয়তের ধারক-বাহকদের থেকে দূরে থাকা থেকে বেঁচে থাকবে (তাদের নৈকট্য লাভ করবে)।
হে পুত্র, নিশ্চয়ই তুমি জানো, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে খুশি করা।
তাই যা বলবে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে বলবে।
প্রিয় পুত্র, যারা শাসনের লোভে এবং একক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে যুদ্ধ করে আমরা তাদের দলভুক্ত নই। আমরা ইসলামের জন্যই বাঁচব, ইসলামের জন্যই মরব।
হে সন্তান, এটার জন্যই তুমি যোগ্য।
(আল-উসমানিয়ানা ফিততারিখি ওয়াল হাজারাহ, ড. মুহাম্মদ হারব, পৃষ্ঠা-১৬) ‘আত-তারিখুস সিয়াসি লিদ্দাওলাতিল উলিয়াতিল উসমানিয়্যাহ’ গ্রন্থে তাঁর অসিয়তের আরেকটি বর্ণনা পাওয়া যায়।
তা হলো—হে বৎস, নিশ্চয়ই ইসলাম প্রচার করা, তার দিকে লোকদের আহবান করা এবং মুসলিমদের সম্মান ও সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করা তোমার কাঁধে আমানত। আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তোমাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন (জাওয়ানিবু মুজিয়্যাহ, পৃষ্ঠা-২১)। ‘মাআসাতে বনি উসমান’ নামক গ্রন্থে অসিয়তের আরেকটি বর্ণনা পাওয়া যায়। তা হলো—
প্রিয় পুত্র, আমি আমার প্রভুর সান্নিধ্যে চলে যাচ্ছি। আর আমি তোমাকে নিয়ে গর্ব করি। নিশ্চয়ই তুমি তোমার প্রজাদের প্রতি ন্যায়পরায়ণ হবে। ইসলাম প্রচারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
হে পুত্র, আমি তোমাকে অসিয়ত করছি, তুমি সর্বদা উলামায়ে কিরামের তত্ত্বাবধানে থাকবে। অধিক পরিমাণে তাঁদের সম্মান করবে। তাঁদের পরামর্শ গ্রহণ করবে। কেননা, তাঁরা সব সময় কল্যাণের কথাই বলেন।
হে পুত্র, আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এমন কোনো কাজ কখনো করবে না। যখন কোনো বিষয় তোমার কাছে কঠিন মনে হবে, তখন আলেমদের জিজ্ঞাসা করবে। কেননা, তাঁরা তোমাকে অবশ্যই কল্যাণের দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন। আর জেনে রাখো হে পুত্র, এই দুনিয়ায় আমাদের সবার পথই এক। আর সেটি হলো আল্লাহ তাআলার পথ। আর আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহ তাআলার দ্বিনকে ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কোনো সুখ্যাতি অর্জন বা দুনিয়া অন্বেষণকারী নই। (জাওয়ানিবু মুজিয্যাহ, পৃষ্ঠা-৩)
‘তারিখে উসমানি’তে উসমানের অসিয়তের আরেকটি বিবরণ পাওয়া যায়—
আমার পুত্র ও বন্ধুদের প্রতি আমার অসিয়ত হচ্ছে, তোমরা সর্বদা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর মাধ্যমে ইসলামকে উন্নীত রাখবে। সবচেয়ে পরিপূর্ণ জিহাদের মাধ্যমে তোমরা সম্মানিত ইসলাম ধর্মের পতাকাকে উড্ডীন করে রাখবে। সর্বদা ইসলামের খিদমত করবে। কেননা, আল্লাহ তাআলা আমার মতো দুর্বল বান্দাকে দেশ বিজয়ের জন্য নিয়োজিত করেছেন। তাই তোমরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের মাধ্যমে ইসলামকে দূর-দূরান্তের দেশে নিয়ে যাবে। আর আমার বংশধরদের থেকে যারা সত্য ও ন্যায়ের পথ থেকে বিচ্যুত হবে, তারা হাশরের দিনে রাসুল (সা.)-এর শাফাআত থেকে বঞ্চিত হবে।
হে আমার পুত্র, দুনিয়ায় এমন কেউ নেই, যে মৃত্যুর সামনে তার গর্দান অবনত করে না। আল্লাহ তাআলার নির্দেশে আমার সময় ঘনিয়ে এসেছে। আমি তোমার হাতে এই সাম্রাজ্য তুলে দিচ্ছি আর তোমাকে আল্লাহর কাছে গচ্ছিত রাখছি। তোমার সব কাজে ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন করবে। (আসসালাতিনুল উসমানিয়্যুন, পৃষ্ঠা-৩৩)
342/
Your Comment