১৮ জুলাই ২০২৫ - ২১:০৯
ইসরায়েলের হাতে ইউরোপীয় অস্ত্র

ইসরায়েলের হাতে ইউরোপীয় অস্ত্র, গাজায় শিশু হত্যায় ব্যবহৃত হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): দ্য গার্ডিয়ান নিউজের রিপোর্ট অনুযায়ী:ইসরায়েলের কাছে ইউরোপের বৃহত্তম বহুজাতিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুতকারক কোম্পানি এমবিডিএ যে হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্রের উপাদান সরবরাহ করছে, তা গাজায় বিমান হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) প্রকাশিত এক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।


প্রতিবেদন অনুসারে, জিবিইউ-৩৯ নামক মার্কিন বোমা, যা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম, তা গাজায় বেসামরিক মানুষ হত্যায় ব্যবহৃত হয়েছে। এসব বোমার ডানা তৈরি হয় এমবিডিএ’র যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা কারখানায়। ইউরোপীয় কোম্পানি হলেও এমবিডিএ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে সক্রিয়, এবং বোয়িংয়ের মতো অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের চুক্তি রয়েছে।

দ্য গার্ডিয়ান জানায়, গাজায় চালানো একাধিক হামলায় এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়, যেখানে নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। অনেক হামলা হয়েছে গভীর রাতে, কোনো সতর্কতা ছাড়াই।

প্রতিষ্ঠানটির তিন প্রধান শেয়ারহোল্ডার হলো— ব্রিটেনের বিএই সিস্টেমস, ফ্রান্সের এয়ারবাস, এবং ইতালির লিওনার্দো। প্রতিষ্ঠানটি যে আয় যুক্তরাষ্ট্রে করে, তা প্রথমে ইংল্যান্ডের হার্টফোর্ডশায়ার শাখায় জমা হয়, সেখান থেকে তা পৌঁছায় ফ্রান্সের মূল প্রতিষ্ঠানে। গত বছর এই তিন শেয়ারহোল্ডার মিলে ৪৬ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার লভ্যাংশ নিয়েছে এমবিডিএ থেকে।

দ্য গার্ডিয়ান অন্তত ২৪টি হামলার ঘটনা বিশ্লেষণ করে জানায়, এই বোমাগুলো দিয়ে ফিলিস্তিনে বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। এসব স্থাপনার মধ্যে রয়েছে স্কুল, আশ্রয়কেন্দ্র, তাঁবু—যেখানে বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। জাতিসংঘ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এসব হামলাকে ‘সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র রপ্তানি নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকায় গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ইসরায়েলে কিছু অস্ত্র রপ্তানির অনুমোদন স্থগিত করেন। তিনি জানান, “গাজায় এসব অস্ত্র ব্যবহৃত হতে পারে— এমন ঝুঁকি বিবেচনায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”

গত ২৬ মে রাত ২টার দিকে, গাজার ঐতিহাসিক কোয়ার্টার ফাহমি আল-জারজাওয়ি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া কয়েক ডজন পরিবারের ওপর একটি বোমা হামলা চালানো হয়। বিস্ফোরণে অন্তত ৩৬ জন নিহত হন, যার অর্ধেকই শিশু। হামলায় ব্যবহৃত হয়েছিল জিবিইউ-৩৯ বোমা।

এক প্রত্যক্ষদর্শীর ভিডিওতে দেখা যায়, আগুনের ভেতর দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করছে একটি ছোট্ট মেয়ে—হানিন আল-ওয়াদি, বয়স মাত্র ৫ বছর। পরিবারের সবাই— বাবা, মা, ভাইবোন মারা গেছে। তার চাচা আহমেদ আল-ওয়াদি বলেন, “ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শব্দ শুনে হানিন চিৎকার করে ওঠে।

চারপাশে আগুন আর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মরদেহ দেখে সে ভয় পায়। কল্পনা করুন, একটি শিশুর চোখের সামনে তার মা-বাবা আগুনে পুড়ে মারা যাচ্ছে!” হানিন কয়েক সপ্তাহ হাসপাতালে ছিল। শরীরের অংশবিশেষ পুড়ে গেছে, এবং মানসিকভাবে সে এখনো আঘাত কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

আনাদোলু বার্তা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৫৮ হাজার ৬০০ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬০৭ জন। কেবল ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ গেছে ৪৫১ জনের, যা শুরু হয়েছে ২৭ মে’র পর থেকে।

এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ সত্ত্বেও, ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর একটি অংশ গোপনে মুনাফা অর্জনে লিপ্ত—এমন আশঙ্কা এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha