আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): গাজা উপত্যকার খান ইউনিসে একটি বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে হুড়োহুড়িতে পদদলিত ও শ্বাসরোধে অন্তত ২১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হতাহতদের অধিকাংশই খাদ্যের জন্য জড়ো হওয়া অসহায় সাধারণ মানুষ। ঘটনাটি ঘটে বুধবার সকালে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-সমর্থিত বেসরকারি সংস্থা জিএইচএফ পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে।
এর আগেও গাজায় ত্রাণ বিতরণের সময় বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে। তবে এবার পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সেখানে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হলে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। নাসের হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, “ক্ষুধার্ত মানুষ ত্রাণের জন্য ছুটছিল, কিন্তু প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় চাপ বাড়ে এবং এতে অনেকে পদদলিত হন।”
জিএইচএফ-এর দাবি, এই বিশৃঙ্খলার জন্য হামাস-সংশ্লিষ্ট কিছু অস্ত্রধারী দায়ী। সংস্থাটি জানায়, তারা জনতার মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং এক মার্কিন ঠিকাদারকে বন্দুক দেখিয়ে হুমকি দেয়। জিএইচএফ-এর তথ্যমতে, ১৯ জন পদদলিত হয়ে এবং একজন ছুরিকাঘাতে নিহত হন। তবে এসব দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা উপস্থাপন করতে পারেনি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ইসরায়েলি অবরোধে বিধ্বস্ত গাজায় খাদ্য, পানি ও ওষুধের চরম সংকট চলছে। আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো বহুবার সতর্ক করে বলেছে, গাজার মানুষ অনাহারে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণ নিয়ে জটিলতা, নিরাপত্তার অভাব এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ গাজাবাসীর দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। জিএইচএফ সম্প্রতি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় গঠিত হলেও এর কর্মকাণ্ড শুরু থেকেই সমালোচনার মুখে রয়েছে। অনেকের মতে, সংস্থাটি প্রকৃত মানবিক সহায়তার বদলে ইসরায়েলের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
এদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, তা তুলে নিতে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খানকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে তিনি জানিয়েছেন। করিম খান জানান, গত মে মাসে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছিল, পরোয়ানা তুলে না নিলে তাকেও এবং আইসিসিকেও ধ্বংস করে দেওয়া হবে।
ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে মানবিক নগরে স্থানান্তর নিয়েও ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও সামরিক মহলে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্টজ এই পরিকল্পনার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে সমালোচকরা এটিকে ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্প’-এর সঙ্গে তুলনা করে খারিজ করে দিয়েছেন। তারা বলছেন, এ ধরনের পরিকল্পনা জাতিগত নিধনের সূচনা হতে পারে।
Your Comment