গাজায় ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞ শুরুর আট মাস পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ, গাজায় সংঘাত বন্ধের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এই প্রস্তাবের পক্ষে ১৪টি ভোট পড়েছে। নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যের পদত্যাগসহ সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পাশাপাশি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এই প্রস্তাব ইসরাইলের পরাজয়কে স্বীকৃতি দেওয়ার শামিল। পার্সটুডে জানিয়েছে ইরানি বিশ্লেষক আসগার যারেয়ি মনে করেন, নেতানিয়াহু ও তার সহযোগীদের ধারণা গাজা যুদ্ধই এখন তাদের টিকে থাকার সময়টাকে লম্বা করতে পারবে।
ইহুদিবাদী ইসরাইলের মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যের পদত্যাগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসরাইলের মন্ত্রিসভার সদস্যরা হামাসের মোকাবেলায় ব্যর্থতার জন্য নেতানিয়াহুকে দায়ী বলে মনে করেন। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর প্রায় নয় মাস অতিবাহিত হলেও ইসরাইল মানুষ হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ ছাড়া আর কিছুই অর্জন করতে পারেনি। আকাশ ও স্থলপথে গাজা উপত্যকার ওপর ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রায় নয় মাসের আগ্রাসন ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে তো পরাজিত করতে পারেইনি উল্টো তেল আবিবকে অস্তিত্বের সংকটে ফেলে দিয়েছে।
গাজা যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইল এই উপত্যকার ৮০% মানুষকে বাস্তুচ্যুত, ৩৭ হাজারের বেশি মানুষকে শহীদ এবং গাজার উপর ৭০ হাজার টনের বেশি বোমা নিক্ষেপ করেছে। পার্সটুডের রিপোর্ট অনুসারে, এই আগ্রাসনে গাজার অর্ধেকের বেশি স্থাপনা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, গাজাবাসী খাদ্য, পানি ও জ্বালানীর চরম সংকটে পড়েছে এবং উপত্যকার ২৩ লাখ অধিবাসীই দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে। কিন্তু এতসব সত্ত্বেও হামাস দুর্বল হয়নি। ফরেন অ্যাফেয়ার্স ম্যাগাজিন এক প্রতিবেদনে বলেছে, গাজার ওপর ইসরাইলের নির্বিচার বোমাবর্ষণ সত্ত্বেও হামাসের শক্তি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ফরেন অ্যাফেয়ার্সের প্রতিবেদনে হামাসের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলের চলমান যুদ্ধ সম্পর্কে একটি বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বহু ফিলিস্তিনির শাহাদাত সত্ত্বেও গাজার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ওপর বিশেষ করে যেসব এলাকায় বেসামরিক নাগরিকরা আশ্রয় নিয়েছেন সেসব এলাকার ওপর হামাসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এছাড়া, এই সংগঠনের প্রতি গাজাবাসীর অভূতপূর্ব সমর্থন রয়েছে। আর এই সমর্থনের কারণে, গাজার যেকোনো অঞ্চল থেকে ইসরাইলি সেনারা চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা হামাসের নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে। খোদ ইসরাইলের সাম্প্রতিক মূল্যায়নে দেখা গেছে, উত্তর গাজায় হামাসের উপস্থিতি বেড়েছে।
সাধারণত একটি দেশের সামরিক শক্তি বলতে যা বোঝায়, হামাসের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। হামাসের কোনো রাষ্ট্রীয় কাঠামো নেই বরং এটি সম্পূর্ণ বেসরকারি একটি সংগঠন। হামাসসহ এ ধরনের অন্যান্য বেসরকারি প্রতিরোধ সংগঠনের প্রধান শক্তি হচ্ছে জনগণের মধ্যে তাদের সমর্থন ও যোদ্ধা ভর্তি করার ক্ষমতা। এ ধরনের সংগঠনের প্রধান শক্তিই হচ্ছে তাদের যোদ্ধার সংখ্যা। আর এই যোদ্ধা ভর্তি করার বিষয়টি শুধুমাত্র তাদের জনপ্রিয়তার ওপর নির্ভরশীল। গাজাবাসীর অন্তরে হামাস স্থান করে নিতে পেরেছে বলে তাদের যোদ্ধার অভাব নেই এবং এ কারণে হামাসকে পরাজিত করা সম্ভব হচ্ছে না।#