‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : parstoday
মঙ্গলবার

৩১ আগস্ট ২০২১

১১:৩৩:৫৯ AM
1175165

মধ্য প্রদেশে বিভিন্ন অজুহাতে মুসলিম যুবকদের মারধর, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

ভারতের বিজেপিশাসিত মধ্য প্রদেশে মুহাম্মাদ আসাদ খান নামে এক মুসলিম যুবককে প্রকাশ্য রাস্তায় ফেলে নির্মমভাবে মারধর করায় তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা) : এনডিটিভি হিন্দি ওয়েবসাইট সূত্রে প্রকাশ, আহত মুহাম্মাদ আসাদ খান  সিভিল লাইন থানা এলাকার ট্রান্সপোর্ট নগরে পেইন্টিংয়ের (চিত্রকর্ম) কাজ করেন। গত (শনিবার) ব্যাটারি চুরির সন্দেহে এই যুবককে ব্যাপকভাবে  মারধর করা হয়। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরে পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেয়। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে হত্যা প্রচেষ্টার মামলা করেছে।    

আসাদ খান বলেন, ট্রান্সপোর্ট নগরে কিছু ট্রাক-বাসের ব্যাটারি চুরি হয়েছিল। শনিবার,  ব্যাটারি চুরির সন্দেহে এই লোকেরা আমাকে মারধর করে। তিনি বলেন, তিনি চুরি করেননি কিন্তু কেউ তার কথা শোনেনি। তারা বেল্ট দিয়ে মারধর এবং লাথি মারছিল। এ সময়ে ওই যুবক দয়া ভিক্ষা করতে থাকে কিন্তু অভিযুক্তরা তাকে ব্যাপকভাবে মারধর করে।   

রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা কমলনাথ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত যে ভিডিও শেয়ার করেছেন তাতে দেখা যাচ্ছে কিছু লোক ওই যুবককে মারধর করছে। একজন তাকে বেল্ট দিয়ে মারছে, কেউ বা তার বুকের উপরে লাফিয়ে পড়ছে, কেউ লাথি মারছে। এ সময়ে মাটিতে শুয়ে পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ওই যুবক এবং তাকে রেহাই  দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছে। 

রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বার্তায় কংগ্রেস নেতা কমলনাথ বলেছেন, মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর, সাতনা, দেওয়াস, নিমচ, উজ্জয়নের পরে, এবার রীভাতে বর্বরতা ও অমানবিকতার ঘটনা ঘটেছে? চুরির সন্দেহে একজন যুবককে কতটা নির্মমভাবে মারধর করা হচ্ছে? আমাদের রাজ্য শেষপর্যন্ত কোথায় যাচ্ছে? দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’       

কংগ্রেস নেতা সুরেন্দ্র রাজপুত বলেছেন, ‘মধ্য প্রদেশের বিজেপি সরকার পুরোপুরি ‘তালিবান’ হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে! গতকালই,  নিমচে একজন  আদিবাসীকে চুরির সন্দেহে গাড়িতে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার পরে হত্যা করা হয়েছিল। এবার দেখুন রেভাতে কীভাবে মারা হচ্ছে!’   

মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেস পার্টি ওই ঘটনা সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় বলেছে, ‘মধ্যপ্রদেশের ইন্দৌর, সাতনা, দেওয়াস, নিমুচ, উজ্জয়নের পরে, এবার রেভাতে বর্বরতা ও অমানবিক ঘটনা। শিবরাজ জী (মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান) কেন মধ্য প্রদেশকে গণপিটুনি রাজ্যে পরিণত করছেন?’   

ওই ঘটনার একদিন আগে মধ্য প্রদেশের নিমচে আরও একটি ভয়াবহ ঘটনা সামনে এসেছিল। চুরির সন্দেহে এক আদিবাসী যুবককে কিছু লোক এত মারধর করে যে,  তিনি মারা যান। ওই যুবককে চোর সন্দেহে অভিযুক্তরা তাকে ধরে মারধর করাসহ একটি ট্রাকের পিছনে পা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাস্তায় টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরেও ওই যুবককে তারা পিটিয়ে আধমরা করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ক্ষতিগ্রস্ত আহত যুবককে হাসপাতালে নিয়ে যায়, সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করেছে।  

সম্প্রতি মধ্য প্রদেশের দেওয়াস জেলায় ৪৫ বছর বয়সী হকার জাহির খানকে বেধড়ক মারধর করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে টোস্ট বিস্কুট বিক্রি করার সময় আচমকা দুর্বৃত্তরা জাহির খানের ওপরে হামলা চালায়। তারা এসময়ে জাহির খানের কাছে  আধার কার্ড দেখতে চায়। কিন্তু ওই সময় আধার কার্ড না দেখাতে পারায় তাকে রাস্তায় ফেলে ব্যাপকভাবে মারধর করা হয়। এমনকি লাঠি, বেল্ট দিয়েও ব্যাপক মারে দুষ্কৃতীরা। পুলিশ সূত্রে প্রকাশ, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্প্রতি মধ্য প্রদেশের ইন্দৌরে আরও একজন মুসলিম যুবককে দুর্বৃত্তরা মারধর করে। ২৫ বছর বয়সী চুড়ি বিক্রেতা তসলিম আলীর ওপরে দুর্বৃত্তরা আক্রমণসহ তাঁর ধর্ম পরিচয় তুলে গালিও দেয়। এসময়ে তার কাছে থাকা টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তার মোবাইল ফোন, আধার কার্ড, অন্যান্য নথিপত্রও কেড়ে নেয় হামলাকারীরা। পুলিশ এ ব্যাপারে অভিযুক্ত চার দুর্বৃত্তকে গ্রেফতার করেছে।

সম্প্রতি মধ্য প্রদেশের উজ্জয়িনীর মাহিদপুরের কাছে একটি গ্রামে এক মুসলিম হকারকে জোর করে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বাধ্য করা হয়। তাদের  দাবি, গ্রামে ব্যবসা করতে হলে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে হবে। পুলিশ এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কমল ও ঈশ্বরকে গ্রেফতার করেছে।  

এসব ঘটনার পরে বিজেপিশাসতি মধ্য প্রদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিজেপি-আরএসএস-সহ হিন্দুত্ববাদী   সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে উগ্র সাম্প্রদায়িক প্রচারণা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে চরম বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টি করার ফলে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এ ধরণের হামলার ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। #

342/